ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মণিরামপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিপাকে

খাল দখল করে ঘের

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৭ মে ২০১৭

খাল দখল করে ঘের

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ মনিরামপুরের ভবদহ পাড়ের বিল কেদারিয়া মৌজার প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নবুয়ার (নাগর) খাল এখন প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে মাছের ঘের তৈরি করেছেন। প্রায় ২২ দশমিক ৭০ একর খাল শ্রেণীর জমি ১৮ ভূমিদস্যু তথ্য গোপন করে সর্বশেষ মাঠ জরিপে ধানি শ্রেণী দেখিয়ে তা নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। ওই মৌজার ফাইনাল প্রিন্ট পর্চা বের হওয়ার পর রেকর্ড বুনিয়াদে জমির মালিকরা এখন আর কাউকে খালে মাছ ধরতে দিচ্ছেন না। এর ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী-যারা সারা বছর মাছ ওই খালে ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। অবিলম্বে খাল দখলমুক্ত করে এই খালে মাছ ধরার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা যায়, খালটি উপজেলার জোবারডাঙ্গী থেকে টেকা নদীর ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী হস্তান্তর যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও আরএস জরিপে শ্রেণী গোপন রেখে ধানি শ্রেণী দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। আরএস জরিপে শ্রেণী গোপন রেখে ওই দাগের মধ্যে শূন্য দশমিক ৯৬ একর জমি পার্শ্ববর্তী অভয়নগর থানার বারান্দি গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি রেকর্ড করেছেন। যার হাল দাগ ১৩৮৪ এবং খতিয়ান ৯৬। একই কায়দায় অভয়নগর উপজেলার বারান্দি গ্রামের অমরেন্দ্র নাথ ও ভবেন্দ্র নাথের নামে ৫ দশমিক ৩৩ একর রেকর্ড হয়েছে। যার আরএস খতিয়ান ২৪ এবং হাল দাগ ১৬৮৯ ও ১৬৯৫। অভয়নগর উপজেলার আকাম আলীর ছেলে আব্দুর রশিদ মোল্যা, ওমর আলী মোল্যা, আব্দুর জব্বার মোল্যা, রফিকুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমানের নামে ৫ দশমিক ৪৩ একর রেকর্ড হয়েছে। যার আরএস খতিয়ান ৮৯, ৯১ এবং হাল দাগ ১৬৮, ১৬৯১, ১৬৮৯ ও ১৬৯৩। এভাবে একই উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে খলিলুর রহমান ও সাহেব আলী, দিঘলিয়া গ্রামের জুলমত আলরি ছেলে জামেদ আলী, একই গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে মতিয়ার রহমান মোল্যা, হাশেম আলীর ছেলে ওহিদুজ্জামান মোল্যা, চাঁদ আলীর ছেলে খালেক সরদার, মোশারেফ হোসেন ও গুয়াখোলা গ্রামের আজহার সরদারের নামে বাকি জমি রেকর্ড হয়। চলতি বছর ফাইনাল প্রিন্ট পর্চা বের হলে এই রেকর্ডের বিষয়টি ধরা পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারিতে খাল দখলকারী ১৮ জনের বিরুদ্ধে এলএসটি (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আদালতে) মামলা দায়ের করা হয়। সরেজমিন ওই এলাকায় গেলে খাল পাটা-নেট দিয়ে ঘিরে মাছের ঘের করেছেন স্থানীয় কামরুজ্জামান, লাভলু সরদার, বাপ্পিসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ সময় ঘের মালিক লাভলু সরদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি সেটি খাল স্বীকার করে বলেন, কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি লিজ নিয়ে মাছের ঘের করেছেন। এ সময় উপস্থিত বালিদহ গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই খালে মাছ ধরে বিক্রি করে তার সংসার চলে। শুধু তিনি নন, ওই এলাকার আলী আহম্মেদ, আব্দুর রশিদ গাজী, সিরাজ সরদার ও রাজবংশী পাড়ার অমোল, নির্মল, বিনোদসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এখন খালে মাছ ধরতে কাউকে নামতে দিচ্ছে না ঘের মালিকরা। তাদের দাবি অচিরেই খাল দখলমুক্ত করে তাদের মাছ ধরতে দেয়া হোক। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আমিন উদ্দীন বলেন, বোরো মৌসুমে জমিতে জমে থাকা পানি সেচ দিয়ে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। কিন্তু ঘের মালিকরা এখন সেচ কাজ করতে দিচ্ছে না। মুঠোফোনে জানতে চাইলে ঘের মালিক কামরুজ্জামান বলেন, নবুয়ার (নাগর) বলে কোন খাল নেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুস সা’দত জানান, নাগর খালের অধিকাংশই শ্রেণী গোপন রেখে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল দখল করে মাছের ঘের তৈরি করেছেন। মুঠোফোনে জানতে চাইলে পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর গোস্বামী জানান, ওই খালের মুখে একটি স্লুইস গেট রয়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরে বিল কেদেরিয়ার পানি নিষ্কাশনে খাল পুনঃখননের জন্য একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে খাল দখলমুক্তের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশও দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ অতুল ম-ল জানান, অবৈধ দখলমুক্ত করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে খাল দখলকারী একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
×