ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুরের সীমানা পেরুনো রাতে মুগ্ধতা ছড়ালেন রিচার্ড মার্কস

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৭ মে ২০১৭

সুরের সীমানা পেরুনো রাতে মুগ্ধতা ছড়ালেন রিচার্ড মার্কস

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সুরের সীমানা পেরুনো রাতে মুগ্ধতা ছড়ালেন রিচার্ড মার্কস। বিশ্ব সঙ্গীতের তুমুল জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী রাঙ্গিয়ে দিলেন রাজধানীর সুররসিকদের। মঙ্গলবার রাতে বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘রিচার্ড মার্কস লাইভ ইন ঢাকা’ শীর্ষক কনসার্টটির আয়োজন করে এন্টারটেইমেন্ট কোম্পানি ক্রেইন্স। মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ছিল দর্শক-শ্রোতাদের লম্বা লাইন। কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে সবাই ৭টার মধ্যেই প্রবেশ করলেন হল অব ফেমে। চারদিকে তখন ‘রিচার্ড মার্কস’ চিৎকার। এই দৃশ্যের ঠিক আধঘণ্টা পরে মঞ্চে এলেন তিনি। তুমুল করতালিতে মঞ্চে প্রবেশ করলেন রিচার্ড মার্কস। হাতে তুলে নিলেন একুস্টিক গিটার। তাতে ঝংকার তুলে গলা ছাড়লেন বিখ্যাত গান গেয়ে ‘এন্ডলেস সামার নাইটস’। রিচার্ড মার্কসের গানের ভক্তদের জন্য নেমে আসে নস্টালজিক এক মুহূর্ত। পুরো হল গাইলো তার সঙ্গে। কনাসার্টের দ্বিতীয় গান ছিল ‘টেক দিস হার্ট। তারপর গাইলেন আরেক বিখ্যাত গান ‘স্যাটিসফাইড’। গানের মাঝখানে গিটারে ঝংকার তুলে দর্শকদেরও গাওয়ালেন। গান শেষ হতেই বললেন, প্রথমবার বাংলাদেশে এলাম। আমি ভীষণ আনন্দিত। যার যত জোরে খুশি গাও, নাচ। সবাই টাকা খরচ করেছ, আনন্দ নিয়ে যাও। এরপর রিচার্ড মার্কস তার মোবাইলে দর্শকদের সঙ্গে নিয়ে কয়েক দফা সেলফি তুললেন। তারপর জটপট আরেকটা গান ‘কিপ কামিং ব্যাক টু ইউ’। এরপর ছিল এই কনসার্টের অন্যতম চমক। রিচার্ড মার্কস কনসার্টে আমন্ত্রণ জানালেন বাংলাদেশের মেটাল মেইজ ব্যান্ডের গিটারিস্ট কাজী ফায়সাল আহমেদকে। তাকে সঙ্গে নিয়ে পরিবেশন করলেন তার বিখ্যাত গান ‘হ্যাজার্ড’। ফায়সালের গিটার বাজানো ভূয়সী প্রশংসা করে রিচার্ড মার্কস বললেন, ফায়সালের ভিডিও প্রথম দেখি ইউটিউবে। ও আমার চাইতেও অনেক ভাল গিটারিস্ট। গানের ফাঁকে ফাঁকে রিচার্ড মার্কস বার বার মেতে উঠছিলেন তার ব্যক্তি ও সঙ্গীত জীবনের নানা গল্প নিয়ে। বললেন, আমার তিন ছেলে ব্রান্ডন, লুকাস ও জেসে। ওরাও গান পাগল। এই কথা বলতে বলতেই পর্দায় ভেসে এলো তার তিন পুত্রের ছবি। ভিডিও লাইভে তারা বাবার সঙ্গে যোগ দিয়ে পরিবেশন করলেন ‘অনলি ইউ ক্যান সেভ মি’ গানটি। এবার রিচার্ড মার্কস একুস্টিক গিটার ছেড়ে বসলেন পিয়ানোতে। আহা কি যে মনকাড়া সে সুর। বাজাতে বাজাতেই গলায় তুলে নিলেন ‘ড্যান্স উইথ মাই ফাদার এগেইন’ গানটি। তারপর আবার গল্প। একবার এক অসম্ভব রূপবতী নারী তার স্টুডিওতে এসে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘তুমি রিচার্ড মার্কস?। তিনি হ্যাঁ বলার পর ঐ রূপবতী মেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উত্তর দিল ‘আমার মা তোমার প্রেমে পড়েছে।’ এই কথা শুনে রিচার্ড কিছুটা আহতই হলেন। এমনি নানা গল্প শোনালেন তিনি। এরপর পর একে একে আবার গাইলেন ‘দিস আই প্রমেস ইউ’, ‘নাউ এন্ড ফরএভার।’ এভাবেই একটু একটু করেই পেরিয়ে গেল দেড়টি ঘণ্টা। এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পিয়ানোতে বেজে উঠল সেই চেনা সুর। পুরো হলো অব ফেম রিচার্ড মার্কসের সঙ্গে পরিবেশেন করল ‘রাইট হেয়ার ওয়েটিং’ গানটি। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল মায়াবী এক পরিবেশ। তার মধ্য দিয়েই সুরের রেশ থাকতে থাকতেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেন রিচার্ড মার্কস। শেষ পর্যন্ত সুরের সীমানা পেরুনো রাতটিতে ঢাকার শ্রোতাদের জন্য হয়ে রইলো স্মরণীয়। শিল্পকলায় ভিন্ন স্বাদের দুই নাটক মঞ্চায়ন ॥ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির দুই মঞ্চে মঞ্চস্থ হলো দুটি নাটক। মিলনায়তন পরিপূর্ণ না হলে নিয়মিত নাট্যপ্রেমীদের সমাগম ঘটেছিল ভিন্ন স্বাদের দুই গল্পের নাটকটি দেখতে। তাদের কেউ বা দেখেছেন নতুন নাট্যদল থিয়েটার ’৫২-এর প্রথম প্রযোজনা ‘নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে’। বাকিরা উপভোগ করেছেন প্রাচ্যনাটের নাটক ‘বন মানুষ’। প্রথমটি প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ হয় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে। দ্বিতীয় মঞ্চস্থ হয় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। ‘নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে’ নাটকটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে বাংলার লোকগাঁথা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মিথস্ক্রিয়ায়। নাটকটি রচনা করেছেন বদরুজ্জামান আলমগীর। নির্দেশনা দিয়েছেন জয়িতা মহলানবীশ। একটি যুদ্ধশিশুকে কেন্দ্র করে হলে এগিয়ে চলা প্রযোজনাটির প্রতিটি চরিত্রে উঠে এসেছে বাংলার সাধারণ গ্রামীণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- নূরে খোদা মাসুক সিদ্দিক, রবিন বসাক, সঙ্গীতা চৌধুরী, শিবানী কর্মকার শিলু, রতন হক, নজরুল ইসলাম, সন্ধ্যা হক, অনার্য অনিবার্ন, মিজানুর রহমান, আদিব মজলিশ খান, নুসরাত তুবা, হুমায়রা শারীকা, আসাদুজ্জামান সরকার রিপন, রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ। নাটকের সেট ও লাইট ডিজাইন করেছেন পলাশ হেনড্রি সেন। প্রপস ডিজাইন করেছেন পলাশ হেনড্রি সেন ও রবিন বসাক। এ বি এস জেমের সঙ্গীত পরিচালনায় নাটকটির গানে কণ্ঠ দিয়েছেন চেতনা রহমান ভাষা, গোপী দেবনাথ, সুরভী রায়, নজরুল ইসলাম, রতন হক ও জয়িতা মহলানবীশ। গানে সুর দিয়েছেন রতন হক। পাহাড়ী সুর, কীর্তনের সুর ও বিয়ের গীত সংগৃহীত। অকাল প্রয়াত প্রাচ্যনাটের সদস্য রিঙ্কন সিকদারের ‘যাইবার আগে যাও বলে যাও’ গানটি ব্যবহৃত হয়েছে এ নাটকে। মাঝে এক বছর বিরতি দিয়ে এদিন নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় প্রাচ্যনাটের প্রযোজনা বন মানুষ। ইউনি ও নীলের রচনা থেকে নির্মিত দলের ২৭তম প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন বাকার বকুল। কোরিওগ্রাফি করেছেন পারভিন সুলতানা কলি। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, জাহাজের খোলের ভেতর দাঁড়িয়ে ইঞ্জিনের চুল্লিতে কয়লা ভরে কয়েকজন শ্রমিক। তাদেরই অন্যতম হচ্ছে ইয়াংক। দেখতে প্রয় বনমানুষের মতো কালিকুলি মাখা অবস্থায় তাকে আরও বন্য মনে হয়। ওই জাহাজেরই আরেক যাত্রী জাহাজের পরিচালকম-লীর সদস্য এক পুঁজিপতির আদুরে মেয়ে মিলড্রেড ডগলাস। জাহাজে ঘুরতে ঘুরতে মিলড্রেড ডগলাসের সঙ্গে হয় ইয়াংকের। ইয়াংককে দেখে ভয়ে চিৎকার মিলড্রেড। ইয়াংক যখন বুঝতে পারে যে তাকে উপলক্ষ করেই এই চিৎকার, তখন তীব্র একটা ঘৃণাবোধ জন্ম নেয় তার মধ্যে। ডগলাসকে কেন্দ্র করেই সারা দুনিয়ায় পুঁজিপতিদের ঘৃণা করতে থাকে সে। ভাঙতে চায় পুঁজিপতিদের স্বর্গতুল্য প্রাসাদ। জাহাজ বন্দরে ভিড়লে ইয়াংক শহরে ঘুরতে বের হয় এক সঙ্গীকে নিয়ে। শহরের জৌলুস ও উচ্চবিত্তের জাঁকজমক তাকে আরও ক্ষিপ্ত করে তোলে। নানা রকম পাগলামি প্রকাশ পায় তার মধ্যে। অবশেষে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় জেলখানায়। জেল থেকে পালিয়ে সে সরাসরি চিড়িয়াখানায় বনমানুষের খাঁচার কাছে গিয়ে জন্তুটাকে ডাক দেয়। তার নিজের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য। অবশেষে বনমানুষের আক্রমণে নিহত হয় ইয়াংক। আলোঘরের ভ্রাম্যমাণ বইমেলা আলোঘর প্রকাশনার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ভ্রাম্যমাণ বইমেলা। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পানাম নগরীর সোনারগাঁ জি আর ই মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে দিনব্যাপী এই বইমেলার আয়োজন করা হয়। ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ মোঃ সুলতান মিয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গবর্নিং বডির সদস্য মোহাম্মদ আলী, বেসরকারী সংস্থা দিশার প্রধান নির্বাহী ও আলোঘর প্রকাশনার প্রকাশক মোঃ সহিদ উল্লাহ, দিশার উপদেষ্টা সালিমা নাজনীন বীথিসহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। একদিনের এই মেলায় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ আগ্রহ সহকারে বই সংগ্রহ করেছেন।
×