ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বীকৃতির পর হঠাৎ পরীক্ষার্থী বেড়েছে

কওমী মাদ্রাসার মাস্টার্স বা দাওরায় হাদিস পরীক্ষা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৬ মে ২০১৭

কওমী মাদ্রাসার মাস্টার্স বা দাওরায় হাদিস পরীক্ষা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী স্বীকৃতির লক্ষ্যে সোমবার থেকে কওমী মাদ্রাসার আলোচিত মাস্টার্স বা দাওরায় হাদিস পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দেশের ৭৩৭টি কওমী মাদ্রাসার ১৯ হাজার ৪৭২ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে বলে বলছে ছয়টি কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের নিয়ন্ত্রকরা। এদিকে স্বীকৃতির বিতর্কের মাঝে নেয়া এবারের পরীক্ষায় আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এবার সাড়ে ১৯ হাজার হলেও আগে কোন পরীক্ষাতেই এ সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি ছিল না। এ অবস্থায় সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনহীন কওমী মাদ্রাসার পরীক্ষা ও পরীক্ষার্থীদের সকল তথ্য স্পষ্ট করার দাবি তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন ইসলামী দলের পক্ষ থেকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, সরকারী নজরদারির অভাবকে কাজে লাগিয়ে হেফাজত প্রভাবিত কওমী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রকরা যেন ইচ্ছামতো কাউকে মাস্টার্স পাস না করিয়ে দেয়। সরকারকেই এসব বিষয়ে নজর রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। যদিও হঠাৎ পরীক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেছেন সম্মিলিত কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের সদস্যরা। জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দাওরায় হাদিসের বুখারি শরিফ ২য় পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো দাওরায় হাদিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কওমী শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবী) সমমানের সনদ পাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে পরীক্ষা গ্রহণের কোন প্রক্রিয়ায় সরকারের কোন কর্মকর্তার সম্পৃক্তরা নেই। সম্মিলিত কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে ১৯ হাজার ৪৭২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। অভিন্ন প্রশ্নপত্রে দাওরায় হাদিসের পরীক্ষা সারাদেশে মোট ২১৮টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে ৯১টি কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার ৬৬৮ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ১০টি বিষয়ে মোট এক হাজার নম্বরের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। আজ ১৬ মে অনুষ্ঠিত হবে তিরমিজী শরিফ প্রথম পত্র, আগামীকাল ১৭ মে তওহাবী শরিফ, ১৮ মে মুসলিম শরিফ প্রথম পত্র, ২০ মে বুখারি শরিফ প্রথম পত্র, ২১ মে বুখারি শরিফ দ্বিতীয় পত্র, ২২ মে নাসায়ী শরিফ ও ইবনে মাজাহ শরিফ, ২৩ মে আবু দাউদ শরিফ দ্বিতীয় পত্র, ২৪ মে তিরমিজী শরিফ দ্বিতীয় পত্র, ২৫ মে মুয়াত্তা ইমাম মালিক ও মুয়াত্তা ইমাম মোহাম্মদ বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সনদের স্বীকৃতির লক্ষ্যে পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ বিতরণের জন্য আঞ্চলিক ৬টি বোর্ডের সমন্বয়ে ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়েছে। এ সংস্থার ৬টি বোর্ড হলোÑ বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, গোপালগঞ্জের বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা, চট্টগ্রামের আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া, সিলেটের আজাদ দীনি এদারা বোর্ড, উত্তরবঙ্গের তানজিমুল মাদারিসিল কওমিয়া এবং জাতীয় দীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়ার সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হক প্রথম দিনের পরীক্ষার পর বলছিলেন, ভালভাবে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা গ্রহণের সুবিধার্থে সারাদেশকে ২৯টি জোনে বিভক্ত করা হয়। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পুলিশের সহায়তায় প্রতিটি জোনে পাঠানো হয়েছে। আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের কো-চেয়ারম্যান আশরাফ আলী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিতরণের কাজ নিয়মিত মনিটরিং করেছেন। গোপালগঞ্জের বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বোর্ডের অধীনে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়ার সদস্য মুফতি রুহুল আমিন বলেছেন, পরীক্ষায় দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। পরীক্ষার্থীরও উৎসবমুখর পরিবেশে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। কোন প্রকার নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী ব্যতীত সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা হতে পারে, তার নজির সৃষ্টি করবে। এদিকে এবার স্বীকৃতির ঘোষণার পর হঠাৎ পরীক্ষার্থী বেড়ে যাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। তবে কওমী মাদ্রাসার কর্তাব্যক্তিরা কেউ আগের বছরের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছেন না। প্রত্যেকেই দাবি করছেন, আগে আলাদা বোর্ডে পরীক্ষা হয়েছে তাই সঠিক হিসাব তাদের হাতে নেই। আগের দু’-তিন বছর কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের পাঠানো তথ্য অনুসারে গত বছর পরীক্ষা দিয়েছিল ৯ হাজার। পাস করেছিল ৭ হাজারের কিছু বেশি। তার আগের বছর পরীক্ষা দিয়েছিল ৫ হাজার ২০০ জনের মতো। তার আগের বছর সাড়ে ৪ হাজার। মোট পরীক্ষার্থীর ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী হচ্ছে হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকের। এবার ১৯ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে বেফাকের শিক্ষার্থীই হচ্ছে ১৫ হাজার। এ বোর্ডের প্রধান হচ্ছেন হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী। হঠাৎ পরীক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়ার সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হক বলছিলেন, আসলে এবার কিছু শিক্ষার্থী বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন, অনেক মাদ্রাসা এবার পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে। সরকারী মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দিন আহমাদ বলেন, স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দিতে হলে এ্যাফিলিয়েটিং কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে। যেমন কলেজগুলোর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ ধারার মাদ্রাসার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেয় ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়।
×