ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

অসাধু বনাম ভুক্তভোগী

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১৮ মে ২০১৭

অসাধু বনাম ভুক্তভোগী

পরিবার জীবন থেকে শুরু করে দেশ ও সারা বিশ্বে সুবিধাভোগী আর ভুক্তভোগীর মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব সর্বদা বিদ্যমান। সুবিধাভোগীর একমাত্র লক্ষ্য অন্যের ক্ষতি সাধন করে নিজের আখের গুছিয়ে নেয়া। আর ভুক্তভোগী সবসময় নির্যাতন, অবহেলা, প্রতারণা ও কষ্টের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকে। সুবিধাভোগীরা সংখ্যায় কম হলেও তাদের সিন্ডিকেটের শাখাপ্রশাখা এতটাই বিস্তৃত যে, সেখানে কেউ সহজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আমাদের দেশের বাস্তবতায় এ চিত্রগুলো আরও বেশি স্পষ্ট। কৃষক রোদে পুড়ে শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে যে খাদ্য উৎপাদন করছেন, তার ন্যায্য দাম তারা কখনও পান না। বরং কৃষকের কাছ থেকে কম মূল্যে খাদ্য কিনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। কিন্তু ন্যায্য দাম পাওয়ার কথা তো কৃষকেরই! কেন এই বঞ্চনা? মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলো রয়েছে তার মধ্যে খাদ্য হচ্ছে একটি; আর এই খাদ্যের উপরই সিন্ডিকেট চক্রের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। খাদ্যের দাম বাড়ানো থেকে শুরু করে খাদ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি আর খাদ্যে ভেজালের সয়লাব ঘটানোতে এই চক্র সব সময় সিদ্ধহস্ত। আমাদের দেশে রোজা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উৎসবগুলোর আগে-পরে ব্যবসায়ীদের খাদ্যের দাম বাড়ানোর রীতি যেন অঘোষিত-অদৃশ্য লিখিত আইনে পরিণত হয়েছে। আমার জানা মতে, অন্য দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের দাম যদি বাড়ানো হয়, তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তা জবাবদিহি করতে হয়। অনেক সময় খাদ্যের দাম বৃদ্ধি করা হলে জনগণ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। আবার অনেক দেশে উৎসব-অনুষ্ঠানের পূর্বে খাদ্যের দাম কমিয়ে ফেলা হয়; যাতে করে সব শ্রেণীর মানুষ নির্দিষ্ট পণ্য ক্রয় করতে পারে। সেই দেশগুলোতে সব শ্রেণীর জনগণের খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে তার ঠিক উল্টোটি। অসাধু ব্যবসায়ী শ্রেণী অতিলাভের আশায় খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। ফলে বাজার হয়ে ওঠে অস্থির, আর সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার বাজারের ব্যাগ হয়ে পড়ে শূন্য। ধনীর পক্ষে বেশি দামে খাদ্য ক্রয় অসম্ভব কিছু না; কিন্তু মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর তো নাভিশ্বাস উঠে। খাদ্যের দাম হঠাৎ বাড়লে দৈনিক মজুরি ও মাসিক যে বেতন তা দিয়ে তখন পরিবার চালানোতে হিমশিম খেতে হয়। আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের মনোভাব এমন হয়েছে যে, যে যাই বলুক, যার যে অবস্থাই হোক না কেন, আমরা দাম বাড়িয়ে যাবই; ঠেলা বুঝবে জনগণ, তাতে আমাদের কি! আর একবার খাদ্যের দাম বাড়লে অতি সহজে দাম কমার নামগন্ধ আর থাকে না। চালের দাম বর্তমানে উর্ধমুখী। কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের হাওড়গুলোতে পাহাড়ী ঢল প্রবেশ করাতে ধানের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই সুযোগ নেবে অসাধু চালের ব্যবসায়ীরা তারা যে চালের দাম বাড়িয়ে দেবে- এটা একদম নিশ্চিত। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের উপর যেন কোন অসাধু ব্যবসায়ী মহল দাম বাড়াতে না পারে, সেদিকে সরকারের বিশেষ নজরদারি বাড়াতে হবে। বনানী, ঢাকা থেকে
×