ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৭ মে ২০১৭

সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা উন্নতি করছে তার প্রধান নিয়ামক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। সহজ ভাষায় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বলতে মোট দেশজ উৎপাদনের বর্ধিত অংশের শতকরা মানকে বোঝায়। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হিসাবের সময় বছরান্তে পণ্য ও সেবার মূল্যমান চলতি মূল্যে নিরূপিত হতে পারে। তবে বছরান্তে পণ্য ও সেবার চলতি মূল্যে নিরূপিত মূল্যমান মূল্যস্ফীতির অনুপাতে সমন্বয় করা যেতে পারে; তাতে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রকৃত পরিমাপ পাওয়া যাবে। দু’বছর আগেই যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটার হাউস কুপারসের (পিডব্লিউসি) বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২৩তম বড় অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো উন্নত ও অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এ উত্থান-সম্ভাবনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পিপিপি সক্ষমতার ভিত্তিতে এ দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে। দেশে হরতাল-অবরোধের মতো অর্থনীতির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড না থাকায় বর্তমান সরকারের পক্ষে অর্থনীতির চাকাকে পরিকল্পনা অনুযায়ী গতিশীল রাখার কাজটি সুন্দরভাবেই সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে দিনে দিনে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছে দেশের অর্থনীতি। স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ‘অর্থনৈতিক মুক্তির’ দিকে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রাথমিক হিসাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ছাড়া একমাত্র ভারতই এ বছর প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে পৌঁছাতে পেরেছে। বাজেটে এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ হিসাবে বাজেটের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। উল্লেখ্য, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘর (৭ দশমিক ১১) অতিক্রম করে। এর আগে প্রায় এক দশক দেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ ছিল। অন্যদিকে চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৬০২ ডলার হবে। গত অর্থবছর চূড়ান্ত হিসেবে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৪৬৫ ডলার। এ হিসাবে এক বছরে মাথাপিছু আয় বাড়ছে ১৩৭ ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের এই হিসাব করেছে। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুজনিত বিরূপতাকে মোকাবেলা করে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার স্থিতিশীল রাখা। দেশ যে দ্রুত উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার লক্ষণ সুস্পষ্ট। কিন্তু এই অর্জন ধরে রাখাকে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রবৃদ্ধির হার আরও বাড়ানোর জন্য বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো, শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো, সরকারী ব্যয়ের অপচয়রোধ এবং বিদ্যমান সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংকের একজন অর্থনীতিবিদ। প্রবৃদ্ধি এবং সার্বিকভাবে মাথাপিছু আয় বাড়ায় দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় তিনি এটাকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বলাবাহুল্য যে, এটি অর্জন সম্ভব হয়েছে সরকারের ধারাবাহিকতা এবং দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখার কারণেই। তাই সবাই মিলে কাজ করে গেলে বাংলাদেশ যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×