ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন

প্রধানমন্ত্রী বিরোধ মিটিয়ে দিলেন-ঢাবিতে নীল দল এখন ঐক্যবদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৭ মে ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী বিরোধ মিটিয়ে দিলেন-ঢাবিতে নীল দল এখন ঐক্যবদ্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-বিভেদ মিটিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজেদের প্যানেল বাতিল হওয়ায় আদালতে যাওয়ার হুমকি দিলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মূল নীল দলের প্রার্থীদের সমর্থন দিতে রাজি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী শিক্ষক নেতারা। তারা এখন ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলের প্যানেলকে বিজয়ী করতেও অঙ্গীকার করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর বিদ্রোহী নীল প্যানেল প্রদানের অন্যতম শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন নিজেদের মধ্যে আর কোন দ্বন্দ্ব বা কলহে লিপ্ত না হতে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রতি সম্মান রেখে আমরা আমাদের প্যানেল বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণের পথে যাব না। বরং প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নীল প্যানেলকে সমর্থন করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিদ্রোহী প্যানেলের প্রধান ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের প্যানেল বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যেতাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁর নির্দেশে আমরা দুই প্যানেল ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে কাজ করব। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম বিধি অনুযায়ীই চলবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অন্য প্যানেলের (বিদ্রোহী) শিক্ষক নেতাদের বলেছেন, আপনারা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বঙ্গবন্ধু যেমন শিক্ষকদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও আমাদের সে স্বাধীনতা দিয়েছেন। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে আহ্বায়ক অধ্যাপক নাজমা শাহীনের জমা দেয়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল প্যানেলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নীল দল নামেই আলাদা প্যানেল জমা দিয়েছিলেন একই দল সমর্থিত ড. মুহাম্মদ সামাদরা, যার নেতৃত্বে ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি এএসএম মাকসুদ কামাল। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সোমবার তাদের বিদ্রোহী প্যানেলটি বাতিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিদ্রোহী প্যানেলের শিক্ষকরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপরই নীল দলের দু’পক্ষের নেতাদেরই ডাক পড়ে গণভবনে। দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনে দু’পক্ষের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে মাকসুদ কামাল ও ড. মুহাম্মদ সামাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন, সাদেকা হালিম, একেএম গোলাম রব্বানী, জিনাত হুদা, এমরান কবীর চৌধুরী, জেডএম পারভেজ সাজ্জাদ, মোহাম্মদ হুমায়ুনসহ ১৪ শিক্ষক নেতা। শিক্ষক নেতারা ছাড়াও বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে আহ্বায়ক মনোনীত মূল নীল প্যানেলকে মেনে নিলেও নিজেদের প্যানেল বাতিলের জন্য উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিককে দায়ী করেন বিদ্রোহী প্যানেলের প্রার্থীরা। এ সময় উপাচার্য আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের কোন্দল-দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলকে বিজয়ী করার জন্য শিক্ষক নেতাদের নির্দেশ দেন। দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে নীল দলের মধ্যে সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝি অবসানের কথা জানান। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উনাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তারা বৈঠকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একটি সুখবর। আগামী ২২ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সিনেটে ৩৫টি পদের নির্বাচনে এবার প্রার্থী বাছাইয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলে স্পষ্ট বিভক্তি দেখা দেয়। গত ১১ মে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাজমা শাহীন একটি প্যানেল জমা দেন। কিন্তু প্যানেলটি নিজেদের মনমতো না হওয়ায় একই দিন আরেকটি প্যানেল জমা পড়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে। এ নিয়ে দুই শিবিরে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব-কোন্দলের সৃষ্টি হয়। তবে বাছাইয়ে নীল দলের বিদ্রোহী প্যানেলটি বাতিল হয়ে যায়। দুই প্যানেল একই রঙের কাগজে লিফলেট বিতরণ করায় তৈরি হওয়া বিভ্রান্তির কারণেই নীল দলের বিদ্রোহী প্যানেলের সদস্যদের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন। তিনি বলেন, নীল দলের আহ্বায়ক কমিটি থেকে নীল কাগজ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেনÑ এমন অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এসব বিষয় বিবেচনা নিয়ে মর্যাদা ক্ষুণœ ও শিক্ষার পরিবেশ যাতে বিঘিœত না হয় সেজন্য সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে। আগামী ২২ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের ঐক্যবদ্ধ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। নীল দলে বিভক্তি ও দুটি প্যানেল জমা দেয়ায় সাদা দলের মধ্যে কিছুটা স্বস্তিভাব দেখা গেলেও প্রধানমন্ত্রী দুটি প্যানেলকে ঐক্যবদ্ধ করে দেয়ায় তাদের মুখের সে হাসি মঙ্গলবার অনেকটাই মিলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন তরুণ শিক্ষক ভোটার। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের সাদা প্যানেলের ৩৫টি পদের সবকটিতে প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান সরে দাঁড়ানোয় এ প্যানেলে এখন প্রার্থী ৩৪ জন। নীল প্যানেলে এখন প্রার্থীরা হলেনÑ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ রহমত উল্লাহ, অধ্যাপক আবু মোঃ শফিউল আলম ভূঁইয়া, আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, আবুল মনসুর আহাম্মাদ, আ ক ম জামাল উদ্দীন, ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ, এসএম আব্দুর রহমান, কাজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী, তৌহিদা রশীদ, দেলোয়ার হোসাইন, বায়তুল্লাহ কাদেরী, মুবিনা খন্দকার, মোঃ আফতাব আলী শেখ, মোঃ আফতাব উদ্দিন, মোঃ আব্দুল আজিজ, মোঃ আব্দুস ছামাদ, মোঃ জিয়াউর রহমান, মোঃ ফজলুর রহমান, মোঃ মজিবুর রহমান, মোহাম্মাদ আলী আক্কাস, শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, সুপ্রিয়া সাহা, সুব্রত কুমার আদিত্য, হাসিবুর রশীদ, সহযোগী অধ্যাপক এসএম রেজাউল করিম, কাজী হানিয়াম মারিয়া, চন্দ্রনাথ পোদ্দার, জান্নাতুল ফেরদৌস, পাপিয়া হক, লাফিফা জামাল, সহকারী অধ্যাপক নুসরাত জাহান ও সায়মা খানম। সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেনÑ অধ্যাপক মোঃ আখতার হোসেন খান, আব্দুস সালাম, এটিএম জাফরুল আযম, এএফএম মোস্তাফিজুর রহমান, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, এবিএম শহিদুল ইসলাম, এসএম আরিফ মাহমুদ, গোলাম রব্বানী, দিলীপ কুমার বড়ুয়া, নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, মামুন আহমেদ, মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছনী, মোহাম্মদ এমরান কাইয়ুম, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, মোঃ আবদুল করিম, মোঃ আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, মোঃ নুরুল আমিন, মোঃ নুরুল ইসলাম, মোঃ মাহব্বত আলী, মোঃ মাহফুজুল হক, মোঃ মোশারফ হোসাইন ভূঁইয়া, মোঃ মোর্শেদ হাসান খান, মোঃ লুৎফর রহমান, মোঃ শাহ এমরান, মোঃ হাসানুজ্জামান, মোঃ হুমায়ুন কবীর, লায়লা নূর ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ দাউদ খান, মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী, মোঃ আব্দুস সালাম আকান্দ, মোঃ ইসরাফিল প্রাং, মোঃ মহিউদ্দিন এবং মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
×