ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় হকির শিরোপা পুনরুদ্ধার সেনাবাহিনীর

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৯ মে ২০১৭

জাতীয় হকির শিরোপা পুনরুদ্ধার সেনাবাহিনীর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার। জ্যৈষ্ঠর তপ্ত দ্বি-প্রহর। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম। এটিএন বাংলা গোল্ডকাপ জাতীয় হকির ফাইনালে মুখোমুখি শিরোপা প্রত্যাশী দুই বাহিনী। গ্যালারিতে খেলা উপভোগ করতে আসা দর্শক এবং প্রেসবক্সে খেলা কভার করতে আসা ক্রীড়া সাংবাদিক কেউই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছেন না কারা হবে চ্যাম্পিয়ন? বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কি পারবে চার বছর পর আবারও শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে? নাকি চমক জাগানিয়া দল হিসেবে প্রথমবারের মতো শিরোপাটা নিজেদের করে নেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী? এর উত্তর পাওয়া যায়নি খেলার নির্ধারিত ৭০ মিনিটেও। অবশেষে পেনাল্টি শূট আউটের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ফাইনাল ম্যাচের। যাতে সেনাবাহিনীই হেসেছে বিজয়ের তৃপ্তির হাসি। শূট আউটে তারা ৫-৪ (৩-৩) গোলে হারায় নৌবাহিনীকে। একইদিন সকালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ঢাকা জেলা ৫-১ গোলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে হারায়। বিজয়ী দলের সিহাব হোসেন, রাব্বি সালেহীন রকি, ইকবাল হাসান প্রিন্স, রুবেল হোসেন এবং মাহবুব হোসেন ১টি করে গোল করেন। বিজিত দলের আবেদ উদ্দিন একমাত্র গোলটি করেন। ফাইনাল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। জয় নিশ্চিত হতেই নিজেদের সংস্থার পতাকা নিয়ে টার্ফে ছুটে এলেন সেনাবাহিনীর এক খেলোয়াড়। আরেক খেলোয়াড় মেহেদী হাসান তো আবেগের আতিশয্যে জার্সিই খুলে ছুড়ে ফেললেন। আর বাকিরা পরস্পরকে শক্ত আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলে ফেটে পড়লেন উল্লাসে। এদিকে নৌবাহিনীর খেলোয়াড়রা যেন ‘অধিক শোকে পাথর’ বনে গেছে। যে দলটিকে এই আসরের সেরা দল ভাবা হয়েছিল, যারা এক ম্যাচে ৪৩ গোল করে দেশের হকির যে কোন পর্যায়ের খেলায় এক ম্যাচে সর্বাধিক গোলের রেকর্ড গড়ে, যে দলে খেলেন জাতীয় দলের সিংহভাগ খেলোয়াড়, সে দল কি না ফাইনালে আর কুলিয়ে উঠতে পারে না, ভেঙ্গে পড়ে ব্যর্থতায়। ম্যাচে তারা তিন-তিনবার পিছিয়ে পড়েও সমতায় ফিরেছিল। কিন্তু শূট আউটে গিয়ে একটি ভুলের কারণে শিরোপা বঞ্চিত হয়। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে একলাখ টাকা পেয়েছে সেনাবাহিনী। রানার্সআপ নৌবাহিনী পেয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তৃতীয় স্থান অধিকারী ঢাকা জেলা পেয়েছে ২০ হাজার টাকা করে প্রাইজমানি। এছাড়া টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা সেনাবাহিনীর মিলন হোসেন (৩৫ গোল) ও সেরা খেলোয়াড় সেনাবাহিনীর শফিকুল ইসলাম পান ১০ হাজার টাকা করে। খেলার ৬ মিনিটেই নৌবাহিনীর রোমান ফাউলের জন্য গ্রিন কার্ড পান। একই মিনিটে সেনাবাহিনীর মিলনের একটি গোল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ৮ মিনিটে প্রথম পিসি পায় নৌবাহিনী। জিমি-সারোয়ার-চয়ন-জিমির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ৮ মিনিটে নৌবাহিনীর পুস্কর খিসার থ্রু থেকে নিলয় কানেক্ট করলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় সেনাবাহিনী। ১৭ মিনিটে সমতায় ফেরে নৌবাহিনী। রোমান সেনাবাহিনীর রোকনুজ্জামানের দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে পাঠান (১-১)। এর তিন পরেই আবার গোল করে এগিয়ে যায় সেনাবাহিনী। প্রথম পিসি পায় তারা। শফিকুল-সাব্বির-মনোজ কম্বিনেশনে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-১। ২৯ মিনিটে তৃতীয় পিসি থেকে গোল করে আবারও সমতায় ফেরে নৌবাহিনী। জিমি-রানা-আশরাফুল কম্বিনেশনে দৃষ্টিনন্দন গোলটি হয় (২-২)। প্রথমার্ধে এই স্কোরলাইন নিয়েই বিরতিতে যায় দু’দল। দ্বিতীয়ার্ধেও দু’দল সমানতালে খেলতে থাকে। দ্বিতীয় মিনিটেই মিলনের পুশে নিলয়ের কানেক্ট হলে আবারও লিড নেয় সেনাবাহিনী (৩-২)। পরের মিনিটেই চমক দেখায় নৌবাহিনী। ফরোয়ার্ড রাসেল মাহমুদ জিমি একাই ১৫ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেল থেকে গোল করে সমতায় ফেরান নিজ দলকে (৩-৩)। এরপর নির্ধারিত ৭০ মিনিটের খেলা শেষ হলে টুর্নামেন্টর বাইলজ অনুযায়ী খেলা অতিরিক্ত সময়ে না গড়িয়ে সরাসরি পেনাল্টি শূট আউটে গড়ায়। তাতে ৫-৪ গোলে জিতে ৩১তম জাতীয় হকির আসরে সর্বাধিক চতুর্দশবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় সেনাবাহিনী। শূট আউটে সেনাবাহিনীর গোল করেন সাব্বির রানা (২টি, তার সতীর্থ আহসান হাবিবকে নৌবাহিনীর গোলকিপার অসীম গোপ ফাউল করলে পেনাল্টি স্ট্রোক পায় সেনাবাহিনী। তাতে আবারও সাব্বির রানা গোল করেন), রোকনুজ্জামান, শফিকুল ইসলাম এবং পুস্কর খিসা মিমো। নৌবাহিনীর হয়ে গোল করেন ফরহাদ আহমেদ শিটুল, দ্বীন ইসলাম ইমন, ফজলে হাসান রাব্বি এবং রাসেল মাহমুদ জিমি। রোমান সরকারের প্রচেষ্টা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
×