ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের আহ্বান

টেপ হস্তান্তর দাবি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৬ মে ২০১৭

টেপ হস্তান্তর দাবি

যুক্তরাষ্ট্রে বরখাস্ত এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির সঙ্গে কথোপকথনের টেপ হস্তান্তরের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতারা। ডেমোক্র্যাটিক নেতা চার্লস শুমার হুঁশিয়ার করে বলেন, কোন টেপ রেকর্ড ধ্বংস করলে তা আইনলঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, টেপের অস্তিত্ব আদৌ আছে কিনা; তা নিয়ে মানুষের সংশয় হোয়াইট হাউসকে দূর করতে হবে। ক্ষুদে ব্লগ টুইটারে সাবেক এফবিআই প্রধান কোমিকে ট্রাম্প প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলে আইনপ্রণেতারা এ দাবি জানান। খবর বিবিসি অনলাইন ও ওয়াশিংটন পোস্টের। গণমাধ্যমের সঙ্গে কোমির কথা বলার বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছে, তার রেকর্ডিং নেই বলে ধরে নেয়াই তার জন্য ভাল হবে। তবে এ পর্যন্ত কোন টেপ রেকর্ডিংয়ের অস্তিত্ব আছে কিনা; তা নিয়ে হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। শুমার বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্তে একজন বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা সিনেটে নতুন এফবিআই প্রধান নিয়োগ নিয়ে ভোটাভুটিতে যাবে না। নির্বাচনে মস্কো ও ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সম্ভাব্য আঁতাতের অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছে এফবিআই। যদিও ট্রাম্প এতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কোমি নিশ্চিত করেছে যে আমাকে নিয়ে কোন তদন্ত হচ্ছে না। ট্রাম্প বলেন, কোমি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছিল না বলে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুমার বলেন, যদি কোন টেপ রেকর্ডিং না থাকে, তাহলে ট্রাম্পের উচিত কোমি ও আমেরিকান জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া। তবে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ভøাদিমির পুতিন যতটা পাওয়ার আশা করেছিল, ততটা সে আদায় করতে পারেনি। বিশেষভাবে রাশিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া ও ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি। পুতিনের লাভ-অলাভ নির্বাচনে ট্রাম্পকে সহায়তা করে পুতিন ভিন্নভাবে লাভবান হয়েছেন। সেটা হল, গোটা আমেরিকাজুড়ে বিশৃঙ্খলা। গেল সপ্তাহে কোমিকে এফবিআই প্রধানের পদ থেকে অপসারণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানেও অস্থিরতার ধাক্কা লেগেছে। ফেডারেল আদালত, গোয়েন্দা সংস্থা, সংবাদ সংস্থা ও সামরিক জোটসহ দেশটির শীর্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এফবিআই ট্রাম্পের হামলার টার্গেটে পরিণত হয়েছে। গেল বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে ট্রাম্প যে নজিরবিহীন প্রচারাভিযান চালিয়েছে এবং নির্বাচন থেকে পুতিন যা চেয়েছে, তা থেকে আমেরিকার অস্থিরতা বিভিন্ন উপায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। চলতি বছরে আমেরিকার এক অপ্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ অস্থিরতাকে পুতিনের অবদান বলে মন্তব্য করেছে ওয়াশিংটনের গোয়েন্দা সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন উদার গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষাকে আরও এগিয়ে নিতে চায় ক্রেমলিন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ শেষ হয়েছে গত বছর। কিন্তু নতুন করে কোমিকে বরখাস্ত করায় সেই রাশিয়া সম্পর্কিত অস্থিরতা বুধবার নতুন করে শুরু হয়েছে। কোমিকে অপসারণের মধ্য দিয়ে রাশিয়া ও ট্রাম্প প্রচারশিবিরের মধ্যে সম্ভাব্য আঁতাতের বিষয়ে চলমান তদন্তে এফবিআইয়ের স্বাধীন ভূমিকা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েক কর্মকর্তা বলেন, যদি তদন্ত নিজস্ব গতিতেও চলতে থাকে, তবুও রুশস্বার্থ রক্ষা করতে কোমির এ অপসারণ বলে ধরে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক কর্মকর্তা ইউজেন রুমার বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সত্যিকার সঙ্কটে পড়ার আরও প্রমাণ হাজির হওয়ায় তারা কিছুটা সুখ অনুভব করবে। কোমিকে বরখাস্ত এ সঙ্কটকে আরও গুরুতর করেছে। এটা নিশ্চিত যে এ সঙ্কট দীর্ঘায়িত ও বেদনাদায়ক হবে। ক্রেমলিন এমনটাই চেয়েছিল। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার গেল সপ্তাহে সিনেটের শুনানিতে ঠিক একই কথা বলেছেন। এমনকি কোমিকে বরখাস্ত করার আগেও তিনি বলেছেন, নিশ্চিতভাবে মস্কো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। যা ঘটছে পরবর্তীতে মস্কোর আত্মতুষ্টি আরও বেড়ে গেছে। ক্ল্যাপার বলেন, ন্যূনতম শক্তি খরচ না করে রাশিয়ানরা যা করতে শুরু করেছে, তাতে অবশ্যই এই সফলতা তারা উদ্যাপন করবে। তাদের সফলতায় আমাদের মাঝে প্রথমে দৃশ্যমান হচ্ছে মতবিরোধ ও অন্তর্ঘাত। তারা নিশ্চিতভাবে এমনটা করতে চেয়েছে ও পেরেছে। রবিবার দেয়া এক সাক্ষাতকারে ক্ল্যাপার দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রাম্পের আঘাতের শিকার। কোমিকে অপসারণের ঘটনা রাশিয়া তাদের আরেকটি বিজয় হিসেবে দেখেছে।
×