ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রেমের টানে বাংলাদেশে থাই সুন্দরী, অতঃপর বিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ মে ২০১৭

প্রেমের টানে বাংলাদেশে থাই সুন্দরী, অতঃপর বিয়ে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ১৮মে ॥ ফেসবুকে প্রেম। অতপর ভালবাসার মানুষটিকে কাছে পেতে সুদূর থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের নাটোরে এসে প্রেমিক যুবককে বিয়ে করলেন থাই নাগরিক সুপুত্তো ওরফে ওম ওরফে সুফিয়া খাতুন। বুধবার নাটোর আদালতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বর নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার আজাদ হোসেনের ছেলে মোবাইল মেরামতকারী অনিক খান। অনিকের শাহগোলা বাজারে একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে। অনিক বলেন, ফেসবুকে প্রথমে সুপুত্তো ওরফে ওমের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। এরপর মোবাইলে কথাবার্তা। লেখাপাড়া অনিক তেমন না জানলেও ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি বলতে পারেন। অনিক জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে সুপুত্তো ওরফে ওম প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান অনিক। এত দিন যার সঙ্গে পরিচয় ছিল ভার্চ্যুয়াল জগতে, বাস্তবে তাকে দেখে আরও ভালো লেগে যায়। ওম বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ওম তাদের বাড়িতে আসে। এরপর অনিকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। এ কথা জানিয়ে এই থাই-কন্যা বলেন, ‘সে যাত্রায় অনিকের পরিবারের লোকজন বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। মাত্র পাঁচদিনের ভিসা নিয়ে আসায় ‘না’ সূচক উত্তর নিয়েই বাড়ি ফিরে যায় ওম।’ এ মাসের প্রথম দিকে আবার তিনি ছুটে আসেন, পারিবারিক সম্মতি আদায়ে সফলও হন। তবে বিষয়টা খুব সহজ ছিল না। ওমের পরিবার রাজি থাকলেও অনিকের পরিবারের বিয়েতে ছিল আপত্তি। অবশেষে সকল বাধা অতিক্রম করে তারা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হতে পেরে খুশি। অনিক খান বলেন , ‘ওম আমাকে একটা ভাল মোবাইল ফোন সেট উপহার দিয়েছে। দুজনের ফোনেই সব সময় ইন্টারনেট সংযোগ থাকে। আমরা ভিডিও কল করে দীর্ঘ সময় কথা বলি। এভাবেই পরস্পরকে ভালবেসে ফেলেছি। অনিক বলেন ‘ও আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি ওর সঙ্গে সারা জীবন থাকতে চাই।’ বুধবার বিকেলে আদালত চত্বরে বসে সুপুত্তো বলছিলেন, ‘থাইল্যান্ডের সমাজে বহু বিবাহ একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এটা পছন্দ করি না। তাই বিয়ে করছিলাম না। হঠাৎ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের অনিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওর সরলতা আমাকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আমার আস্থা জন্মেছে। আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি। ওকে আপন করে নেয়ার জন্য এ দেশে ছুটে এসেছি। এবার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিয়ে করে আমি এখন দারুণ সুখী।’ ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠা প্রসঙ্গে ৩৬ বছর বয়সী সুপুত্তো বলেন, তিনি থাইল্যান্ডের ফিটচুয়া প্রদেশের চুয়াম এলাকার বাসিন্দা। পড়াশোনা শেষ করে তিনি প্রথমে ব্যাংকে চাকরি করতেন। সেটা ছেড়ে দিয়ে এখন ফাস্ট ফুডের ব্যবসা করেন। দোকানে বসে ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বাংলাদেশের ২২ বছরের তরুণ অনিক খানকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব (ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট) পাঠান। প্রথমে দু’জনের মধ্যে ফেসবুকে কথা হতো। পরে ফোনে কথাবার্তা চলতে থাকে। পরস্পরের প্রেমে পড়ে যান তারা। প্রেমের সফল পরিণতিতে খুশি সুফিয়া বললেন, ‘মানুষের জীবন একটা। জীবনের সঙ্গীও একটা হওয়া উচিত। আমার সমাজে সেটা নেই। আমি বিশ্বাস করি, অনিক আমার জীবনে একমাত্র সঙ্গী হয়ে থাকবেন। ওকে পেয়ে আমি দারুণ খুশি।’ তার ভাষায়, ‘অনিকের পরিবারের সদস্যদের হাতে-পায়ে ধরেছি। ১৮ মে পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ। এর এক দিন আগে ধর্মীয় ও আইনীভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করলাম। নাম নিয়েছি সুফিয়া খাতুন।’ অনিকের বাবা আজাদ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটি খুব ভাল। আমাদের আপন করে নিয়েছে। আমরা গরিব, শিক্ষিতও না। কিন্তু এ নিয়ে ওর কোন কষ্ট নেই।’ পুত্রবধূ তাদের ছেড়ে যাচ্ছে, এ জন্য তাদেরও কষ্ট হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
×