ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠে নেমেছে টিসিবি

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৮ মে ২০১৭

মাঠে নেমেছে টিসিবি

ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমাতে অবশেষে মাঠে নেমেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, বিশেষ করে রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর এলেই তৎপর ও সক্রিয় হয়ে ওঠে একশ্রেণীর ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক, প্রস্তুতকারক, মিল মালিক, সর্বোপরি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটখাটো দোকানদার এমনকি ফুটপাথের পণ্য বিক্রেতারাও কিছু কম যায় না। প্রায় সবাই এ সময়ে দামে ও ওজনে ক্রেতাকে ঠকাতে সবিশেষ তৎপর হয়ে ওঠে। বাজারের এহেন অস্থির ও অসহনীয় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ কয়েক বছর ধরে মাঠে নামছে টিসিবি। সোমবার থেকে সংস্থাটি রাজধানীতে ৩০টি স্থানে এবং সারাদেশে দুই হাজার ৮১১টি পরিবেশকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। আপাতত তারা চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করছে ন্যায্যমূল্যে। এতে করে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য তেমন না কমলেও অন্তত কিছুসংখ্যক ক্রেতা, যাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সুফল পাচ্ছেন। তবে বাজার বিশেষজ্ঞের মতে, টিসিবির এই উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত করা আবশ্যক। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়াদুধ, ছোলা, লবণ ইত্যাদির দাম কমলেও দেশে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। এর একটি আপাত কারণ হতে পারে রমজান। এ নিয়ে নানা কারসাজি কোন কোন ব্যবসায়ী করে থাকে প্রতিবছরই। সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত টাকা। এর পাশাপাশি অস্থির হয়ে উঠেছে অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছেন। কখনও বলছেন, আকস্মিক মৌসুমী বৃষ্টিপাত, কখনও বা বৈশাখ মাস, কখনও বলছেন চাহিদা বেশি, যোগান কম ইত্যাদি। কেউ কেউ বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানির ওপর শুল্কারোপ করায় ব্যবসায়ীরা চাল আনছেন না। ফলে চাপ পড়েছে দেশীয় চালে। অথচ ধান-চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর এমনটি হওয়ার কথা নয়। সর্বশেষ, বাধ্য হয়ে সীমিত পরিমাণে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। প্রভাব পড়েছে শাক-সবজির বাজারেও। তবে সর্বাধিক উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দামে। গাবতলীসহ গরুরহাট এবং সীমান্তে গরু চোরাচালান নিয়ে প্রবল টানাপোড়েন চলতে থাকায় মাংসের বাজার বেশ চড়া। জনগণের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করা হোক। মাংসের দামের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে মাছ, ডিম ও দুধের বাজারেও। অথচ বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে এমনকি প্রতিবেশী দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বর্তমানে নিম্নমুখী। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় অবাধে সুযোগ নিচ্ছে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ বহুল উচ্চারিত এই সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে। অথচ বিদেশে উৎসব, পালা-পার্বণ উপলক্ষে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয় ভোগ্যপণ্যের দামে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, মেট্রো চেম্বারসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো খুবই শক্তিশালী এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও অস্বীকার করা যায় না। ব্যবসাবাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নৈতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
×