ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে এক থেকে দেড় লাখ টন মধু রফতানি সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ মে ২০১৭

বছরে এক থেকে দেড় লাখ  টন মধু রফতানি সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের বিসিক ভবন চত্বরে রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘মধুমেলা ২০১৭’। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌ চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিসিক ভবনের নিচতলায় দুপুরে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বিসিকের চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান ইফতিখার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক মোঃ ইফতেখারুল ইসলাম খান ও বিসিকের সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) মোঃ রেজাউল করিম। বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান ইফতিখার বলেন, বিসিক দেশব্যাপী ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সেবা-সহায়তা প্রদান করে আসছে। পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে মৌ চাষের মাধ্যমে মধু উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রমও পরিচালনা করছে। ১৯৭৭ সাল থেকে বিসিক মৌ চাষের কার্যক্রম গ্রহণ করে। দেশে বর্তমানে দুই প্রজাতির যথা, এ্যাপিস মেলিফেরা এবং এ্যাপিস সেরেনা বা দেশজ প্রজাতির মৌমাছি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌ বাক্সে চাষ করা হয়। মধু উৎপাদন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সফল পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ দুই প্রজাতির মৌমাছি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌ বাক্সে চাষ করা প্রয়োজন। ফসলের মাঠে মৌমাছিরা বিচরণ করে সেখানে বাড়তি পরাগায়নের কারণে ফসলের উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিসিকের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোঃ ইফতেখারুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ১ থেকে ১.৫০ লাখ টন মধু বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। এজন্য বিসিককে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশের মধু খাত একটি সম্ভাবনাময় খাত, বাংলাদেশে মধু বিশ্বের সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের মধু। মধু উৎপাদনের সঙ্গে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি সম্পর্ক যুক্ত তাই এর জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিসিকের সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, মধু উৎপাদন, বোতলজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। বিসিকের এ মৌমাছি পালন কর্মসূচীর মাধ্যমে বর্তমানে দেশে সনাতন পদ্ধতির আহরিত মধুর চেয়ে গুণগতমান ভাল ও উন্নতমানের মধু উৎপাদন করা সম্ভব। অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দেশব্যাপী মৌ চাষে মৌ চাষীদের উদ্বুদ্ধ করণের মাধ্যমে মধু উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে মানুষের আয়বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব। এই কার্যক্রম পালনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিসিক দেশব্যাপী প্রায় ১৮ হাজার নারী ও পুরুষকে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌ চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌ চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার লোককে প্রদান করেছেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অনেকেই বর্তমানে মৌ চাষের মাধ্যমে মধু উৎপাদনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। মৌ চাষীদের উৎপাদিত মধুর ব্যাপক পরিচিতি ও বাজার সৃষ্টি এবং মধু ব্যবহার সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এই মধুমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক খন্দকার আমিনুজ্জামান বলেন, আমরা আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌ চাষ শুরু করেছি। ১৯৭৭ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়, বর্তমানে এই প্রকল্পের অধীনে ৬০০০ মৌ চাষী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, ২০০০ মৌ বাহার এবং ৫০০০ চাষী মৌ সংগ্রহ করছে। মৌ চাষীরা যাতে কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমরা স্থানীয় প্রশাসন এবং থানাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছি। আমরা দেশে উৎপাদিত এই মধু ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্য দেশে রফতানির প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। মৌ চাষ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবাদুল্লাহ আবদাল বলেন, মৌ চাষীদের পক্ষে সম্ভব হয় না সারা বছর মধু বিক্রি করার, এই মেলার মাধ্যমে বিসিক আমাদের সেই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা মধুর উপযুক্ত দাম পাই না বলে সময়ের আগেই আমাদের কাঁচা মধু সংগ্রহ করতে হয় যা অত্যন্ত নিম্ন মানের। এ বিষয়ে যদি সরকার আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে হয়ত আমরা উপযুক্ত সময়ে মধু সংগ্রহ করতে পারব যা বিদেশে রফতানি যোগ্য হবে। মেলায় উপস্থিত একজন মৌ চাষী বলেন, এই মেলা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে তারা এর মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি করতে পাচ্ছে। এতে ক্রেতামহলে তাদের পরিচিতি তৈরি হচ্ছে। বিসিক কর্তৃক আয়োজিত এই মেলাতে দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌ চাষীদের উৎপাদিত মধু বিক্রি ও প্রদর্শনের লক্ষ্যে মেলায় ৩০টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলার প্রদর্শনী চলবে ১৮ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×