ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামিক সামিটে যোগ দিতে কাল সৌদি আরব যাচ্ছেন

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৯ মে ২০১৭

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের আমন্ত্রণে আগামীকাল শনিবার সৌদি আরব যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের আমন্ত্রণে অ্যারাব-ইসলামিক-আমেরিকান সামিটে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ থেকে ২৩ মে তিনদিন সৌদি আরব সফর করবেন। ওই সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, পবিত্র মক্কা ও মদিনার দুই মসজিদ হুমকিতে পড়লে সৌদি আরবের সহযোগিতায় প্রয়োজনে সেনা পাঠাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত থাকবে। বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী তার দফতরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০ মে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ২১ মে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। শীর্ষ এই সম্মেলনে আরব বিশ্ব ও অন্যান্য মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানগণ যোগ দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন। রিয়াদে অনুষ্ঠেয় এই শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় নতুন অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা, সহনশীলতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধের প্রসার এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদার করা। প্রধানমন্ত্রী এ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান এবং সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের সামগ্রিক সাফল্য তুলে ধরবেন। পাশাপাশি তিনি এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যৌথভাবে করণীয় বিভিন্ন প্রস্তাবও দিতে পারেন। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ব্যাপারে বাংলাদেশের আগের অবস্থানই অটুট আছে কি না, জানতে চাইলে মাহমুদ আলী বলেন, আমরা আগের অবস্থানেই আছি। তবে মুসলমান দেশ হিসেবে দুই পবিত্র মসজিদের ব্যাপারে যে ভক্তি ও ভালবাসা আছে, যদি মক্কা ও মদিনার মসজিদ হুমকিতে পড়ে এবং সৌদি আরব আমাদের সহযোগিতা চায়, তাহলে অবশ্যই সৈন্য পাঠাব। যদি এরকম কিছু হয়, তবে সামরিক সাহায্য দিতে প্রস্তুত থাকবে বাংলাদেশ। সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সৌদি-ইরান সংঘাতে যুক্ত হয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই আশঙ্কা একেবারেই ভিত্তিহীন। সন্ত্রাসবাদের মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলা করাই সৌদি কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করাই এর উদ্দেশ্য। সৌদি কেন্দ্রের নামকরণ হয়েছে ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর কমবেটিং এক্সট্রিমিস্ট থট’। বাংলাদেশ মনে করে, এই যে হানাহানি চলছে, এর অবসান হওয়া উচিত। প্রতিটি দেশ নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের জনগণের জীবনযাপন ও বিকাশে কাজ করবে। সৌদি নেতৃত্বাধীন উদ্যোগকে এখনই জোট বলা ঠিক হবে না। এটি ক্রমবিকাশমান। এ বিষয়ে এখনও লিখিত কিছু হয়নি। এদিকে, বিদেশ সফরে গেলে সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি করতে সম্প্রতি বাংলাদেশের মিশনগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্য পেশাজীবীদের বাদ দিয়ে শুধু সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি বৈষম্যমূলক কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহদুদ আলী বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা দেশের স্বার্থবিরোধী কোন তৎপরতায় লিপ্ত আছে কি না, তা নজরদারির জন্য বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে একটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১২তম বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী এই নির্দেশ দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের নজরদারি আদেশ প্রত্যাহার করে তাদের পেশাগত কাজে সহযোগিতার অনুরোধ জানান কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাবের সাবেক সভাপতি মাসুদ করিম। এ সময় মাহমুদ আলী বলেন, এটা তো নির্দেশ দেয়ার কিছু নাই। আমরা বিদেশী সাংবাদিকদের দাওয়াত দিচ্ছি। সবাই সব জায়গায় যাচ্ছে। কোন বিধিনিষেধ আছে বলে আমার জানা নাই। আপনারাও বিদেশে যাচ্ছেন, কোন বাধা দেয়া হচ্ছে না। কাউকে বাধা দেয়া হলে আমাকে জানাবেন, আমি জানতে চাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি করার বিষয় নিয়ে তারা সার্কুলার দেখেননি। তিনি এটা দেখবেন। মন্ত্রী বলেন, জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যারাই বিদেশে যাচ্ছে তাদের সবার ওপরে নজর রাখা আমাদের কর্তব্য। সরকারের কর্তব্য। এর মানে এই নয় যে, সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ রকম স্বাধীন গণমাধ্যম পৃথিবীর কম দেশে আছে। এখানে যা খুশি তাই লেখা হচ্ছে। বিদেশে গেলে কি করছে সেটি দেখা উচিত। যদি স্বার্থবিরোধী কিছু করে তবে সেটাতে (দেখার ব্যাপারে) আপনাদেরও সমর্থন থাকা উচিত।
×