ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন বলে ওয়াশিংটন পোস্টের খবর

অভিযোগের তীর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৭ মে ২০১৭

অভিযোগের তীর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে

গেল সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রকাশিত অতি গোপনীয় তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খুবই সংবেদনশীল এ তথ্য মিত্র দেশ থেকে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সমঝোতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছিল, মিত্ররা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতেও রাজি হয়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যেও এ ধরনের তথ্য নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। যা রাশিয়াকে জানাতেও যুক্তরাষ্ট্রকে সম্মতি পর্যন্ত দেয়নি মিত্ররাষ্ট্র। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসি অনলাইনের। এ তথ্য ফাঁস আইএসের ভিতরের যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সূত্রকে ব্যাপক ঝুঁকিতে ঠেলে দিবে। তবে হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা এমনকিছু ঘটার কথা অস্বীকার করলেও রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এ ঘটনার ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। কর্মকর্তারা বলেন, ট্রাম্পের কর্মকা-ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আইএসের ভিতরে অনুপ্রবেশ আছে, এমন একটি মিত্রদেশের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক ঝুঁকিতে ফেলে দিবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেন। এছাড়া তারা সিআইএ ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে বিষয়টি অবগত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, তথ্যটি ছিল সাঙ্কেতিক ভাষায়। এতে ব্যবহৃত পরিভাষাটি এমন ছিল, যা আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কঠোর গোপনীয় পর্যায়ে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, মিত্রদেশগুলোকে আমরা যতটুকু তথ্য দেই, তার চেয়ে বেশি রুশ রাষ্ট্রদূতকে বলে দিয়েছেন ট্রাম্প । ট্রাম্প যখন রাশিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় ব্যস্ত, তখন তার বিরুদ্ধে নতুন করে এ তথ্য ফাঁসের অভিযোগ আসে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারশিবির ও মস্কোর যোগসাজশের সম্ভাব্যতা নিয়ে তদন্তের মাঝে এসে এফবিআইর পরিচালক জেমস কোমিকে গেল সপ্তাহে বরখাস্ত করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি স্বীকার করেন, রুশ যোগসাজশের অভিযোগ মাথায় রেখেই তিনি কোমিকে বরখাস্ত করেছেন। সমালোচকরা যেটাকে তদন্ত বাঁধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। কোমিকে বরখাস্তের একদিন পর, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াককে ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্প। সম্প্রতি রুশ যোগসাজশ বিতর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই কিসলিয়াক। বৈঠকে ট্রাম্প বিমানে ল্যাপটপ ব্যবহার করে আইএসের সন্ত্রাসী হামলার হুমকি সম্পর্কিত একটি স্ক্রিপ্ট বের করে দু’জনকে বিস্তারিত পড়ে শোনাতে শুরু করেন। সরকারের যে কারও জন্যেই বৈরী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা পুরোপুরি অবৈধ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সরকারের গোপনীয়তা প্রকাশের সবচেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ ট্রাম্প। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে তিনি আইন ভেঙ্গেছেন এমন অভিযোগ করার সুযোগ নেই। বৈঠকে উপস্থিত হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প কেবল সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে অংশ নেয়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ. আর ম্যাকমাস্টার বলেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কেবল দুই দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি প্রসঙ্গে পর্যালোচনা করা হয়েছে। যার মধ্যে বৈদ্যুতিক ডিভাইস ব্যবহার করে বিমানে হামলার হুমকিও ছিল। তিনি বলেন, সেখানে গোয়েন্দা সূত্র বা পদ্ধতি কিংবা সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনার সময় ছিল না। এমন কিছু ফাঁস করাও হয়নি, যা সাধারণ মানুষ এখনও জানেনা। ম্যাকমাস্টার সোমবারেও যখন হোয়াইট হাউসে আসলে একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। এ সংক্রান্ত ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনকে তিনি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার কোন সুযোগ দেননি। হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা তাদের বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলেন, ট্রাম্প সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র কিংবা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেননি। তবে সিআইএ কোন মন্তব্য করেনি। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাও এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। সংবেদনশীল তথ্য গোপন রাখতে ট্রাম্পের ভূমিকা ও তার সম্ভাব্য পরিণতি তিনি যেভাবে সামলেছেন তাতে কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইসলামিক স্টেটের ভেতরকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ গোয়েন্দা সূত্র প্রকাশে ভবিষ্যত হুমকি শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো বাধার মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন কর্মকর্তারা। হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠ সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, এটা সার্বিকভাবে হতাশাজনক। ট্রাম্পকে বেশ অপরিণামদর্শী মনে হচ্ছে। তিনি যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন, তার গুরুত্ব তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন না, বিশেষভাবে যখন গোয়েন্দা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। রুশ যোগসাজশের যে সমস্যা তিনি মোকাবেলা করছেন, তাতে সবকিছু সন্দেহে ভরে গেছে। লাভরভের সঙ্গে বৈঠকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে নিজের গভীর জ্ঞান নিয়ে দম্ভ করেছেন বলে মনে হচ্ছে ট্রাম্প।
×