ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাঈম আশরাফ ৭ দিনের রিমান্ডে ॥ সাফাত ও সাকিফের স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ মে ২০১৭

নাঈম আশরাফ ৭ দিনের রিমান্ডে ॥ সাফাত ও সাকিফের স্বীকারোক্তি

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর বনানীতে রেইন ট্রি হোটেলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলায় আলোচিত আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে মোঃ আবদুল হালিমকে সাত দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। এদিকে মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তারা দায় স্বীকার করে এই জবানবন্দী দেয়। অন্যদিকে রেইন ট্রিতে এ্যালকোহল ‘খুঁজে না পাওয়া’ মাদক নিয়ন্ত্রক অধিদফতরের সেই পরিদর্শককে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। অপরদিকে আপন জুয়েলার্সের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হয়রানির প্রতিবাদ ও স্বর্ণ আমদানিতে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বনানীর ধর্ষণ মামলার নাটের গুরু আলোচিত আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে মোঃ আবদুল হালিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ জামান এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিকেল পৌনে তিনটার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আসামি নাঈম আশরাফকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত এ সময় আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে এদিন এ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু সাদমান শাফিক হাকিমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন বলে আদালত পুলিশের এসআই আবদুল মান্নান জানিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তিনি জানান, ধর্ষণের মামলার দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। মনিরুল জানান, বাদীদের ভাষ্য অনুযায়ী সেদিন রাতে নাঈমের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ছিল। বুধবার রাতে মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে ওমেন সাপোর্ট এ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন্সের তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, সেদিন রাতের প্রধান ভূমিকা পালনকারী নাঈমকে মাত্রই আমরা গ্রেফতার করেছি। তাকে রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পরই সামগ্রিক বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। এ ঘটনার বাদী দুই তরুণীকে আসামিদের সঙ্গে মুখোমুখি করা হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আসামিদের কাছ থেকে যেসব তথ্য পাচ্ছি। সেগুলো নিয়ে বাদীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাছাড়া বাদীরা আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয়েছে। তরুণীদের এই অভিযোগের বিষয়টি পুলিশের তদন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, সাফাতের বডিগার্ড রহমতের কাছ থেকে তার অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্রটি সেই রাতে ব্যবহার হয়েছিল কি না সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি জানান, রিমান্ডে চার আসামি অভিযোগ অনেকটাই স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য তারা যাচাই- বাছাই করছেন। মনিরুল জানান, বনানীতে ধর্ষণ মামলার বাদী ও তার বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আসামিদের কাছে যা পাচ্ছি তা তাদের কথার সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছি। হোটেলের অন্যান্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মেইন আসামিকে কেবল ধরা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটুকু বলতে পারি ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হয়েছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাকি কথা বলা যাবে। ধর্ষণের ঘটনার সময় যে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তা উদ্ধার করা যায়নি বলে জানান মনিরুল। তিনি বলেন, ভিডিও রিকভার করতে পারিনি। জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। রিমান্ড শেষ পর্যায়ে। একজনের (সাদমান সাকিফ) আজ (বৃহস্পতিবার) শেষ হবে। তাকে আবারও রিমান্ড চাওয়া হবে। তদন্তের প্রাথমিক দিকে আছি। মনিরুল জানান, আসামিদের বক্তব্য পারস্পরিকভাবে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাস্তবের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ সেগুলো মিলিয়ে দেখা হবে। ভিকটিমরা অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের শিকার হয়েছে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এসব প্রশ্ন আমাদের মাথায় আছে। মনিরুল ইসলাম এ সময় আবারও বলেন, এ ধরনের কিছু হয়েছিল কি না, সব কয়টি তথ্যই আমরা বিবেচনায় রেখে তদন্ত করছি। আপনাদের মনে যে প্রশ্ন সেটি বুঝেছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসলে বলা যাচ্ছে না। কে এই নাঈম আশরাফ সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের গান্দাইল গ্রামের হালিম ঢাকায় এসে নাঈম আশরাফ নামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর প্রকাশ পায়। বনানীর ধর্ষণ মামলার পাঁচ আসামির নাঈম আশরাফ ওরফে হাসান মোহাম্মদ হালিম। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সে। ‘বিনোদন’ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত নাঈমকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে নাটেরগুরু হিসেবে উল্লেখ করেছে। এখন শুধু ধর্ষণের মামলার আসামি হিসেবে তিনি আলোচিত। গ্রেফতারের আগে আরও আলোচনায় স্থান পায়। পলাতক অবস্থায়ও সে তার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলা রেখেছিল। ইনস্টাগ্রামে তার ভূমিকা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চালু রাখার কারণেও তার নাম আলোচিত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, কোন অপরাধে আলোচিত হওয়ার পর অপরাধীরা সাধারণত তাদের মুঠোফোন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংযোগগুলো বন্ধ করে দেয়। ধর্ষক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নাঈম আশরাফ সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম এ্যাকাউন্ট চালু রাখার সে সাহস দেখিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, ঢাকায় এসে নাঈম আশরাফ নাম নিয়ে ‘ই-মেকার্স’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ২০১৪ সালে ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টের আয়োজন করেন তিনি। ২০১৬ সালে ঢাকায় ভারতের আরেক শিল্পী নেহা কাক্কারকে নিয়ে ‘নেহা কাক্কার লাইভ ইন কনসার্ট’ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন নাঈম বা হালিম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈম বিভিন্নজনের সঙ্গে নিজের সেলফি দিতেন। যা সুবিধা নেয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো বলে এখন মনে করছেন ওই ছবিতে থাকা ব্যক্তিরা। তার মধ্যে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, মডেল, চিত্রনায়িকা, ফ্যাশন ডিজাইনার, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনীতিকসহ অনেকের সঙ্গে তোলা নাঈম আশরাফের ছবি এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এসব ছবি তার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম এ্যাকাউন্ট থেকেই পাওয়া গেছে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্দাইল ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নাঈম আশরাফের আসল নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম। এলাকায় আপাদমস্তক ‘চিটার’ হিসেবে পরিচিতি তার। এই প্রতারক প্রতারণা শুরু তেই বাবা-মা’র দেয়া নাম পরিবর্তন করেছিল। সাফাত ও সাদমানের স্বীকারোক্তি বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণ মামলার আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তারা দায় স্বীকার করে এই জবানবন্দী দেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান এই তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী পরিষদের আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার রিংকি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার মধ্যে সাফাত ও সাদমানকে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল। বিচারকের খাস কামরায় তাদের জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করা হয়। তিনি আরও জানান, সাফাতের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব। এদিকে সাদমান সাকিফের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন আরেক ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী। সাফাত ও সাদমান ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হওয়ায় তাদের আদালতে নেয়া হয়। সাদমানের পাঁচদিনের রিমান্ড বৃহস্পতিবার এবং সাফাতের ছয়দিনের রিমান্ড শুক্রবার শেষ হচ্ছে। এ মামলার অপর আসামি নাঈম আশরাফকে বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেফতার করে আদালতে নেয়া হয়েছে। পুলিশ তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ৬ মে বনানী থানায় সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফসহ পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন দুই তরুণী। বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইন ট্রি হোটেলের একটি রুমে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। মামলার সব আসামিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই পরিদর্শক প্রত্যাহার ঢাকঢোল পিটিয়ে আলোচিত রেইন ট্রি হোটেলে অভিযান পরিচালনার নেতৃত্বদানকারী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গুলশান জোনের সেই পরিদর্শক ওবায়দুল কবিরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকারী আদেশে তাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তার জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন মোজাম্মেল হোসেন। অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সমমর্যাদার (এডি) এক কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, রেইন ট্রি হোটেলে মাদক উদ্ধারে চালানো অভিযানটিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওবায়দুল কবিরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে গত শনিবার বনানীর দুই তরুণীকে ‘ধর্ষণের’ ঘটনায় আলোচিত দ্য রেইন ট্রি হোটেলে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। কিন্তু অভিযানে কিছু উদ্ধার করতে পারেনি তারা। অভিযান শেষে ওয়াবদুল কবির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হোটেলের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি ও বার পরিচালনার অভিযোগ থাকলেও তল্লাশি চালিয়ে এ্যালকোহলজাতীয় কিছু পাইনি। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে সে কারণে আমরা হোটেলটির ওপর নজরদারি রাখব। তবে এর পরেরদিন রবিবার শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানে ১০ বোতল মদ পান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। কিন্তু ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে খালি হাতে ফিরে আসেন তারা। অতঃপর ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই শুল্ক গোয়েন্দার পৃথক অভিযানে ১০ বোতল মদ উদ্ধার হয়। আবাসিক হোটেলগুলোর ওপর নজরদারি বৃদ্ধি রাজধানীর বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনার পর ঢাকার সব হোটেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওমেন হলিডে মার্কেট উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মন্ত্রী বলেন, এ ঘটনার (বনানীর ধর্ষণ) পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নজরদারি বৃদ্ধি করেছে, যেন এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আর না ঘটে। তিনি বলেন, ওই হোটেলের ঘটনায় তদন্ত চলছে। অপরাধী যেই হোক না কেন আমরা তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এনগেজ মেন এ্যান্ড বয়েজ জোট (৩০টি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠন জোট)। বৃহস্পতিবার জোটের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে সংগঠিত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে ও তদন্ত করছে। এনগেজ মেন এ্যান্ড বয়েজ জোটের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, অপরাধীদের কোনরকম প্রভাব বিস্তারের সুযোগ না দিয়ে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করা হোক। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। একইসঙ্গে দেশব্যাপী একের পর এক ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিচারের পাশাপাশি নির্যাতনকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে, যেকোন নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারীদের প্রতি পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে, মনোসামাজিক কাউন্সেলিং এর সহযোগিতা নিতে হবে এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে পুরুষদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সমাজের সর্বস্তরে এগিয়ে আসতে হবে। নারী নির্যাতন বন্ধে পুরুষদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে হলে উন্নয়নের অংশীদার নারীর বিরদ্ধে নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। পুলিশ, প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে নারীবান্ধব ও প্রগতিশীল ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। এনগেজ মেন এ্যান্ড বয়েজ জোটের পক্ষ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় অঙ্গীকার ঘোষণার জন্য সরকারসহ সব নারী ও মানবাধিকার এবং উন্নয়নের সংগঠনের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। উল্লেখ্য, ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফসহ পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন দুই তরুণী। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ তার জন্মদিনের দাওয়াত দেয় দুই তরুণীকে। এরপর তাদের বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইন ট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে তাদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিলালকে দিয়ে ভিডিও করান হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলো- সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিলাল ও দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আবুল কালাম আজাদ।
×