ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হেনা আজাদ

আইইউটির ‘সোয়াট ক্যাটস’

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৬ মে ২০১৭

আইইউটির ‘সোয়াট ক্যাটস’

নাম ‘সোয়াট ক্যাটস’। এটি এক ফ্রেমে বন্দী সফল চারজন চ্যাম্পিয়নের দল, তাদের নাম ওয়াসিফ আব্দুল্লাহ্ চৌধুরী, ফাহরিয়াল আলম, ওমর সাদাব চৌধুরী আর মোহাম্মদ আবরারুল্লাহ্ খান। চার গুণের চার তরুণের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাভাবনার জগত থেকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় সমস্যার সমাধান। তারা গত বছরে প্রথম জেতেন ইউআইউ ‘এইচআর হাল্ক, বুটেক্সের টেক্সবিজ ২০১৭ আর সর্বশেষ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেনের বিজনেস কম্পিটিশন।’ ব্যক্তিগতভাবে জানতে গেলে ইইই বিভাগের ওয়াসিফ একজন দুর্দান্ত ফুটবল খেলোয়াড়, খেলেন আইইউটির মূল ফুটবল দল ইমপালস এফসিতে। তার অসাধারণ নেতৃত্বদানের ক্ষমতার জন্য তাকে সোয়াট ক্যাটসের লিডার হিসেবে জায়গা দেয়া হয়! ফাহরিয়াল মেকানিকাল এ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। গ্রুপে সবার চোখেই সবচেয়ে মজার মানুষ ফাহরিয়াল। ডানপিঠে ফাহরিয়াল পুরো দলটির জন্য নিয়মিত হয়ে ওঠে হাসির কারণ । তবে তার রয়েছে দুর্দান্ত উপস্থাপন করার ক্ষমতা। ওমর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছেন। বলা যায় এক কথায় অল রাউন্ডার সে। গান গায়, আবার এ্যাথলেট মেধাবী শিক্ষার্থী। বুদ্ধিমত্তার খেলাগুলোতে তার কাজ পুরো দলের জন্যই আশীর্বাদ। দলের সবচেয়ে ছোটজন আবরার, এমসিই বিভাগে পড়ছেন। আবরার তাদের তিনজনের শক্তি, কিছু টুর্নামেন্টে তিনজনের টিম হলেও আবরার সঙ্গে থাকেন পুরো দলটির। সবার মতে, ছেলেটার মধ্যে বিশেষ কিছু আছেই! সবচেয়ে অবাক করার বিষয় চারজন ইঞ্জিনিয়ারিংপড়ুয়া ছাত্র জিতে নিচ্ছেন দেশের সব বড় বড় বিজনেস কম্পিটিশন! তাদের মধ্যে সব ধরনের মানুষ আছে বলেই কাজটা সহজ, জানালেন ওমর। আরও বললেন পরিকল্পনাগুলো চারজন মিলে করি বলেই সাফল্য আজ বার বার ধরা দিচ্ছে। ২০১৬তে বিইউপির বিজনেস স্ট্র্যাটেজি কম্পিটিশনে আমরা প্রথম অংশ নেই, প্রথমবার সেমি রাউন্ডে না যেতে পারলেও বুঝে যাই আমাদের পক্ষে সম্ভব। আমাদের যাত্রাটা অবশ্য ২০১৫তেই, আইইউটির ইসোনেন্স ২০১৫ জিতে নিয়েছিলাম আমরা। যদিও মাত্র দুজনের অংশগ্রহণ ছিল, তবে সেটা একটা ভিত্তি গড়ে দেয়। এরপর সমসাময়িক বিজনেস কম্পিটিশনগুলো কিভাবে হয়, কেমন প্রতিযোগীতা জানা শুরু করি আমরা। আমাদের দ্বিতীয় সাফল্যটিও আসে নিজেদের হোম গ্রাউন্ডে, আইসিটিভিত্তিক বিজনেস প্রতিযোগিতায় ২০১৬তে। আরও বড় পরিসরে তারা নিজেদের অবস্থান জানান দেয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘এইচআর হাল্ক’ প্রতিযোগিতায়। দেশজুড়ে আলোচিত প্রতিযোগিতাটিতে সেরার মুকুট পড়ে ফাহরিয়ালদের দল। বড় সাফল্যটির পরে আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাদের। মিলেছে ইউনিভার্সিটিজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা, জুটেছে পুরস্কার বাবদ কিছু অর্থ। বিজনেস কম্পিটিশনগুলোতে মূলত কেস সলিভং, প্রেজেন্টেশন ও প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা হয়। এই চার তরুণ যে সবটিতেই করিৎকর্মা তা দেখেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)। তাদের আয়োজিত টেক্সবিজ ২০১৭তেও চ্যাম্পিয়ন আইইউটির গর্বের সোয়াট ক্যাটস। ভাবুন তো এমন বড় দুটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নরা আরও কি কি করতে পারে! করে দেখিয়েছেও তারা। চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ক্যাম্পাসে ‘আইসিটিভিত্তিক বিজনেস কম্পিটিশন’ আয়োজনে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়ে তারা!’ বিজনেসের কম্পিটিশনগুলোতে প্রাধান্য দেয়া হয় কেইস সমাধান, প্রজেক্ট বানানো আর উপস্থাপনা করার দিকগুলো। সেখানে ফাহরিয়ালদের টিম ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। তাদের পরিচিতি এখন দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে, বিষয়টা এমন যে ‘ও আইইউটির টিম, ওরাই জিতবে!’ চারজনের কাছে জানতে চাইলাম ভবিষ্যতের লক্ষ্য কি? প্রথমেই আবরার জানালেন, ‘ব্যবসায়ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে পুরো পড়াশোনায়। মূলত শিক্ষার সব ক্ষেত্র থেকেই বিজনেসের প্রতিযোগিতাগুলোই কাজে লাগে, আমাদের পরিকল্পনা বললে যতদিন সম্ভব এমন আয়োজনে অংশগ্রহণ করব।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা চিন্তা করলে তাদের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অনেক এগিয়ে আছে বলে মনে করেন ফাহরিয়াল আলম। ফাহরিয়াল বলেন, আইইউটিতে এমন অনেক আয়োজন হয় বলেই আমরা আজ ভাল করছি ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়েও। আর নিজেদের ব্যক্তিগত সাফল্যের পারদটা আরও অনেক ওপরে নিতে পারব বলে দীপ্ত কণ্ঠে আওয়াজ দিলেন ওমর সাদাব চৌধুরী। শেষে যখন চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে যখন ডিপ্রজন্ম টিমের আড্ডা ভাঙবে জানতে চাইলাম ‘সোয়াট ক্যাট’-এর মানেটা কি? উত্তর আসতে দেরি হলো না, ‘একসঙ্গে অপরিচিত আলোচনায় মেতে ওঠা আর উপস্থাপন করার দৃপ্ত ভঙ্গির ছোট্ট একটা রূপ আমাদের টিম সোয়াট ক্যাট।’ ভাল থাকুক আইইউটির তরুণরা...
×