ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টাকার বিনিময়ে শিক্ষকরা পরীক্ষার হলে উত্তর বলে দিচ্ছেন ॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ মে ২০১৭

টাকার বিনিময়ে শিক্ষকরা পরীক্ষার হলে উত্তর বলে দিচ্ছেন ॥ শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা মহলের অভিযোগের পর এবার পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের জন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসে শিক্ষকরা জড়িত এমন অভিযোগ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, টাকার বিনিময়ে শিক্ষকরা পরীক্ষার হলে উত্তর বলে দিচ্ছেন। পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এসব কিছুর সঙ্গে শিক্ষকরা জড়িত। আমরা তাদের বার বার সতর্ক করছি। এ বিষয়গুলো বন্ধ না হলে এসব শিক্ষককে রাখা সম্ভব হবে না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা হয় অনুষ্ঠানে। একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৭’র সেরা প্রতিষ্ঠান প্রধান, সংগঠন প্রধানদের সংবর্ধনাও দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান। আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আলমগীর, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ফারহানা হক প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো, নোট-গাইড বিক্রি ও কোচিং করানো হচ্ছে। অসৎ কাজের সঙ্গে জগিত শিক্ষকদের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আশা করি তারা এসব থেকে দূরে সরে আসবেন। সরে না আসলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। নোট গাইড ও কোচিং বন্ধে আইন করা হচ্ছে। দেশে খেলাধুলার জন্য মাঠের বড় অভাব উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকার বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ আছে সেখানে কৃষকরা ধান ও অন্য শস্যের মাড়াইয়ের কাজ করছেন। এজন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মিলে পরিকল্পনা করে সীমিত মাঠ ব্যবহার করে শরীর চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা খেলাধুলা ও শরীর চর্চা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। অনেকেই মনে করেন এ বিষয়ের পরীক্ষা হবে না। অবশ্যই পরীক্ষা হবে। খেলাধুলা ও শরীর চর্চার পারফর্মেন্স পরীক্ষার নম্বর হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রযুক্তি আমদানি করার মানসিকতা বদলাতে হবে অপর এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন এবং উচ্চতর গবেষণার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উচ্চতর গবেষণায় বিনিয়োগের মাধ্যমে মানসম্পন্ন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে উচ্চতর গবেষণা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) অডিটরিয়ামে শিক্ষা খাতে উচ্চতর গবেষণা সহায়তা কর্মসূচী সংক্রান্ত কর্মশালা ও চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা ও জ্ঞান চর্চা বাড়াতে হবে। প্রযুক্তি, জ্ঞান শুধু আমদানি করার মানসিকতা বদলাতে হবে। আমাদের নিজস্ব সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তার ব্যবহার করতে হবে। আমরা জ্ঞান ও প্রযুক্তি রফতানি করতে পারি, সেই জায়গায় আমাদের যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, উচ্চতর এবং ফলিত গবেষণার জন্য ২০১০-২০১৫ পর্যন্ত ১১৩টি গবেষণা প্রকল্পে ২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। চলমান গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, নায়েমের মহাপরিচালক অধ্যাপক প্রফেসর মোঃ হামিদুল হক বক্তৃতা করেন। পরে মন্ত্রী ১৬৬ গবেষণা প্রকল্পের অনুকূলে ১২ কোটি ৬০ লাখ ২২ হাজার টাকার চেক বিতরণ করেন। ১০ প্রকল্পের তৃতীয় কিস্তি, ৮০ প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৭৬ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। গবেষণা প্রকল্পের অনুদান, মুখ্য গবেষক ও সহকারী গবেষকের সম্মানী হিসেবে এ চেক দেয়া হয়। উল্লেখ্য, গাণিতিক বিজ্ঞান, জীবন সম্পর্কিত বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, আইসিটি, মেরিন সাইন্স এবং এসডিজি ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক গবেষণার জন্য এ অনুদান দেয়া হচ্ছে।
×