ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুর ও বগুড়ায় তিনজনের মৃত্যু

রাজধানীতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি উপড়ে পড়েছে লাইটপোস্ট, দু’শতাধিক গাছ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৭ মে ২০১৭

রাজধানীতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি উপড়ে পড়েছে লাইটপোস্ট, দু’শতাধিক গাছ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ দেশের অনেক জেলায় সোমবার রাতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে ঝড়ের পাশাপাশি ছিল শিলাবৃষ্টির তা-ব। ঝড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে মেঘনায় নৌকা ডুবিতে দু’জন এবং বগুড়ায় বিলবোর্ডে চাপা পড়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এই দু’জেলায় আহত হয়েছে ১৬ জন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাছপালা, লাইট পোস্টের পিলার উপড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঝড়ো হাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও রমনা পার্কসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উপড়ে ও ভেঙ্গে পড়ে দু’শতাধিক গাছ। নগরীর বিভিন্ন সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে যান চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়। অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উড়ে যায় ফুটপাথের অনেক দোকানপাট। পথচারীদের দুর্ভোগে ফেলে দেয় মেঘের বিকট গর্জন ও বিদ্যুত চমকানি। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। বৃষ্টিতে বিভিন্ন সড়ক ও নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। কক্সবাজারের সোনাদিয়া এলাকায় একটি মাছ ধরা নৌকাডুবির ঘটনায় ৯ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে গভীর সমুদ্রে টহলরত নৌবাহিনী জাহাজ ‘অতন্দ্র’। সারাদিন প্রচ- গরম থাকলেও সোমবার রাত প্রায় সোয়া ১১টার পর থেকে প্রবল ঝড়ো হাওয়াসহ মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। রাত ৯টা থেকেই বাতাসের তা-বের সঙ্গে নেমে আসতে থাকে বৃষ্টি। ১০টার পর তাতে যোগ হয় বজ্রপাত। আর তাতে ঘর মুখো মানুষ আটকে পড়ে ফুটপাথে দোকানের কার্নিশের নিচে। তবে ঝড়ের হাত থেকে শেষ রক্ষা পায়নি ফুটপাথের অনেক ভাসমান দোকান। আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিদ্যুত চমকানি। রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর, মগবাজার, মিরপুর, বারিধারা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি হয়। এ কারণে নগরীর রাতের শ্রমজীবীদের পাশাপাশি ছিন্নমূল মানুষকে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে শিলাবৃষ্টিতে আহত হন। দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীবাহী বাহনের অপেক্ষা করতে থাকেন লোকজন। রমনা পার্কেরই শতাধিক গাছ ভেঙ্গে পড়ে। এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ঝড়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে কক্সবাজারের সোনাদিয়ার নিকট মঙ্গলবার ভোরে একটি মাছ ধরা নৌকা ডুবে যায়। এ সময় গভীর সমুদ্রে টহলরত নৌবাহিনী জাহাজ ‘অতন্দ্র’ খবর পেয়ে নৌকাটিকে উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। নৌবাহিনী জাহাজ ও স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডুবে যাওয়া নৌকা হতে ৯ জেলেকে উদ্ধার করা হয়। নৌকাটিতে মোট ১১ জেলে ছিল। পরবর্তীতে নৌবাহিনী জাহাজ অতন্দ্র ডুবে যাওয়া নৌকাটিকে শনাক্ত করে গভীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে তুলে আনে। পরে নৌকাটিকে টেনে পেকুয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া নৌবাহিনী জাহাজ অদম্য ও অপরাজেয় ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিখোঁজ অবশিষ্ট দুই জেলেকে উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা ডুবিতে দুই জেলে নিহত হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে এক জেলে। নিহতরা হলেনÑ রামগতির বালুর চর গ্রামের মোঃ হারুনের ছেলে বাগন আলী (১৫) ও মৃত আবদুস সালামের ছেলে নূর নবী (৪২)। নিখোঁজ রয়েছেন চর ডাক্তার গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩২)। মঙ্গলবার দুপুরে দুর্গম চরআবদুল্লাহ এলাকার মেঘনা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার ভোরে ঝড়ের কবলে পড়ে তারা নিখোঁজ হন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার গভীর রাতে ওই তিনজনসহ চার জেলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যায়। মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। এতে তিন জেলে নিখোঁজ হয়। অপর জেলেকে আরেক নৌকার মাঝি মাল্লারা উদ্ধার করে। পরে মঙ্গলবার দুপুরে মেঘনায় দু’জনের লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। অপর জেলে হেলাল এখনও নিখোঁজ রয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, মাত্র তিন মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ে বরিশালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার রাতের ঝড়ে গাছপালা, কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে রাত থেকেই বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিদ্যুত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঝড়ে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় বাড়ির সীমানা প্রাচীরের দেয়াল ধসে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়ে। স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, সোমবার রাতে বগুড়ায় প্রচ- বেগে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বিল বোর্ডের নিচে চাপা পড়ে আব্দুস সাত্তার (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মুদি দোকানি নিহত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। এর মধ্যে শেরপুর ধুনট সড়কের হুসনাবাদ এলাকায় ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার ওপর গাছ ভেঙ্গে পড়লে ৫ যাত্রী আহত হয়। ঝড়ে গাছপালা ভেঙ্গে পড়াসহ কাঁচা বাড়ি ঘরে ধস ও টিনের চাল উড়ে যায়। এছাড়া বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতিসহ কয়েকটি এলাকায় গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির ক্ষতি হয়। রাত সোয়া আটটার দিকে প্রথম দফা আঘাত হানে। প্রায় তিন মিনিট ব্যাপী এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৪ কিলোমিটর। এরপর রাত ১০টার দিকে আরও এক দফা ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের সময় বগুড়া, শিবগঞ্জ ও শাজাহানপুর, শেরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। বিদ্যুতের খুঁটি ও বহু গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে ও বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ায় রাতে বেশির ভাগ এলাকায় দীর্ঘ সময় বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে থাকে। পুুলিশ জানায়, শহরের চারমাথা আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় ঝড়ের সময় একটি বড় বিলবোর্ড গোড়াসহ উপড়ে গিয়ে এক মুদি দোকানের ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই দোকানির মৃত্যু হয়। তার বাড়ি শহরের ছোট কুমিড়া এলাকায়। ঝড়ের সময় শিলাবৃষ্টি হওয়ায় বেশকিছু এলাকায় বোরো ধানের জমির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে ধান পাকা হওয়ায় তেমন ক্ষতি হয়নি শুধু শাকসবজি ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
×