ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাসহ ৬০ লাখ মানুষের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে

দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর বাজেট আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ মে ২০১৭

দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর বাজেট আসছে

এম শাহজাহান ॥ নবজাতক থেকে শুরু করে নব্বই বছরের বেশি বয়সী সব গরিব মানুষের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। দারিদ্র্যকে পাঠানো হবে জাদুঘরে। তাই ২০২২ সালের মধ্যে সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষার যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। এ কারণে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদে, দরিদ্র মা ও কর্মজীবী মায়ের মাসিক ভাতার পরিমাণ এক শ’ থেকে দু’শ’ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কর্মসূচীর আওতায় নতুন করে যোগ হবেন ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা। সেই সঙ্গে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বছরে দুটি উৎসব ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত আসছে আগামী বাজেটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, দেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্য পূরণে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের খসড়ায় এসব সুবিধা নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কৌশলপত্রের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত। এর পরের পাঁচ বছরের রূপরেখাও রয়েছে এ কৌশলপত্রে। বর্তমানে তিন কোটি ৫৭ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। দেশের ৩২ লাখ দরিদ্র নারীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে সহায়তা পাবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তায় ১৪৫ কর্মসূচী রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে ৩৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। জানা গেছে, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় প্রায় ১০ লাখ দরিদ্র মানুষকে নিয়ে আসার লক্ষ্য রয়েছে। চলতি বাজেটে ৫০ লাখ মানুষ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সেবা পাচ্ছেন। এই কর্মসূচী সফল করতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় উপকারভোগীদের একটি স্বচ্ছ, পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এজন্য উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনডিআই) ভেরিফিকেশন সাপেক্ষে প্রথমে একটি সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এর মাধ্যমে প্রকৃত উপকারভোগীদের সহায়তা প্রদানে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। তাদের ১০ হাজার টাকা করে দুটি উৎসব ভাতা দেয়া হবে। চলতি অর্থবছরে বয়স্ক ভাতার সুবিধা দেয়া হচ্ছে ৩১ লাখ ৫০ হাজারকে। আসন্ন বাজেটে বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ বাড়িয়ে ৩৫ লাখ করা হচ্ছে। প্রতিমাসে জনপ্রতি ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ৬০০ টাকা করা হচ্ছে। বর্তমানে সাড়ে ১১ লাখ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারীকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা দেয়া হচ্ছে। এর পরিমাণ বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া অসচ্ছল প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর সংখ্যা আসছে বাজেটে ১০ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় রয়েছে। এই সংখ্যা ৭৫ হাজার বাড়িয়ে ৮ লাখ ২৫ হাজার করা হচ্ছে। অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা। অবহেলিত জনগোষ্ঠী হিসেবে হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) এবং বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে ভাতা ৬০০ টাকা হতে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং কর্মজীবী ল্যকটেটিং মায়েদের ভাতা বর্তমান ৫০০ টাকা হতে বাড়িয়ে ৭০০ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। জানা গেছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ৯ খাতের মধ্যে আটটি খাতের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতার আওতায় নতুন যোগ হয়েছে দেড় লাখ দরিদ্র মানুষ। বিধবা ভাতা কর্মসূচীর আওতায় আরও ৫০ হাজার নারী অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। বর্তমান ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০ হাজার নতুন প্রতিবন্ধী, সাড়ে ১০ হাজার চা শ্রমিক, সাড়ে ৫ হাজার বেদে ও ৫৫০ হিজড়াকে এ কর্মসূচীর আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে ১০ হাজার গরিব রোগীকে সহায়তা করা হবে। এজন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৩০ কোটি টাকা। বর্তমানে এ সুবিধা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৫০ জন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) জালাল আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়বে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার সঙ্গে বছরে দুটি উৎসব ভাতাও দেয়া হবে। বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী সব ধরনের ভাতাও বাড়ছে। জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় সরকারের ৩৫ মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে বর্তমান ১৪৫ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর অধিকাংশ প্রকল্পই সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু, খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশ অর্থ এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। চলতি অর্থবছরে এ খাতে সর্বমোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতি বাজেটেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতাও কিছুটা বাড়ানো হয়ে থাকে। এবারও এই কর্মসূচীটির আওতায় উপকারভোগী বাড়বে। তিনি বলেন, দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই দারিদ্র্য নিরসন হওয়া প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা কমে আসবে।
×