ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাঈদীর রিভিউর রায়ে জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি ॥ গণজাগরণ মঞ্চ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৬ মে ২০১৭

সাঈদীর রিভিউর রায়ে জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি ॥ গণজাগরণ মঞ্চ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রিভিউতে সর্বোচ্চ শাস্তির বদলে আমৃত্যু কারাদ-ের রায়ে জনগণ ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। গণজাগরণ মঞ্চ মনে করে, এই রায়ে জাতির আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। সোমবার রিভিউ আবেদন স্থগিত করে পূর্বের রায় বহাল রাখার পর পরই মঞ্চের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাঈদীর মতো নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়েও এই যুদ্ধাপরাধীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছিল। আপীল বিভাগের রায়ে যখন তার বিরুদ্ধে দেয়া সর্বোচ্চ শাস্তির রায় পরিবর্তন করে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়, এর প্রতিবাদে রাজপথে অবস্থান নেয় গণজাগরণ মঞ্চ। কিন্তু সেদিন গণজাগরণ মঞ্চের ওপর সরকারের নির্লজ্জ আক্রমণ যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সরকারের আপোসকামিতার মনোভাব স্পষ্ট করে দেয়। মামলা পরিচালনায় সরকারের দায়িত্বহীনতা এবং অবহেলার কারণেই একাত্তরের নির্যাতিত মানুষেরা যথোপযুক্ত বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করে গণজাগরণ মঞ্চ। এর আগে যুদ্ধাপরাধের মাস্টারমাইন্ড, জামায়াতের আমির নরপশু গোলাম আযমের ক্ষেত্রেও সরকার আপোস ও দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। বয়সের অজুহাতে তার শাস্তি কমিয়ে দেয়ার পর তাকে রাজকীয় হালে সরকারী খরচে প্রতিপালন করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ভিআইপি মর্যাদায় কারাগারে রাখা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত এবং শাস্তিপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সরকারের এই আপোসকামিতায় জনগণ ক্ষুব্ধ, মর্মাহত। গণজাগরণ মঞ্চ দাবি জানাচ্ছে, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর ক্ষেত্রে যেন গোলাম আযমের পথ অনুসরণ করা না হয়। শাস্তিপ্রাপ্ত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কোন অতিরিক্ত সুবিধা ছাড়া একজন সাধারণ কয়েদির মতো আমৃত্যু সশ্রম কারাদ-ই যেন তাকে ভোগ করতে হয়। জনগণের দাবির প্রতি সরকারের বারবার বিশ্বাসঘাতকতা কোন শুভ ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করে গণজাগরণ মঞ্চ। তাই আপোসকামিতা পরিহার করে যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া এবং দ্রুত যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মৃত্যুদ-ের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তা-বে প্রথম তিনদিনেই নিহত হন অন্তত ৮০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়। এরপর সাঈদী আপীল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের আপীল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়। তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদ-ের আদেশ আসে। একাত্তরের ‘দেইল্যা রাজাকারের’ সাজা কমানোর রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও গণজাগরণ মঞ্চসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শাহবাগে সে সময় সেøাগান ওঠেÑ ‘আঁতাতের এই রায় মানি না, প্রহসনের এই রায় মানি না’। আপীল বিভাগের রায়ে ‘ধর্মীয় নেতা’র লেবাসধারী সাঈদীর মুখোশ উন্মোচিত হলেও সাজায় প্রত্যাশিত হয়নি জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ চাওয়ার কথা জানিয়েছিল সে সময়। আপীলের রায়ের ১৫ মাস পর ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত এর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলে বিষয়টি রিভিউয়ের পর্যায়ে আসে। এরপর গত বছর ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদ-ের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পাঁচদিনের মাথায় খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন সাঈদী।
×