ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সারাবিশ্বে বন্দর, সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন

বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিটে ১২৪ বিলিয়ন ডলার পরিকল্পনা ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৫ মে ২০১৭

বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিটে ১২৪ বিলিয়ন ডলার পরিকল্পনা ঘোষণা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বজুড়ে বন্দর, সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রবিবার বেজিংয়ে ‘বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা নিউ সিল্ক রোড পরিকল্পনা নামে আয়োজিত এক সামিটে তিনি এই ঘোষণা দেন। এই বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে সড়ক, রেলপথ ও বন্দর উন্নয়নের মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য সংযোগ বৃদ্ধি করা হবে। বেজিংয়ে ‘বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘নিউ সিল্ক রোড’ খ্যাত এই পরিকল্পনাকে বিশ্বজুড়ে চীনের প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা নয় বলে পশ্চিমা কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, বেল্ট এ্যান্ড রোড উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে আমরা শত্রু-শত্রু খেলার পুরনো পথে পরিচালিত হব না। এর বদলে আমরা সহযোগিতা ও দ্বিপাক্ষিক লাভের নতুন মডেল তৈরি করব। আমাদের সবার একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করব এবং উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করব। সামিটে ১০০টির বেশি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২৯টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সামিটে অংশ নেন। সামিটের উদ্বোধনী পর্বে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে চীনের এই সামিট বয়কট করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারতের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হতে পারে সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই এই সামিটে যোগ দেয়নি ভারত। কেননা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ায় প্রস্তাবিত চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নিয়ে আপত্তি তুলেছে ভারত। যদিও কাশ্মীর প্রসঙ্গে কোন হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে চীন। তবে ভারতের আশঙ্কা আগামীদিনে ওই এলাকাকে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করবে চীন। এই সামিটে যোগ দেয়ার জন্য শনিবার চীনে পৌঁছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের উপস্থিতিতে একাধিক চুক্তিও সই হয়েছে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে। চীনের প্রস্তাবিত সিল্ক রোড প্রকল্পের আওতার মধ্যেই এই নতুন চুক্তিগুলো হয়েছে। ভারতই একমাত্র দেশ যারা এই সামিটে অংশ নেয়নি। দিল্লীর কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতের পক্ষ থেকে বারবার চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর প্রসঙ্গ এবারের বৈঠকে রাখতে নিষেধ করার পরও চীন ও পাকিস্তনের পক্ষ থেকে তা রাখা হয়েছে। তাই এই সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। চীন সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এই সামিটে বাংলাদেশের সাতজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনজন প্রতিমন্ত্রী এতে অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। দুইদিনব্যাপী সম্মেলন আজ সোমবার শেষ হবে। গত বছরের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন। তার উপস্থিতিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশীদার হয় বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে, বেজিংয়ে এই সামিটে বাংলাদেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সূত্র জানায়, এই সম্মেলনে বিশ্বের ২৯টি দেশের শীর্ষ নেতারা যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্প্রতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিশেষ উন্নীত হওয়ায় চীন এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়। চীনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর আগ্রহ ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা কিছুদিন আগেই চীন সফর করেছেন। এছাড়া গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংও ঢাকা সফর করেছেন। সে কারণেই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। চীনের এই বছরের কূটনৈতিক কর্মসূচীর সবচেয়ে বড় উদ্যোগ হলো এই বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিট। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা এই সামিটে অংশগ্রহণ করেছেন। এই সামিটের মধ্যে দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেশ কয়েকটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ২০১৩ সালে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর থেকে এই উদ্যোগকে ঘিরেই চলছে দেশটির অর্থনৈতিক কূটনীতি। এই উদ্যোগ শুরুর পর থেকে বিদেশে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে চীন। সিল্ক রোড ইকোনোমিক বেল্ট এবং একুশ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রোডকে সংযুক্ত করে নেয়া এই উদ্যোগের আওতায় এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোকে একটি বাণিজ্য ও অবকাঠামো নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত করতে চাইছে চীন, যার মধ্য দিয়ে কার্যত প্রাচীন সিল্ক রোড রুটকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা। উদ্যোগের মূলে অন্যান্য দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের লক্ষ্য রয়েছে। (পূর্ববর্তী খবর ৫-এর পাতায়)
×