ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেনীপুরের জঙ্গী আস্তানায় যাতায়াত করত বোমা বিশেষজ্ঞ সোহেল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৭ মে ২০১৭

বেনীপুরের জঙ্গী আস্তানায় যাতায়াত করত বোমা বিশেষজ্ঞ সোহেল

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরের জঙ্গী আস্তানায় যাতায়াত ছিল এমন হোতার নাম পেয়েছে পুলিশ। তার নাম সোহেল মাহফুজ। নব্য জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গী সোহেল মাহফুজকে (৩০) বেনীপুরের মামলায় প্রধান আসামিও করা হয়েছে। এখন তার খোঁজে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বেনীপুরের ওই জঙ্গী আস্তানায় এই সোহেলের যাতায়াত ছিল বলেও প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। ওই বাড়িটি তৈরির পর গত দুই মাসে সোহেল অন্তত দুইবার সেখানে গেছে বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, বেনীপুরের আস্তানা থেকে উদ্ধার শক্তিশালী বোমাগুলোও সোহেলের মাহফুজের বানানো বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নব্য জেএমবির এই শীর্ষ নেতার সাংগঠনিক নাম সোহেল হলেও তার আসল নাম আবদুস সবুর খান। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর গ্রামে তার বাড়ি। দীর্ঘদিন ধরেই সোহেল মাহফুজের নাগাল পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে গোদাগাড়ীর দুর্গম বেনীপুর গ্রামে সোহেলের যাতায়াত ছিল বলে বেনীপুরের ওই বাড়ি থেকে আত্মসমর্পণের পর জঙ্গী সুমাইয়া খাতুন (২৫) পুলিশকে এমন তথ্যই জানিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। সুমাইয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বেনীপুরের আস্তানা থেকে উদ্ধার ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বোমাগুলো বানিয়েছিল সোহেল মাহফুজ। দুই মাস আগে ফসলি মাঠের ভেতর বানানো তাদের নতুন বাড়িতেই সোহেল মাহফুজ দুইবার গেছে। ওই আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত আল-আমিন (২১) ও আশরাফুলকে (২৫) বোমা বানানো ও অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিত সোহেল। গোদাগাড়ী থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বেনীপুরের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের পর দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সোহেলকে। সোহেল গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলার সময়ও গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। ২০১৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে আদালতে নেয়ার পথে তিন জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়ার মূল পরিকল্পনাকারীই এই সোহেল। রাজশাহী জেলা পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের আমলে জঙ্গীবাদে জড়ায় সোহেল। পরবর্তীকালে জেএমবির শীর্ষ ৬ জঙ্গীর ফাঁসি কার্যকর হলে সংগঠনটির আমির হন সাইদুর রহমান। ওইসময় জেএমবির শূরা সদস্যপদ পায় সোহেল। ২০১০ সালের দিকে সাইদুর রহমান গ্রেফতার হয়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থেকে জেএমবিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল সোহেল। নারায়ণগঞ্জে নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে বছর দুয়েক আগে তার যোগাযোগ হয়। এরপর সে নব্য জেএমবিতে যুক্ত হয়। গত বৃহস্পতিবার জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে গোদাগাড়ীর বেনীপুর গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী সাজ্জাদ আলীর একতলা টিনশেড বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। এরপর অভিযান শুরু হলে জঙ্গী হামলায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী নিহত ও পুলিশের চার সদস্য আহত হন। এরপর আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে মারা যান বাড়ির মালিক সাজ্জাদ আলী (৫০), তার স্ত্রী বেলী আক্তার (৪৫), তাদের ছেলে আল-আমিন (২১), মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭) এবং বহিরাগত জঙ্গী আশরাফুল ইসলাম (২৫)। ওই বাড়িতে সেদিন নিহত সাজ্জাদ আলীর বড় ছেলে সোয়েব আলী (২৩) ছিল না। পুলিশ সূত্র জানায়, আল-আমিন ও আশরাফুলের পাশাপাশি ওই বাড়িতে সোহেল মাহফুজের কাছ থেকে সোয়েবও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিত। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে অভিযানের পর ওই বাড়ি থেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করা সাজ্জাদের বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুনকে গত রবিবার ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সুমাইয়াকে বিভিন্ন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানায় পুলিশ। এরই মধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে সুমাইয়া।
×