ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রী, এমপি হলেই মনোনয়ন পাবেন, এমন নয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

আগামী জাতীয় নির্বাচনে যোগ্যতার ভিত্তিতে মনোনয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ মে ২০১৭

আগামী জাতীয় নির্বাচনে যোগ্যতার ভিত্তিতে মনোনয়ন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সম্পূর্ণ যোগ্যতার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু মন্ত্রী-এমপি থাকলেই আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না। সার্বিক কর্মকা- মূল্যায়ন করে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। এছাড়া সেনানিবাস (ক্যান্টনমেন্ট) এলাকায় মলমূত্র ত্যাগ, মাতলামি ও ভিক্ষাবৃত্তি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘সেনানিবাস আইন-২০১৭’ খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খোলা অবস্থায় মাংস বহন এবং অনাবৃত করে বিকলাঙ্গতা ও ব্যাধি প্রদর্শনের মতো ঘটনাতেও একই শাস্তির বিধান থাকছে প্রস্তাবিত এই আইনে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনির্ধারিত আলোচনায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে নির্বাচন। নিজ এলাকায় যান এবং এলাকার ও দেশের উন্নয়ন কাজ করেন। দেশ ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করলে জনগণ তাকে ভোট দেবে। মন্ত্রী-এমপি কারা কি করছেন তার হিসাব রাখা হচ্ছে। কে এলাকায় যায়, আর কে যায় না। কোন মন্ত্রণালয়ে বসে কোন মন্ত্রী কি করেন। এমপিরা তাদের এলাকায় কি করেন সব খবর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, হাতে এখনও কিছু সময় আছে। সকলে নিজ নিজ এলাকায় যান, কাজ করেন, জনগণের কাছে যান, তাতে পরিস্থিতি বদলাতেও পারে। তবে যারা নিজ এলাকায় যান না, এলাকার উন্নয়নে কাজ করেন না, যাদের সঙ্গে দল ও দলের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ নেই তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না। সংসদ সদস্যদের সার্বিক কর্মকা- মূল্যায়ন করে নমিনেশন দেয়া হবে। সূত্র জানায়, অনির্ধারিত এই আলোচনায় বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বক্তব্য দেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কিভাবে কাজ করতে হবে সে বিষয়েও কোন কোন সিনিয়র মন্ত্রী মত প্রকাশ করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দেশের যে কোন ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ, মাতলামি, ভিক্ষাবৃত্তি বা জুয়া খেলার শাস্তি হিসেবে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, ১৯২৪ সালের ‘ক্যান্টনমেন্টস এ্যাক্টকে’ পুনর্বিন্যস্ত করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে। আগের আইনের ২৯২টি ধারা থেকে কিছু বাদ দিয়ে এবং নতুন কিছু সংযোজন করে মোট ২১৮টি ধারা রাখা হয়েছে এই খসড়ায়। বিভিন্ন অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ২০ হাজার গুণ পর্যন্ত। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকা এক ধরনের পৌর ব্যবস্থাপনার মতো। অর্থাৎ পৌরসভা যেভাবে তাদের এলাকা ম্যানেজ করে, এটাও সেভাবে ম্যানেজ করবে। বোর্ডের কার্যক্রম কেমন হবে তা এই আইনে বলা আছে। ৯০ বছর আগে যেসব জরিমানা নির্ধারণ করা ছিল সেগুলোর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ৪৩টি বিষয়ে আর্থিক জরিমানার বিধান বাড়ানো হয়েছে। সেনানিবাস এলাকায় অবৈধ নির্মাণের জন্য আগে ৫০০ টাকা জরিমানা থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে তা কমপক্ষে ২০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সড়কের সরকারী ভূমি খনন করলে জরিমানা ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জনগণের দৃষ্টির সামনে খোলা অবস্থায় মাংস বহন, বিকলাঙ্গতা ও ব্যাধি অনাবৃত করে প্রদর্শন, মাতলামি, ভিক্ষাবৃত্তি, জুয়া খেললে, রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। আগের আইনে এই জরিমানার পরিমাণ ছিল এক টাকা। সেনানিবাস এলাকায় বেসরকারী বাজার বা কসাইখানা স্থাপন করলে শাস্তি ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর লাইসেন্স ছাড়া বাজার বা কসাইখানা খুললে জরিমানা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। আগে এই অপরাধের শাস্তি ছিল ২০০ টাকা। তথ্য দিতে অবহেলা করলে আগে ১০০ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে তা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ট্রাফিক নিয়ম অমান্য করলে জরিমানা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে দুই হাজার এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আতশবাজি ফোটালে বা গুলি ছুড়লে আগে ৫০ টাকা শাস্তি ছিল। প্রস্তাবিত আইনে এই শাস্তি কমপক্ষে ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বসতবাড়ি জরাজীর্ণ থাকলে জরিমানার পরিমাণ ৫০ টাকা বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পশুকে আবর্জনা খাওয়ালে জরিমানার পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে এ আইনের খসড়ায়। অবৈধভাবে পানি ব্যবহার করলে আগে ৫০ টাকা জরিমানা হতো, নতুন আইনে কমপক্ষে ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হচ্ছে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সরকারী কাজে বাধা দিলে জরিমানা ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৩ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। ভবনের কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে বিলম্বে আগে জরিমানার কোন বিধান ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সময়সীমা বর্ধিতকরণের আবেদন তিনবারের বেশি হলে ২০ হাজার টাকা এবং পাঁচবারের বেশি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। অনুচিত উদ্দেশ্যে পতিত জমিতে ঘের দিলে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আগে এ কারণে জরিমানার বিধান ছিল না। সিনেমা প্রদর্শনীর জন্য আগের আইনে ২০০ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে তা বাদ দেয়া হয়েছে। শফিউল বলেন, কোন অপরাধ কোন নির্দিষ্ট ধারায় না এলে আগের আইনে ২০০ টাকা জরিমানা করার সুযোগ ছিল। প্রস্তাবিত আইনে ওই বিধান বাদ দিয়ে বিভিন্ন অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
×