ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ

জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নে ছয় খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ মে ২০১৭

জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নে ছয় খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

এম শাহজাহান ॥ জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছয়টি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছেÑ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুত, জ্বালানি, সড়ক, রেলপথ ও বন্দরসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসৃজন প্রকল্প, সরকারী সেবা প্রদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, জলবায়ু মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিকতর ব্যবহার ও প্রবাস আয় বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রফতানি বাজার অনুসন্ধান। এই ছয় খাতের ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হলে রূপকল্প-২১ এবং ভিশন-২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি সফরে যাওয়ার আগেই ভ্যাট হার নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে স্বস্তিদায়ক ভ্যাট হার নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে গাইড লাইন দিয়েছেন। আগামী দু’একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সরকারী ব্যাখ্যা দেয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এছাড়া বাজেটে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে তা হচ্ছেÑ চল্লিশটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জেন্ডার বাজেট রিপোর্ট প্রণয়ন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও এ সংক্রান্ত নতুন ধারণাপত্র প্রণয়ন এবং শিশু বাজেট ও ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা হালনাগাদ করা। পাশাপাশি পদ্মা সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্পের জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ১০টি মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমডিজি অর্জনের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ কারণে বাজেটে যেসব কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। জানা গেছে, প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরুর পর এবার উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে নতুন বাজেট দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ছোট থেকে বড়, ধনী থেকে গরিবসহ দেশের সবাইকে ভাল রাখার প্রয়াস থাকবে আগামী বাজেটে। পুরোপুরি দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে ব্যাপকভিত্তিতে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে চলতি বাজেটের চেয়ে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে। বাজেটের সম্ভাব্য আকার করা হচ্ছে ৪ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি। বড় অঙ্কের এই বাজেট বাস্তবায়ন ও অর্থসংস্থানে জোর দেয়া হবে রাজস্ব আদায়ে। এখন পুরোদমে বাজেট তৈরির কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হলেও আগামী অর্থবছরে তা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার সবকিছু মিলিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে যেতে পারে। আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, আগামী বাজেটই হবে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় বাজেট। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিতকায় এবারও বাজেটের আকার বাড়ছে। তিনি বলেন, ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ী সমাজের ভুল বোঝার কোন সুযোগ নেই। স্বস্তিদায়ক ভ্যাট হার নির্ধারণে কাজ শুরু করা হয়েছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভ্যাটের হার কমিয়ে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ভ্যাট হার নির্ধারণ নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোন বিরোধ হবে না। তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব সরকার অবশ্যই স্বস্তিদায়ক ভ্যাট হার নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত ভ্যাট সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হবে। এছাড়া, আসছে অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে। আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন-২০১২ কার্যকর করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ভ্যাটের হার কিছুটা কমাতে এই আইনে শেষ মুহূর্তে কিছুটা সংশোধন আনা হচ্ছে। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে ভ্যাট জিডিপি বাড়বে দেড় শতাংশ। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এনবিআর প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছে। তিনি বলেন, আমরা জনগণকে ভ্যাট আইন জানাতে চাই। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রূপকল্প-২১ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। গত ২০০৫ সালে দেশে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, সেখানে ২০১৩ সালে এ সংখ্যা কমে এসেছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের সংখ্যা ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসে। বর্তমান এ হার ২২ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। আগামী ২০২১ সালের পর এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার ১৩ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার সরকারী উদ্যোগ রয়েছে। মূলত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিকল্পনা করে দারিদ্র্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণের কারণে দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমেছে। একই সঙ্গে দূর হয়েছে বৈষম্যও। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গত ২০১০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দরিদ্রতা কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে, যা ২০১৫ সালে করার কথা ছিল। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হলে প্রবৃদ্ধির গড় হার ৮ শতাংশের ওপরে থাকতে হবে। ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে দারিদ্র্য কমে ০.৯৪ শতাংশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হলে অগ্রাধিকার নির্ণয়, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
×