ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দশ আর্ট ক্যাম্পের ছবি প্রদর্শনী

সময়কে ধরে রাখার সচেতন প্রয়াস সুন্দর সংগ্রহ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ মে ২০১৭

সময়কে ধরে রাখার সচেতন প্রয়াস সুন্দর সংগ্রহ

মোরসালিন মিজান ॥ আর্ট ক্যাম্পের কিছু ভাল দিক আছে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছে শিল্পকলা একাডেমি। সরকারী প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মশালার আয়োজন করছে। সিনিয়র শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ছবি আঁকার জন্য। একই দলে থেকে ছবি আঁকছেন অপেক্ষাকৃত নবীনরা। এভাবে শিল্পীর কাজ এবং সমকালকে ধরে রাখার সচেতন উদ্যোগ। ছবি আঁকার প্রেক্ষিতগুলোও বিবিধ। নানা ঘটনা দুর্ঘটনাকে বিষয় করেছেন শিল্পীরা। আলাদা আলাদাভাবে কিছু প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে। তবে এখন একসঙ্গে দশটি আর্ট ক্যাম্পের ছবি দেখার সুযোগ। চিত্রশালা প্লাজায় আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনীর। গত ৭ মে ছিল উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। এর পর থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রথমেই বলতে হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আয়োজিত আর্ট ক্যাম্পটির কথা। উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত একাডেমি ভবনে বর্বর আক্রমণ চালিয়েছিল উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী। মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতি, ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র সব আগুনে পুড়ে দেয়া হয়েছিল। এমন ঘটনায় আরও অনেকের মতো শিল্পীরাও বেদনাহত হয়েছিলেন। ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। প্রতিবাদ হিসেবে তখনই সেখানে ছুটে যান। ধ্বংসস্তূপের সামনে বসে বেদনাকে আঁকেন। ২০১৬ সালের সেই দুর্বিসহ স্মৃতি নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে শিল্পী সমরজিৎ দাস, আবদুল মান্নান, কামালুদ্দিন, পদ্যোত কুমার, সোহাগ পরভেজ প্রমুখের ছবি। সহিংসতার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত আর্টক্যাম্প থেকেও মানবতার জয়গান করেছেন শিল্পীরা। একই গ্যালারিতে খুলনার চুকনগরে সংগঠিত গণহত্যার ছবি। একাত্তর সালে এখানে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষকে হত্যা করেছিল পাকবাহিনী। এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত হচ্ছে। শূন্য বিরান ভূমিতে বসেই ছবি আঁকেন শিল্পীরা। অনুসঙ্গ তেমন কিছু ছিল না। ছবি দেখে বোঝা যায়, ইতিহাসের পাঠ এবং কল্পনার আশ্রয়ে ভয়ঙ্কর গণহত্যার ছবি আঁকেন শিল্পীরা। নাসিম আহমেদ নাদভী, আবদুল মান্নান, মোঃ ইব্রাহীম, সমর মজুমদার, নাসরিন বেগম, তুষার প্রমুখের আঁকা ছবি দেখে এখনও বিষণœ হয়ে ওঠে মন। কেমন যেন কেঁদে ওঠে। ১৫ আগস্ট আয়োজিত আর্ট ক্যাম্পের ছবিতে জাতির জনকের বহুমাত্রিক উপস্থাপনা। বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতাকে আরও গভীরভাবে পেতে শিল্পীরা গিয়েছিলেন টুঙ্গিপাড়ায়। মুজিবের সমাধি সৌধের পাশে বসে ছবি এঁকেছেন। নানা ভাবনা থেকে আঁকা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে গ্যালারির দেয়ালে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষেও আয়োজন করা হয়েছিল আর্ট ক্যাম্পের। পিতার পাশেই কন্যার ছবিগুলো যেন ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। বেশকিছু ক্যানভাসে খুঁজে পাওয়া যায় জয়নুল আবেদিনকে। শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে পাওয়া ছবিগুলোকে উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ বলা যায়। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। সেসব ছবিতে কথা বলছে বাঙালীর ভাষার সংগ্রামের ইতিহাস। ১৭তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী উপলক্ষে চট্টগ্রামের কেইপিজেড এলাকায় আয়োজিত আর্টক্যাম্পের ছবি আছে প্রদর্শনীতে। আছে শিল্পকলা একাডেমির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আঁকা ছবির সংগ্রহ। এভাবে এক প্রদর্শনীতে বহু শিল্পীর কাজ। কয়েক শ’ চিত্রকর্ম। দেখার অন্যরকম আনন্দ হয়। আর্টক্যাম্প আয়োজনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নামটি প্রদ্যোত কুমার। এই শিল্পী চারুকলা বিভাগের ইন্সট্রাক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আর্ট ক্যাম্পের ছবি ভাল হয় না। অনেককেই এমন কথা বলতে শুনেছি। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির আর্টক্যাম্পের বেলায় ঠিক উল্টোটি হয়। শিল্পীরা জানেন তাদের আঁকা ছবি সরকারী এই প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করবে। বিভিন্ন সময় প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। ফলে তারা নিজেদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেন। চলমান প্রদর্শনী ঘুরে অবশ্য তা-ই মনে হয়। বিশেষ এই আয়োজন চলবে ২১ মে পর্যন্ত।
×