ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের ইতিহাস রোমাঞ্চকর জয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৬ মে ২০১৭

পাকিস্তানের ইতিহাস রোমাঞ্চকর জয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেটি আরও একবার দেখল বিশ্বক্রীড়াঙ্গন। আশা-নিরাশা, অনিশ্চয়তা-নাটকীয়তা, দোলাচল-রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা, ইতিহাস-বাস্তবতা, কি ছিল না ডমিনিকা টেস্টে? পাকিস্তান ১০১ রানে জিতল নিরাশ হতে হতে, ম্যাচের আয়ু শেষ হওয়ার মাত্র ১ ওভার আগে। প্রায় ড্র করতে করতেও হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১০১ রানে অপরাজিত থেকে রোস্টন চেইজকে একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরতে হলো সঙ্গীর অভাবে...। বাইশ গজে রচিত হলো এমনি কত দৃশ্য। যে দৃশ্যের তুলির আঁচড়, সতীর্থদের কাঁধে মিসবাহ-ইউনুস খানের সওয়ার হওয়া। মুহূর্তেই দুই গ্রেটের জীবনের শেষ ম্যাচটা পূর্ণতা পেল। সেই ১৯৫৭ থেকে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্যারিবীয় দ্বীপে সিরিজ জিতল (২-১) পাকিস্তান। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরামরা যা পারেননি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে সেটিই করে দেখালেন মিসবাহ-উল হক। ৩০৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৫১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মনে হচ্ছিল, পাকিস্তানের জয়টা সময়ের ব্যাপার। তখনই টেলএন্ডারদের নিয়ে চেইজের অবিশ্বাস্য সেই লড়াই। ক্রিজ আঁকড়ে থেকে দিন পার করার পথে অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছিলেন। দেবেন্দ্র বিশু ৪৫ বলে ৩, আলজারি জোসেফ ৩২ বলে ৫, আর শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ২২ বলে ৪ রান করে সেই প্রতিরোধে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন। ২১ বল ঠেকিয়ে দেয়া শেষ ব্যাটসম্যান গ্যাব্রিয়েল আর একটা বল ঠেকিয়ে দিলেই ম্যাচটা চলে যেত শেষ ওভারে। ক্রিজে আসতেন মাত্রই সেঞ্চুরি পূরণ করা চেইজ। ঠিক তখনই ইয়াসির শাহকে তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড গ্যাব্রিয়েল। স্তব্ধ উইন্ডিসর পার্কের গ্যালারি, স্তব্ধ ক্যারিবীয় দ্বীপগুচ্ছ। উল্লাসে মাতোয়ারা পাকিস্তান, মিসবাহ-ইউনুসকে কাঁধে তুলে মাতোয়রা আজহার, ইয়াসির, মোহাম্মদ আমিররা। ‘বীর’ হতে পারতেন চেইজ, কিন্তু হয়ে গেলেন ট্র্যাজিক হিরো। ৩৬৬ মিনিট উইকেটে থেকে ২৩৯ বল খেলে অপরাজিত ১০১ রানে। প্রথম ইনিংসের ৩টির পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫, মোট ৮ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক ইয়াসির। তবে ম্যাচসেরা কিন্তু রোস্টন চেইজই। যা প্রতিভাবান এই অলরাউন্ডারকে আরও বেশি করে পোড়াচ্ছে, ‘আমার ভাবনায় শুধু একটা ব্যাপারই খেলে যাচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে ম্যাচটা বাঁচানো। সেঞ্চুরি হলো কিনা তাতে কিছু যায়Ñ আসে না। আমি শেষদিকের ব্যাটসম্যানদের বলছিলাম নিজেদের রক্ষণের ওপর আস্থা রাখতে।’ কিন্তু গ্যাব্রিয়েলের একটা বাজে শটেই সব শেষ হয়ে গেল, ‘ওকে দোষ দিই না, বোলার হয়েও সে চেষ্টা করেছে, আমরা তো দল হয়েই লড়েছি।’ ৩ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে মিসবাহ-ইউনুসের ঐতিহাসিক বিদায়ী সিরিজ রাঙিয়ে দিয়ে সিরিজসেরা লেগস্পিনার ইয়াসির। স্কোর ॥ পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ৩৭৬/১০ (১৪৬.৩ ওভার; আজহার ১২৭, মাসুদ ৯, বাবর ৫৫, ইউনুস ১৮, মিসবাহ ৫৯, শফিক ১৭, সরফরাজ ৫১, আমির ৭, আব্বাস ৪, হাসান ৮*; জোসেফ ১/৬৪, চেইস ৪/১০৩, হোল্ডার ৩/৭১, বিশু ২/৬১) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৭৪/৮ ডিক্লে. (৫৭ ওভার; মাসুদ ২১, ইউনুস ৩৫, মিসবাহ ২, ইয়াসির ৩৮*; জোসেফ ৩/৫৩)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ২৪৭/১০ (১১৫ ওভার; ব্রেথওয়েট ২৯, পাওয়েল ৩১, হেটমায়ার ১৭, হোপ ২৯, চেইস ৬৯, বিশাল সিং ৮, ডরিখ ২০, হোল্ডার ৩০; আমির ১/৩২, আব্বাস ৫/৪৬, ইয়াসির ৩/১২৬, আজহার ১/১৫) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২০২/১০ (৯৬ ওভার; ব্রেথওয়েট ৬, পাওয়েল ৪. হেটমায়ার ২৫, হোপ ১৭, চেইস ১০১*, বিশাল সিং ২, ডারিখ ২, হোল্ডার ২২, বিশু ৩, জোসেফ ৫, গ্যাব্রিয়েল ৪; আমির ১/২২, আব্বাস ১/৩১, ইয়াসির ৫/৯২, হাসান ৩/৩৩)। ফল ॥ পাকিস্তান ১০১ রানে জয়ী ম্যাচসেরা ॥ রোস্টন চেইজ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)। সিরিজ ॥ তিন টেস্টের সিরিজ পাকিস্তান ২-১এ জয়ী। সিরিজসেরা ॥ ইয়াসির শাহ (পাকিস্তান)।
×