ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

পর্দার বাইরের সিনেমা...

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৮ মে ২০১৭

পর্দার বাইরের সিনেমা...

মাস খানেক আগে অপু বিশ্বাস বোমা ফাটালেন! আমি অপু ইসলাম। শাকিব আমার স্বামী, এই হলো আমাদের সন্তান জয়। মুর্হূতেই অপু-শাকিব টক অব দ্যা কান্ট্রি! এমনকি, প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ ভারত সফর আলোচনায় ও এক রকম ফিকে হয়ে গেল, অপু-শাকিবের কৃর্তিতে! মুখোরচক আলোচনা-সমালোচনা, ভিন্ন ভিন্ন গসিপ, বিষয়টি নিয়ে অন্তহিন কৌতুহল দেখা গেছে সাধারণদের মধ্যে। দিন কয়েক আগে অপু বিশ্বাস তার ফেসবুকে লিখেছেন, মধ্যরাতে শাকিব খানের উপর যারা হামলা করতে চেয়েছিল তারা কারা? এই সাহস তারা কোথায় পায়? তাদের পেছনে ইন্ধন যোগায় কারা? আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই, এবং যারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তাদের শাস্তি চাই। তার এই ব্যক্তব্যে বোঝা যায় স্বামী শাকিব খানের উপর হামলার চেষ্টা হয়েছে। হ্যাঁ হয়েছে! যে কারণে শাকিব থানায় অভিযোগ করেছেন এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চেয়েছেন। তেজগাঁয় শিল্পাঞ্চল থানার ওসি বিষটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে শাকিব অভিযোগ করেছেন (জায়েদ খান, সাইমন সাদিক প্রমুখ) তারা বিস্মিত হয়ে বিষয়টা দঃখ জনক বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। প্রথম বিষয়টি ছিল দুই শিল্পীর ব্যক্তিগত টানাপোড়েন, দ্বীতিয়টা প্রায় সকল চলচ্চিত্র শিল্পীদের সঙ্গে সংশিষ্ট। চলচ্চিত্র শিল্পের এবং শিল্পীদের ভাল-মন্দ দেখ ভালের জন্য ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি’ নামে একটা সমিতি আছে। এই সমিতির পরিচালনা পর্ষদ দুই বছর মেয়াদে শিল্পীদের ভোটে নির্বাচিত হয়। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদাক ইত্যাদি ইত্যাদি পদ রয়েছে এই সমিতির। গত ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সমিতির মেয়াদ শেষ হয়, এ কারণে নতুন কমিটি নির্বাচনের তোরজোর শুরু করে। আলাদা আলাদা প্যানেল, নতুন সম্ভাবনার নির্বচনী ইশতেহার, বেশ রাগ-ডাগে চলছিল জোর প্রচারনা, মিশা সদাগর, জায়েদ খান বনাম ওমর সানি, ফেরদৌস, প্যানেলের মধ্যে গত পাঁচই মে শুক্রবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান সভাপতি সাকিব খান অবশ্য এবার প্রার্থী হন নি, তবে ওমর সানি-ফেরদৌস প্যানেল কে সমর্থন করেন। নির্বাচনের দিনে মধ্যে রাতে ভোট গনোনার সময় যা ঘটেছে তা সকলেরই জানা। এরপর নতুন ক্লাইমেক্স! পরাজিত প্যানেল ফলাফলে অনাস্থা প্রাকাশ করে এবং নতুন করে ভোট গনণার দাবি তোলে, সেই প্রেক্ষিতে আরো একবার ভোট গুনতে হয়। ভোটগণনার দ্বীতিয় দফায় পরাজিত সভাপতির প্রাপ্ত ভোটসংখ্যা প্রথম বারের থেকে বেশি হলে, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন বাতিলে আদালতের সরন্নাপন্ন হন ওমর সানি। আদালত দায়িত্ব হস্তান্তরে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পুনরায় ক্লেইমেক্স! নির্বাচিত সকল শিল্পীদের ঠিক ঠিক না জানিয়ে এক রকম হঠাৎ করেই নবনির্বাচিত কমিটি শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, নির্বাচিত ২১ জনের মধ্যে ১১জন নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় নতুন কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। জানতে চাওয়া হয় নির্বাচন কমিশনার মমতাজুর রহমান আকবরের কাছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নতুন কমিটি কেন শপথ গ্রহণ করল। উত্তর, আদালত নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরে অস্থায়ি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কিন্তু শপথ গ্রহণে তো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, তাহলে শপথ গ্রহণে সমস্য কোথায়। খুবি অল্প সময়ে ঘটে এমন সব সিনেমেটিক ঘটনা। কৌতুহল জনসাধারণ এ সব ঘটনা খবরে পত্রিকার কাগোজে একটু বেশি আগ্রহ নিয়ে জানছে। কিন্তু কথা হলো, সারা পৃথিবীতে যখন এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের চলচ্চিত্রের সকল মানের সঙ্গে অসম প্রতিযোগী হচ্ছে তখন আমরাই আমাদের শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বী! চলচ্চিত্রের মত একটা সৃজনশীল ক্ষেত্রে শিল্পী দের এহেন দ্ররিদ্য আচরণ সত্যই কষ্ঠ দায়ক। আশিক দশক থেকে নিয়োমিত বাংলা চলচ্চিল দেখেছেন, উপভোগ করেছেন, গর্ব করেছেন একটি নতুন স্বাধীন দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অগ্রযাত্রায়। এমনি একজন ভদ্রলোক মুনিরুল ইসলাম তিনি বলেন, আমাদের সবক্ষেত্রে এখন কাজ করার থেকে কাজ দেখানোর টেনড্যান্সিটা বেশি। তাইতো চলচ্চিত্রের মত একটা বড় জাগায় কেউ কাজ না করে কাজের মানুষ হতে চায়। আসল কথা আমরা যারা এক সময় বাংলা সিনেমা দেখেছি, সিনেমা নিয়ে গর্ব করেছি আর সেই আমরা এখন কার শিল্পীদের কার্যকলাপ দেখে কষ্ট পাই। আমারা চাই সিনেমা। ভাল ভাল গল্পের সিনেমা, আর সেই সিনেমা নিয়ে টেলিভিশন, খবরের কাগজে নিউজ পরতে চাই। এর বাইরে কারো ব্যক্তিগত খবর পড়তে বা দেখতে চাই না, এ সব খবর আমাদের কোন কাজে লাগবে না। মুনিরুল ইসলাম এক জন দর্শক হয়ে নিজের অভিব্যক্তি একটু আবেগের সঙ্গে প্রকাশ করেছেন, কিন্তু বিষয়টা আসলেই তাই। গত কয়েক মাসে থেকে আমাদের নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তার থেকে ঢের হয়েছে এর বহির্ভূত আলোচনা।
×