ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ মে ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ রাজধানী ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করার নানা চেষ্টা হচ্ছে। চেষ্টা হচ্ছে শহরটিকে সুন্দর করার। সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিমানবন্দর সড়কের পাশে লাগানো হয়েছে বেশ কিছু বনসাই। চীন থেকে আমদানি করা বৃক্ষ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কপথে ১০০০ হাজার বনসাই স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ। অর্থায়নের কাজটিও করছে তারা। এরই মাঝে ৩ প্রজাতির ১০০ বনসাই লাগানো হয়েছে। অনেকটা হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে গেছে গাছগুলো। ১২ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার বনসাই যথেষ্ট নতুন। যথেষ্ট ব্যতিক্রম। বিপুল বিস্ময় নিয়ে অনেকে তাকাচ্ছেন। প্রথমবারের মতো আউটডোরে এসেছে বনসাই। সৌন্দর্য উপভোগ করছেন পথচারীরা। আবার চটেছেনও কেউ কেউ। যারা চটেছেন তাদের কথাই আগে বলা যাক। এই অংশটিকে ঠিক পরিবেশবাদী বলা যাবে না। তবে সমাজ সচেতন। আরও অনেক কিছুর মতো পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়েও তারা ভাবেন। সেই তারা বলছেন, দেশীয় গাছ কেটে চীন থেকে আনা বনসাই লাগানোর ঘটনা তাদের হতবাক করে দিয়েছে। বিদেশী গাছ, গাছের ক্ষুদ্রাকৃতি সৌন্দর্য নয়। এটাকে বলছেন বিকৃতি। এই বিকৃতি বন্ধের জোর দাবি জানানো হচ্ছে তাদের পক্ষ থেকে। অন্য অংশটিও কম যায় না। তাদের কথাÑ এই দেশের কিছু মানুষ সমালোচনা করতে ভালবাসেন। নতুন কিছু মেনে নিতে পারেন না। যে কোন ইস্যতে সংকীর্ণতার পরিচয় দেন। বনসাই তো শিল্প। এর দেশী-বিদেশী কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হবে? সড়কের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন এক পথচারী। তার কথা আরও কট্টর শোনাল। বললেন, কয়েকটি চীনা বনসাই লাগালে জাত চলে যায় না। গ্রহণ-বর্জনের সংস্কৃতিটা জানতে হয়। আমরা সেটা সব সময় বুঝতে চাই না। ডেঙ্গুর কথা সবার জানা। এই জ্বর শহর ঢাকায় এক সময় ঝড় তুলেছিল। বহুদিন ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগেছেন রাজধানীবাসী। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। ব্যাপক আলোচিত ডেঙ্গু জ্বরের বাহক ছিল এডিস মশা। বর্তমানে এটি চিকুনগুনিয়া জ্বরের কারণ। প্রায় প্রতিঘরেই হানা দিচ্ছে। এভাবে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস। অবশ্য ছড়িয়ে পড়ছে না বলে ছড়িয়ে পড়েছে বলা উচিত। গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি আমলে নিলে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। পরিচিত যার সঙ্গেই কথা হয়েছে, বাসায় চিকুনগুনিয়া প্রবেশের কথা জানিয়েছেন মলিন মুখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আক্রান্ত হওয়ার খবর জানাচ্ছেন অগণিত মানুষ। গত ১৫ মে দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। তার বাসা সেন্ট্রাল রোডে। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মকবুল হোসেন মুকুল থাকেন কাঁঠালবাগান। সেখানেও এডিস মশার উপদ্রব। টানা এক সপ্তাহ বিছানায় পড়েছিলেন কর্মচঞ্চল মানুষটি। রোগীকে মারাত্মক কাবু করে ফেলে চিকুনগুনিয়া। মকবুল হোসেন মুকুলকে দেখে সেটি বেশ অনুমান করা যাচ্ছিল। তিনি সেরে উঠতে না উঠতেই শয্যা নেন তার স্ত্রী কানিজ আকলিমা সুলতানা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্য পরিবারগুলোতেও একজন সুস্থ হয়ে উঠছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন আরেকজন। ব্যাখ্যা করে চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য কোন মশা কামড়ালে সেই মশার শরীরে চলে যাবে ভাইরাস। মশাটি পরে সুস্থ যাকেই কামড়াবে তারই হবে চিকুনগুনিয়া। মূলত এভাবে ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি। অবশ্য চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করে বলছেন, চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতী নয়। দ্রুত রোগ শনাক্ত করা এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, রোগীকে কোন ধরনের এ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না। বাইরে বের হতে দেয়া যাবে না। বিশ্রামে থাকতে হবে। চিকিৎসকের মতে, আফ্রিকার দেশ তাঞ্জানিয়াতে প্রথম দেখা যায় চিকুনগুনিয়া। সেখানেই উৎপত্তি। চিকুনগুনিয়া মানে নাকি বেঁকে যাওয়া। ভাইরাসটি ভারতের কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
×