ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সদ্য বরখাস্ত হওয়া কোমির লেখা মেমোয় তথ্য ফাঁস

এফবিআইয়ের কাজে হস্তক্ষেপ!

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৮ মে ২০১৭

এফবিআইয়ের কাজে হস্তক্ষেপ!

মার্র্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে রুশ ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে তদন্ত বাদ দেয়ার জন্য সদ্য বরখাস্ত হওয়া এফবিআইয়ের প্রধান জেমস কোমিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প কোমিকে বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি বিষয়টি নিয়ে আপনি বেশি দূর অগ্রসর হবেন না।’ কোমির লেখা এক মেমো থেকে এ তথ্য জানা গেছে। খবর এএফপি ও বিবিসির। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরপরই কোমি ওই মেমোটি তৈরি করেছিলেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি বৈঠকটি হয়। এর ঠিক একদিন আগে ট্রাম্পের নির্দেশে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে জেনারেল মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগ করেন। তবে মিডিয়ার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, ‘কোমি বা অন্য কাউকে তদন্ত বন্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট কোন নির্দেশ দেননি। বিশেষ করে ফ্লিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন তদন্ত।’ এতে আরও উল্লেখ করা হয় এফবিআইয়ের অস্থায়ী পরিচালক গত সপ্তাহেই কংগ্রেসের শুনানিতে বলেছেন, তদন্ত বাধগ্রস্ত হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার আগেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে বিভ্রান্ত করেন, এই অভিযোগ পাওয়ার পর ট্রাম্প ফ্লিনকে পদত্যাগ করতে বলেন। সর্বশেষ এই খবর ট্রাম্প প্রশাসনকে আরেকবার বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। কোমি যে মেমোটি তৈরি করেন সেটি এফবিআইয়ের কর্মকর্তাদের তিনি দেখিয়েছেন। মেমোতে তিনি লিখেছিলেন ‘তিনি (ট্রাম্প) একজন ভাল মানুষ। তার সঙ্গে আমি একমত।’ এই ঘটনা হোয়াইট হাউসের ভাবমূর্তির ওপর ফের কালো ছায়া ফেলল। ট্রাম্প দেখিয়ে দিলেন তিনি এফবিআইয়ের কাজের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করে থাকেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে ই-মেইল করা বিষয় তদন্ত করেন কোমি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি সরকারী ই-মেইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টিয়ে কোমি যেভাবে তদন্ত করেন তাতে ট্রাম্প সন্তুষ্ট হননি। হিলারি ছাড়াও নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়েও তদন্ত করেন কোমি। বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসনকে কিছুটা ক্ষুব্ধ করে বলে অনেক গবেষক মনে করেন। নেপথ্যের কারণ যাই হোক, কোমিকে পদচ্যুত করার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার উচ্চমহলে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছে। এর আগে ফ্লিনকে পদত্যাগ করানোর পর অনুরূপ আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর সেটি শিথিল করা হবে বলে ফ্লিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াককে ডিসেম্বরে কথা দিয়েছিলেন। পরে এ কথা ফাঁস হলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ২৩ দিনের মাথায় বরখাস্ত হন ফ্লিন। আইনানুযায়ী কোন সরকারী পদে না থাকা অবস্থায় কোন নাগরিক কূটনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত হতে পারেন না। ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এফবিআই এবং কংগ্রেসের উভয়কক্ষ তদন্ত পরিচালনা করে। এদিকে মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত মেইন অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সদস্য অংগাস কিং বলেছেন, প্রতিনিধি পরিষদে যদি এখন ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য থাকত তবে এত দিনে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য ইমপিচমেন্ট বিলের খসড়া তৈরির কাজ শুরু হয়ে যেত। জন ম্যাককেইনের মতো সিনিয়র রিপাবলিকান সিনেটররাও মনে করেন ওয়াশিংটনে এখন যা ঘটে চলেছে তা সরকারের জন্য লজ্জাজনক। তিনি মনে করেন, পরিস্থিতি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির দিকে গড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, ম্যাককেইন ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পদপ্রার্থী ছিলেন।
×