ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসিসিআই সেমিনারে বক্তাদের অভিমত

জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ মে ২০১৭

জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উন্নত অবকাঠামোর অভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির উন্নতি হয়নি। এজন্য অবকাঠামো খাতে চলমান প্রকল্পসমূহে পিপিপির আওতায় বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে তবে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম এখনও কাক্সিক্ষত গতি পায়নি। বর্তমানে ১৯৫০ সালের আইনের মাধ্যমে আমাদের ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তাই এ আইনের সংস্কার প্রয়োজন। একই সঙ্গে সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলোর সংস্কার কার্যক্রম আরও বেশি পরিমাণে বাড়াতে হবে। বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অবকাঠামো’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার। এতে তিনি উল্লেখ করেন বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীর ৪৫তম অর্থনীতির দেশ এবং অবকাঠামো খাতে ১১৪তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশকে পণ্য পরিবহন ও বিতরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও বাজার সম্প্রসারণ এবং জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো কার্যকর করার জন্য এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানাবিধ সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ গত ৮ বছরে ১৮ শতাংশ হারে রাজস্ব আহরণ করেছে, যার ফলে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সম্পদের মাধ্যমে বাজেটের ৯০ ভাগ অর্থায়ন মেটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ অর্থনীতির নানাক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও সময় এসেছে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের প্রতি মনোযোগী হওয়ার। সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরগুলোর আন্তর্জাতিক মান অর্জনে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এজন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরী বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বিডা ‘ওয়ান স্টপ’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ কম সময়ে ট্রেড লাইসেন্স, আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তিসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক সেবা পাবেন, যার ফলে ব্যবসায় ব্যয় হ্রাসের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি জানান, সরকার দেশের অবকাঠামো খাতে সংস্কারে বদ্ধপরিকর। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম খালেক ইকবাল জানান, দেশের কন্টেনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ এবং কার্গো ও জাহাজ পরিবহনের ৭২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর সারা পৃথিবীর বন্দরগুলোর মধ্যে ৭৬ স্থানে রয়েছে। এছাড়া গত আট বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ২২ ধাপ সামনে এগিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে কন্টেনারের পাশাপাশি জাহাজের আকারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য আমাদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বন্দরের সংস্কার কার্যক্রম বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, বন্দরের কার্যক্রমে সপ্তাহে সাতদিন চলমান থাকলেও শুল্ক বিভাগ ও ব্যাংকিং কার্যক্রমে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক সময় পণ্য খালাসসহ অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এজন্য পণ্য পরিবহনে খরচ ও সময় কমানোর লক্ষ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর কাছাকাছি এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরামর্শ দেন তিনি। আব্দুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মাইনুদ্দিন মোনেম বলেন, সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম এখনও কাক্সিক্ষত গতি পায়নি। তিনি জানান, বর্তমানে ১৯৫০ সালের আইনের মাধ্যমে আমাদের ভূমি সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তাই এ আইনের সংস্কার একান্ত আবশ্যক। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে। এ্যালাইন্স পোর্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদ ইয়াসির হায়দার রিজভী বলেন, আমাদের সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলোর সংস্কার দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল, তাই এগুলোর সংস্কার কার্যক্রম এখন সময়ের দাবি। তিনি অবকাঠামো খাতে বর্তমানে চলমান প্রকল্পসমূহে পিপিপির আওতায় বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করেন।
×