ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিত্তে পাথর নিয়ে কিছু কথা

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৬ মে ২০১৭

পিত্তে পাথর নিয়ে কিছু কথা

পিত্তে পাথর সংক্রান্ত রোগের সংখ্যা আমাদের দেশে নিহায়ত কম নয়। প্রতি বছর শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রায় ৩০০ রোগী পিত্তথলিতে পাথর সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি শুরু হওয়ার পর থেকে পিত্তথলি পাথরসহ অপসারণ খুব সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেকের একটা ভুল ধারণা আছে। এরা মনে করেন যে, ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে অপারেশন করলে পাথর থেকে যেতে পারে। উল্লেখ্য, ল্যাপারোস্কপি/পেট কেটে পাথরও অপসারণের পরেও কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা আবার পাথর সম্পর্কিত উপসর্গ বা জটিলতা নিয়ে আসেন। এসব ক্ষেত্রে পাথর যদি থেকে যেয়েও থাকে তবে তা থাকবে অন্য স্থানে যেমন পিত্তনালীতে অথবা লিভারের ভেতরে। কারণ পাথর শুধুমাত্র পিত্তথলিতে হয় না অন্যান্য স্থানে যেমন পিত্তনালীতে এমনকি লিভারের ভেতরেও পাথর হতে পারে। সে জন্য যে কোন রোগীর পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়ার পর প্রয়োজনবোধে আমরা আরও কিছু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হই যে পিত্তনালীতেও পাথর থাকার সম্ভাবনা আছে কি নেই। রোগী হিসেবে আপনি অবশ্যই চিন্তা করে দেখবেন যে, ইতোপূর্বে কখনও আপনার একই সঙ্গে জন্ডিস এবং জ্বর হয়েছিল কিনা। আপনার আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টটি নিজে পড়ে দেখবেন যে, পিত্তথলিতে পাথর ছাড়াও মূল বর্ণনায় পিত্তনালী সম্পর্কে কিছু বলা আছে কিনা। যদি রিপোর্টের বর্ণনায় পিত্তনালী বেশি মোটা থাকে তাহলে অবশ্যই অপারেশনের আগে প্রয়োজনবোধে আরও একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেবেন। অনেক ক্ষেত্রেই যে সব রোগীর বেলায় অপারেশনের পূর্বে এই ব্যাপারগুলো সঠিকভাবে দেখা হয় না তাদের ক্ষেত্রেই লেপারোস্কপি/অপারেশনের মাধ্যমে পিত্তথলি অপসারণের পরও পিত্তনালীতে পাথর থেকে যায়। এখন ধরা যাক আপনার পিত্তথলি এবং পিত্তনালী উভয় জায়গায় পাথর আছে। এসব ক্ষেত্রে বর্তমানে আমাদের দেশেও পেট না কেটে উভয় স্থানের পাথর বের করা সম্ভব। পিত্তথলি পাথরসহ লেপারোস্কপির মাধ্যমে এবং পিত্তনালীর পাথর ইআরসিপি করে বের করা সম্ভব। কোন ক্ষেত্রেই পেট কাটার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত পিত্তনালীর পাথর আগে বের করা হয় এবং পরবর্তী দিন পিত্তথলির পাথর বের করা হয়। এখানে আরও একটা ব্যাপারে অবশ্যই জেনে রাখা ভাল যে, পিত্তনালীর পাথর অপারেশনের পর খুবই সামান্য কিছু সংখ্যক রোগীর বেলায় কিছু পাথর আবারও পিত্তনালীতে থেকে যেতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে এই থেকে যাওয়া পাথর বের করার উপায় কি? পিত্তনালীর থেকে যাওয়া পাথর বের করার জন্য আবার অপারেশন করা খুবই কঠিন কাজ এবং রোগীর জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে ইআরসিপির মাধ্যমে পিত্তনালীতে থেকে যাওয়া পাথর বের করা যেমন সহজ তেমনি রোগীর জন্য কষ্ট অনেক কম। কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে পিত্তথলির পাথর অপসারণ সার্জনরা করতেন এবং পিত্তনালীর পাথর অপসারণ মেডিক্যাল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টরা করতেন। রোগীর পাথর সংক্রান্ত সমস্যার জন্য দু’জন বিশেষজ্ঞের নিকট এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দুটি প্রতিষ্ঠানে যেতে হতো। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সার্জনরা এই দুটি কাজ একই প্রতিষ্ঠানে একই বিভাগে করছেন। রোগীকে আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের নিকট ঘুরে হয়রান হওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে করে যেমন রোগীর সময় বেঁচে যাচ্ছে তেমনি রোগীরা আর্থিকভাবেও উপকৃত হচ্ছেন। পরিশেষে, যখনই আপনার বা আপনার রোগীর পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়বে এবং যদি ইতোপূর্বে জন্ডিসসহ জ্বরের ইতিহাস থাকে, আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় পিত্তনালী মোটা থাকে অথবা লিভারের কার্যক্ষমতা পরীক্ষায় অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে তখনই পিত্তথলি পাথরসহ অপসারণের পর্বে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমনÑ ইআরসিপি অবশ্যই করতে হবে। অপারেশনের পূর্বে এ ব্যাপারগুলো সম্পূর্ণরূপে দেখে নিলে বারবার অপারেশনজনিত কারণে আপনার/আপনার রোগীর মানসিক ও শারীরিক কষ্ট ছাড়াও আর্থিক ক্ষতি অনেক ক্ষেত্রে কমে যাবে। অধ্যাপক ডাঃ এএইচএম তৌহিদুল আলম এন্ডোস্কপিক সার্জারি ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
×