ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাড়ে পাঁচ মাস পর প্রাইমারীর বইয়ের শুদ্ধিপত্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ মে ২০১৭

সাড়ে পাঁচ মাস পর প্রাইমারীর বইয়ের শুদ্ধিপত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বছরের সাড়ে ৫ মাস পার হওয়ার পর অবশেষে প্রাথমিক স্তরের এবারের ভুলে ভরা পাঠ্যবইয়ের জন্য দেয়া হলো শুদ্ধিপত্র। পাঠ্যবই সাম্প্রদায়িকীকরণের বাইরে যেসব তথ্যগত ভুল নিয়ে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে সরকারকে সেসব বিষয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে এ শুদ্ধিপত্র। ফলে সাম্প্রদায়িকীকরণের ছাপ থাকছেই পাঠ্যবইয়ে। শুদ্ধিপত্রটি দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এনসিটিবির দেয়া প্রথম শ্রেণীর একটি, তৃতীয় শ্রেণীর তিনটি এবং পঞ্চম শ্রেণীর দুটি বইয়ের শুদ্ধিপত্র বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। শুদ্ধিপত্রে বলা হয়েছে, প্রথম শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’য়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় ‘মৌ’ এর স্থলে হবে ‘মউ’। তৃতীয় শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’য়ের ৬৮ পৃষ্ঠায় কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি ভুল করায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছিল। এনসিটিবির শুদ্ধিপত্রে কবিতাটির প্রথম লাইন ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’ এর শুদ্ধিপত্রে দেয়া হয়েছে ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। এছাড়া চতুর্থ লাইনে ‘মানুষ হতেই হবে’ এর সংশোধনী দিয়ে করা হয়েছে ‘মানুষ হইতে হবে’। নবম লাইনের ‘চাই’কে চায় করা হয়েছে। কুসুমকুমারী দাশের সংক্ষেপিত কবিতাটির তথ্যসূত্রে বলা হয়েছে, কুসুমকুমারী দাশের কবিতা, সুমিতা চক্রবর্তী সম্পাদিত প্রকাশনা, কলকাতা-৭৩ এর ভারবি প্রকাশনা থেকে ২০০১ সালে প্রথম প্রকাশ। তৃতীয় শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় ‘আমাদের জাতির পিতা’ লেখাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের নাম লেখা হয়েছিল ‘সায়েরা বেগম’। এর স্থলে ‘সায়েরা খাতুন’ হিসেবে শুদ্ধিপত্র দিয়েছে এনসিটিবি। একই শ্রেণীর ‘হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ (ইংরেজী ভার্সন) পেছনের কভারে ‘ঐবধৎঃ’ এর স্থলে ‘যঁৎঃ’ শব্দ দিয়ে সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। ‘ডু নট হার্ট এনিবডি’- বাক্যটি নৈতিকতা শেখানোর কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। পঞ্চম শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’য়ের ৩ পৃষ্ঠায় ‘সমুদ’ এর স্থলে সংশোধনী দিয়ে ‘সমুদ্র’ এবং ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ‘ঘোষণা’ বানানটি ‘ঘোষণা’ হিসেবে শুদ্ধ করেছে এনসিটিবি। এনসিটিবির উর্ধতন বিশেষজ্ঞ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মোঃ মুনাব্বির হোসেন ও এনসিটিবি সদস্যের (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) স্বাক্ষর রয়েছে শুদ্ধিপত্রে। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের অন্যান্য ভুল শুধরে দেয়নি এনসিটিবি। যেমন প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণীর ‘আমার বই’য়ে সপ্তম পৃষ্ঠায় ছাগলের গাছের গোড়ার ছবিটির বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। ‘ছাগল গাছে উঠছে’- এমন সমালোচনা চলছিল। পঞ্চম শ্রেণীর ‘সংকল্প’ কবিতাটির কয়েক জায়গায় ভুল থাকলেও তা শুদ্ধ করা হয়নি। এছাড়া ‘ওড়না’ বিতর্ক নিয়ে সুরাহা আসেনি। এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেছেন, প্রাথমিক স্তরের প্রধান ভুলগুলো সংশোধন করে শুদ্ধিপত্র দেয়া হয়েছে। আর কোন মৌলিক ভুল নেই। ছাগলের আম গাছে ওঠার ছবিটি সংশোধন বিষয়ে বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে সেগুলো পরিমার্জনে দেয়া হবে। মাধ্যমিক স্তরের ভুলগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে পরিমার্জন করে দেয়া হবে। এবার নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে ভুলের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কয়েক দফা সময় বৃদ্ধির পর দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। এই কমিটি বইয়ের ভুলের জন্য সাত কর্মকর্তাকে দায়ী করে শাস্তির সুপারিশ করেছিল। এদিকে ছোটখাটো কিছু ভুল নিয়ে কথা এলেও মৌলবাদী বই পরিবর্তনে এখনও কোন উদ্যোগ নেই। মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির পক্ষ থেকে তিনটি কমিটি করা হলেও তাদের কাজের মধ্যে নেই সেই বিষয়টিই। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু ভুল নিয়ে সংশোধনীপত্র গেল। কিন্তু মৌলবাদীদের কথা অনুসারে যে বই নিয়ে কথা উঠেছে তার বিষয়ে কিছুই হয়নি। জানা গেছে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য, ছবি ও তথ্য বিভ্রাটে ভরপুর নতুন বইয়ের কারিকুলাম (পাঠ্যক্রম)। পাঠ্যবইয়ে অহেতুক ধর্মীয় গোঁড়ামির বিষয়বস্তু ফিরিয়ে আনা হয়েছে। শিশুদের বই থেকে অধিকাংশ প্রগতিশীল বিষয়বস্তু প্রত্যাহার করে এবারের নতুন পাঠ্যপুস্তকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ধর্মীয় বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষানীতির বাইরে গিয়ে প্রগতিশীল ও যুক্তিবাদী লেখকদের গল্প, কবিতা, রচনা ও অন্যান্য সাহিত্যকর্ম পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে, এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে উগ্র ধর্মীয় সংগঠনগুলো। এছাড়াও সাহিত্য মানদ- মূল্যায়ন না করে শুধু জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভক্তিতে পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘হিন্দু’ লেখকদের বেশকিছু লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। ‘হিন্দু’ হওয়ার কারণে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সকল বই থেকে এবার এনসিটিবির চেয়ারম্যানের নামও বাদ দেয়া হয়েছে।
×