ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেটার মুশফিকের বাবা-চাচা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত

বগুড়ায় কিশোর হত্যা- সামনে অনেক প্রশ্ন শীঘ্র রহস্য উন্মোচন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৮ মে ২০১৭

বগুড়ায় কিশোর হত্যা- সামনে অনেক প্রশ্ন শীঘ্র রহস্য উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় কিশোর মাসুক ফেরদৌস হত্যাকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) দুই প্রভাবশালীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, একটি স্কুলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে অননুমোদিতভাবে আরেকটি স্কুল নির্মাণই কি কাল হলো এসওএস হারম্যেন মাইনার স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাসুক ফেরদৌসের (১৫) ! মাসুক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এ্যাডভোকেট এমদাদ আলী ইমদাদের ছেলে। বাড়ি বগুড়া শহরতলীর মাটিডালী হাজীপাড়া এলাকায়। শনিবার রাত ন’টার দিকে মাসুককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহতের বাবা এমদাদ আলী বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীমের বাবা ও চাচা যথাক্রমে বগুড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুব হামিদ (তারা) ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেসবাহুল হামিদসহ ১৬ ব্যক্তিকে। দেশে এই প্রথম কোন সফল ক্রিকেটারের বাবা ও চাচা কিশোর হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হলেন। যা বগুড়ার সুধীজনকে বিস্মিত করে তুলেছে। এই ঘটনায় পুলিশ এখনও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। একজনকে আটক করা হয়েছে। সে নিহত মাসুকের বন্ধু সাফিন (১৬)। পুলিশ বলেছে, ঘটনার প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর মামলা দায়ের হলেও হত্যা ঘটনার পরই তারা মোটিভ খুঁজে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান বুধবার সকালে জানান, তদন্ত এগিয়েছে। শীঘ্রই ব্রিফিং করে জানানো হবে। এদিকে মাসুক হত্যা ঘটনায় এলাকার দুই প্রভাবশালীর পক্ষে বিপক্ষে মানববন্ধন সমাবেশ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। কিশোর মাসুক হত্যার পর যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো : মাটিডালী এলাকায় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীমের পৈত্রিক বাড়ি সংলগ্ন মাটিডালী উচ্চ বিদ্যালয়। এই স্কুল নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় দুই প্রভাবশালী পক্ষ সক্রিয়। এসএমসির নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে দুটি পক্ষ। বর্তমান সভাপতি মাহবুব হামিদ তারা পাঁচ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে সভাপতি ছিলেন জাসদ নেতা এ্যাডভোকেট এমদাদ আলী। বর্তমান সভাপতি মাহবুব হামিদ ওই স্কুল চত্বরেই কিছুদিন আগে ‘বর্ণালী বিদ্যায়তন’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। নতুন স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে মূল মাটিডালী হাই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বিলুপ্ত করে দেন। উল্লেখ্য, মাটিডালী হাই স্কুল একাডেমিক অনুমোদন প্রাপ্ত। বর্ণালী বিদ্যায়তন আজও একাডেমিক অনুমোদন পায়নি। এই ঘটনা নিয়ে এলাকার দুই পক্ষের মধ্যে ঠা-া লড়াই চলছে। দিনকয়েক আগে মাটিডালী হাই স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের পক্ষে সাকোয়াত হোসেন সাকু নামের এক ব্যক্তি বর্তমান এসএমসি কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে প্রেস কনফারেন্স করেন। তারপর হতেই এলাকায় বিরাজ করে থমথমে অবস্থা। এরই মধ্যে গেল শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যে ৬টার দিকে কয়েক বন্ধু মাসুককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির কাছেই এক মাঠে মাসুককে ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ফেলে রাখা হয়। লোকজন দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এই হত্যা ঘটনার পর এলাকার সকলেই শোকাহত হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে মাহবুব হামিদ ও তার ভাই মেসবাহুল হামিদের (মুফিকের বাপ ও চাচা) ওপর হত্যার দায় চাপানো হয়। জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি যুগ্মসাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সোমবার ঢাকা থেকে বগুড়া এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সেখানেও কিশোর হত্যার অভিযোগের তীর যায় মুশফিকের বাবার ওপর। মামলার এজাহারে নিহত মাসুকের বাবা হত্যার যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে বলা হয়, কাউন্সিলর মেসবাহুলের অফিসে ৪/৫ জন মিলে হত্যা পরিকল্পনা করে। তারপর প্রস্তুতি নিয়ে হত্যাকা- ঘটায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্ত্তী ঘটনার পরই তদন্ত শুরু করেন। এজাহারের পর এই তদন্ত গতি পায়। এজাহারভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে মাসুকের দুই বন্ধু নাইম (১৮) ও অনিককে (১৯) পুলিশ খুঁজছে। পুলিশের ধারণা নাইমকে পাওয়া গেলে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটিত হবে। আরেক সূত্র জানায় ক্রিকেট খেলার বিরোধকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকা- ঘটতে পারে। পুলিশও এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এলাকার আরেক সূত্র জানায় মুশফিকের বাবা মাহবুব হামিদ এর আগে মাটিডালী কবরস্থান নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তারপরই স্কুল কমিটির বিতর্কের মধ্যে পড়েন। সবচেয়ে বড় বিতর্ক হলো : একাডেমিক অনুমোদন পাওয়া একটি হাই স্কুলের ভিতরেই হাই স্কুলের তিনটি শ্রেণী বিলুপ্ত করে নতুন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশের সফল ক্রিকেটার টেস্ট ম্যাচের সফল অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের অশোভন ব্যবহার বগুড়ার মিডিয়া কর্মীদের ব্যথিত করে। বগুড়ার সুধীজনে বলাবলি হয়, দেশের গর্ব একজন ক্রিকেটারের ব্যবহার এত খারাপ হবে কেন। তার বাবা ছেলের গর্বে গর্বিত না হয়ে কিশোর হত্যা মামলায় কেনই বা অভিযুক্ত হবেন। মুশফিকের বাবা কি সত্যই হত্যাকা-ে জড়িত! বিষয়টি পুলিশের প্রকৃত তদন্তে বের হয়ে আসবে এবং তা শীঘ্রই, এমনটিই বলেছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার।
×