ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে ফেরার তিন যুগ

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৭ মে ২০১৭

ঘরে ফেরার তিন যুগ

১৯৮১ থেকে ২০১৭। আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন। ১৯৮১ সালের এই দিনে নির্বাসিতপ্রায় দিনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। দেখতে দেখতে ৩৬ বছর পার হয়ে গেল। এর মধ্যে কত পরিবর্তন! যে মন্ত্রে ১৯৭১ সালে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একটি জাতি, সেই পথ থেকে জাতিকে ভিন্ন পথে চালিত করার ষড়যন্ত্র ছিল স্বাধীনতার পর থেকেই। ১৯৭৫ সালে তা পায় পূর্ণতা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সপরিবারে প্রাণ হারালেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন সংবিধান অবরুদ্ধ। সামরিকতন্ত্রের নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় মানুষ কথা বলার অধিকার হারিয়েছে। রাজনীতি তখন শাসকের অনুগ্রহের বিষয়। তেমনি এক শ্বাসরুদ্ধকর দিনে তাঁর ফিরে আসা দেশের মাটিতে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে। ফিরেছিলেন ঠিকই; কিন্তু সেই ফিরে আসাটা সহজ ছিল না। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করার সাহস অর্জন করতে হয়েছিল তাঁকে। অবশ্য এই সাহস তাঁকে জুগিয়েছিল এ দেশেরই মানুষ। দেশে ফিরে আসার আগেই তাঁর কাঁধে বর্তেছিল জাতির জনকের আদর্শে লালিত দল আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর দিশাহারা জাতি যেন নতুন পথের সন্ধান পেয়েছিল তাঁর ফিরে আসার ভেতর দিয়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে চেপে বসা সামরিকতন্ত্র প্রবল ঝাঁকুনি খেয়েছিল ১৯৮১ সালের ১৭ মে। মানুষের ভালবাসার গভীরতা দেখে সেদিন তারা ভীত হয়েছিল। সেদিন থেকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের মানুষ। নতুন পথের সন্ধান পেয়েছিল। মানুষের হাত ধরে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে সেদিন থেকেই ব্রতী শেখ হাসিনা। মানুষের মনে নতুন স্বপ্ন বুনে দিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। যে ব্রত নিয়েছিলেন সে সাধনার পথ থেকে কোনদিন বিচ্যুত হননি। দৃঢ়চিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পথ হেঁটেছেন দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। দীর্ঘ তিন যুগের পথ পরিক্রমায় অনেক আঘাত সইতে হয়েছে তাঁকে। মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু সংকল্পে অটুট থেকেছেন তিনি। পায়ে পায়ে পাথর সরিয়ে মানুষের যাত্রাপথ মসৃণ করার যে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তা পালন করে চলেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজকের বাংলাদেশের যে অবস্থান তার একক কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। সংকল্পের দৃঢ়তায় তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। গণতন্ত্র নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে তিনি অর্জন করেছেন মানুষের ভালবাসা ও বিশ্বাস। সর্বস্বহারা এক নারী যে মানুষের ভালবাসার ভেতরে নতুন করে সবকিছু ফিরে পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন তার প্রমাণ শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার পর থেকেই একটি চক্র বাংলাদেশের বিপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত দেশের কিছু মানুষ। বাংলা ও বাঙালীর মঙ্গল নয়, ব্যক্তি পূজা সেখানে মুখ্য। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যক্তি পূজার নিগঢ় ভেঙ্গে জনমনস্ক গণতান্ত্রিক পথে হেঁটেছেন। এই গুণটি তিনি পেয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে। তাঁর বাবাও মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিতে পেরেছিলেন। মানুষের মনে স্বাধীনতার বীজ বপন করতে পেরেছিলেন। জীবনকে হাতের মুঠোয় তুলে নেয়ার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা দিতে পেরেছিলেন। স্বপ্ন দেখানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। সবাই যুদ্ধে যেতে পারে না। তার জন্য চাই সত্যিকারের কমিটমেন্ট। শেখ হাসিনা গত তিন যুগে প্রমাণ করতে পেরেছেন দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর কমিটমেন্টে কোন খাদ নেই। এ দেশের মানুষের প্রতি যে আস্থা তিনি প্রথম দিন থেকেই রেখেছেন মানুষ সে আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। তারপরও বলতে হয় তাঁর চলার পথে আজও অনেক বাধা। তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, এটা একশ্রেণীর রাজনীতিকের পছন্দ নয়। তিনি দলমতের উর্ধে উঠে মানুষকে প্রাধান্য দিয়েছেন, ক্ষমতাপ্রলুব্ধ রাজনীতিকদের তা পছন্দ হওয়ার কথা নয়। তিনি উদারনৈতিক রাজনীতির পক্ষে কথা বলেন। সামরিক উর্দির পকেট থেকে জš§ নেয়া রাজনৈতিক দল তা সহজভাবে নেবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাই তাঁর চলার পথ এখনও বন্ধুর। কিন্তু সত্যিকারের দেশপ্রেমিককে যে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। শেখ হাসিনা তা নিয়েছেন। এ দেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। তিনি তাদের বিচার শুরু করেছেন। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। দ- কার্যকর হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ দেশের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর চেয়ে বড় কাজ আর কী হতে পারে? সুখী গৃহকোণ ছেড়ে রাজনীতির মাঠে এসে মানুষের মন জয় করে তিনি আজ সত্যিকারের স্টেটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সব সূচক আশাব্যঞ্জক নয়। এ অর্জন মাটিতে মিশিয়ে দিতে একটি পক্ষ তৎপর। আমাদের বিশ্বাস এ যুদ্ধেও জয়ী হবেন তিনি। বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এ মর্যাদা কোনদিন ভূলুণ্ঠিত হবে না। মানুষের ভালবাসায় শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাবেন নতুন উচ্চতায়। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই দিনে তাঁকে আমাদের অভিনন্দন। লেখক : ভিয়েনা প্রবাসী মানবাধিকারকর্মী, লেখক ও সাংবাদিক [email protected]
×