ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ

এফবিসিসিআইয়ের নিষ্প্রাণ নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৫ মে ২০১৭

এফবিসিসিআইয়ের নিষ্প্রাণ নির্বাচন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) নির্বাচন রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। যানজটের কারণে মতিঝিলের ফেডারেশেন ভবনের পরিবর্তে এবারের নির্বাচন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করা হয়। সংগঠনের ২০১৭-১৯ মেয়াদের এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৯টায়। ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৫টায়। সাড়ে ৫টায় শুরু হয় ভোট গণনা। শুধুমাত্র এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১৮ জন সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচনে ছিল না কোন উচ্ছ্বাস ও উৎসাহ-উদ্দীপনা। তবে সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বড় পরিসরে নির্বাচন হওয়ায় ভোটাররা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটকেন্দ্রে যেতে এবং ভোট দিতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারের দোতলায় এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ভোটার সংখ্যা বেশি হওয়ায় কনভেনশন সেন্টার ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ব্যানার টাঙানো হয়। কনভেনশন সেন্টারের নিচতলায় ভোটারদের খাবার-দাবার ও প্রচার কার্যক্রম চলে। এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পরিষদ ও ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম নামে দুটি প্যানেল। ভোট দিতে এসে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পরিষদের সভাপতি প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করা প্রত্যেকেরই গণতান্ত্রিক অধিকার। আর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান জানান, ভবিষ্যতে পরিচালকরা যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে আসেন, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। বড় পরিসরে আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে- এমন মন্তব্য করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হচ্ছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, প্রত্যাশা করছি নতুন কমিটি তা বাস্তবায়ন করবে। অতীতে সিলেকশনের মাধ্যমে সভাপতি, সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। এবারও কি তাই হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে মাতলুব আহমাদ বলেন, ভোটারদের ভোটে পরিচালক নির্বাচিত হচ্ছে আর পরিচালকদের ভোটে সভাপতি, সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে এবারই প্রথম ভোট দিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী এবং সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। ভোট প্রদান শেষে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এবারই প্রথম ভোটার হয়েছি। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিলাম। খুব ভাল লাগছে।’ মমতাজ বেগম হাউস এ্যান্ড ফ্ল্যাট প্লট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন ভোটার। মমতাজ বলেন, ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ে এবার প্রথম আমি ভোটার হয়েছি। এখানে ভোট দিতে এসে দেখি উৎসবমুখর পরিবেশ চলছে। খুবই ভাল লাগছে। আশা করি জাতীয় নির্বাচনও যেন এমন হয়। এ নির্বাচন থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। তিনি বলেন, সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা। এ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের নেতা নির্বাচন হবে। আমার প্রত্যাশা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকারের উন্নয়নে সহযোগিতা করবেন। কারণ ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা ছাড়া দেশ এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিউজ পেপারস ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি মতিউর রহমান প্রমুখ ভোট দেন। এবার সমঝোতার মাধ্যমে চেম্বার গ্রুপ থেকে সরকার সমর্থক প্যানেলের ১৮ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এফবিসিসিআই নির্বাচনে ৬০ পরিচালক পদের মধ্যে ১৮টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পরিষদ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া ১৮ জনের মধ্যে ১০ জনই বর্তমান মেয়াদের পরিচালক। প্যানেলটির লিডার হিসেবে রয়েছেন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন আর ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সমন্বয়কারী কাজী ইফতেখার হোসেন বাবলু। এফবিসিসিআইয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যে দেখা যায়, এবার নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৩৪১ জন। এর মধ্যে ৮১টি চেম্বার থেকে ৪৫৪ জনকে ভোটার করা হয়েছে। অপরদিকে ৩৮০টি এ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন এক হাজার ৮৮৭ জন। এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২৪টি পদে বড় ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে পরিচালক মনোনয়ন দেয়া হবে। ১৬ মে পরিচালকদের ভোটে সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন। ১৭ মে পরিচালক পদের বিপরীতে আপীল করা যাবে। ২০ মে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি এফবিসিসিআই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গত ২৯ জুন এফবিসিসিআই বোর্ড সভায় নির্বাচন বোর্ড ও আপীল বোর্ড গঠন করা হয়। নির্বাচন বোর্ডের প্রধান করা হয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফকে। আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আল আমিন। এফবিসিসিআই নির্বাচন বিধি অনুযায়ী, দুই বছর মেয়াদী পরিচালনা পর্ষদে চেম্বার ও অএ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে পালাক্রমে সভাপতি এবং প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সভাপতি এবং চেম্বার গ্রুপ থেকে প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবে। বর্তমান কমিটিতে আবদুল মাতলুব আহমাদ চেম্বার গ্রুপ থেকে সভাপতি এবং শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৫ সালের ২৩ মে এফবিসিসিআইয়ের সর্বশেষ নির্বাচন হয়। ৩১ মে আবদুল মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেয়।
×