ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিকুনগুনিয়া ঠেকাতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ মে ২০১৭

চিকুনগুনিয়া ঠেকাতে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়

নিখিল মানখিন ॥ চিকুনগুনিয়া ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে এ বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত একটি ভাইরাসের নাম। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী মশাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহন করে। এটি নতুন কোন ভাইরাস নয়। ১৯৫২ সালে প্রথম তাঞ্জানিয়ায় রোগটি শনাক্ত হয়। এখন বিশ্বের প্রায় ৬০ দেশে রোগটি দেখা যায়। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে এই রোগের প্রকোপ প্রথম দেখা যায়। এর আগে রোগটি বাংলাদেশে অন্য নামে পরিচিত ছিল। অনেকে একে ‘ল্যাংড়া রোগ’ বলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহনকারী মশার প্রকোপ বেড়েছে। ফলে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলছেন, মশার কামড় থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের বারান্দা, আঙিনা বা ছাদ পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পানি পাঁচদিনের বেশি জমে না থাকে। এসি বা ফ্রিজের নিচেও যেন পানি না থাকে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু মশাটি দিনেরবেলায় কামড়ায়, তাই দিনেরবেলায় কেউ ঘুমালে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশা মারার জন্য স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট পরতে হবে, আর খেয়াল রাখতে হবে মশা যেন ডিম পাড়ার সুযোগ না পায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ঢাকার ধানম-ি, কলাবাগান, গ্রীনরোড, হাতিরপুল, লালমাটিয়া, মালিবাগ এলাকা থেকে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে বেশি যাচ্ছে। এছাড়া নারীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। এই রোগের নির্দিষ্ট কোন প্রতিকার নেই। লক্ষণ দেখে চিকিৎসা ঠিক করা হয়। জানা গেছে, সম্প্রতি আইইডিসিআরবি থেকে ২৩ টিম সরেজমিন বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল পরিদর্শন করে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা বের করেন। জ্বরে আক্রান্ত কোন রোগীর প্রকৃতপক্ষেই ডেঙ্গু হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে কী করতে হবে সে সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়। রাজধানীর মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি)। দুই সিটি কর্পোরেশনই বলছে, প্রতি বছরই এই সময়ে মশার উপদ্রব থাকে। ডিএনসিসির ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বরাদ্দ রাখা হয় ১৪ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ডিএসসিসির এবারের বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ সাড়ে ১২ কোটি টাকা। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির কর্মী আছেন ২৭৯ এবং ডিএসসিসির কর্মীর সংখ্যা ২৮৪। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত ওষুধ ছিটানোসহ নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক লোকবল, সরঞ্জাম ও যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ থাকার পরও মশা নিধন কার্যক্রমে কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রম চালু নেই। পানি মেশানো ওষুধ ছিটানোর মাধ্যমেই নিজেদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখছে ডিসিসি। মশক নিধন কার্যক্রমের বরাদ্দ নিয়ে লুটপাটের খেলা চলে। বাড়তি টাকা না দিলে কোন বাসা বা এলাকায় ওষুধ ছিটায় না ডিসিসি কর্মীরা। ডিসিসির এই বিভাগের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোন যোগাযোগ থাকে না। ডিসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে এ কার্যক্রম চালিত হয়ে থাকে। মশা নিধনে তারা বিশেষ সফলতা পায় না। আর ডিসিসির অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার দায়ভার গিয়ে পড়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওপর বলে অভিযোগ করেছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডাঃ তাহমিনা শিরিন বলেন, এ বছর মৌসুমের আগেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই মশার উপদ্রব বেশি হওয়ার আশঙ্কা। এ জন্য প্রত্যেককে তার আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। কোথাও যেন বৃষ্টির পানি দীর্ঘ সময়ের জন্য জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহনকারী মশা সাধারণত দিনেরবেলায় কামড়ায় এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা রয়েছে।
×