ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাটের পলিব্যাগ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৫ মে ২০১৭

পাটের পলিব্যাগ

পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাই। পাটের সূক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাগ তৈরি করেছেন। এটি দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। এটি মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হওয়ার শঙ্কা নেই। পলিথিনের বিকল্প পচনশীল পলিব্যাগ তৈরির প্রকল্প উদ্বোধন হলো সম্প্রতি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) তত্ত্বাবধানে পাটের পলিব্যাগ উৎপাদিত হবে। ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ এবং পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। নতুন করে আরও ১১টি পণ্য তালিকায় যুক্ত হওয়ায় ১৭টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী পণ্যের ওজন ২০ কেজির বেশি হলে প্রযোজ্য হচ্ছে এই নিয়ম। সোনালি আঁশ পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করতে পাট চাষীদের সোনালি স্বপ্ন পূরণে জোরদার পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। বর্তমান সরকার কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটজাত পণ্য রফতানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জনের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পাটকে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরতে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) ১৩৫ প্রকার পাটপণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারকোল, ভিসকস, পাটপাতার পানীয়সহ নতুন নতুন বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাটের পলিথিন উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সরকারীভাবে উৎপাদনের পর বেসরকারীভাবেও এই ব্যাগ উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া হবে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি হবে এই ব্যাগ। বাজারে যে পলিথিন ব্যাগ আছে তার চেয়ে দেড়গুণ বেশি টেকসই এবং ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাবে এই পাটের পলিথিনে। পাট খাতের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে কিছু কিছু সাফল্য এসেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে পাটের প্রয়োজন পড়ছে। পাটের ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় গ্রহণ করতে যাচ্ছে নানা পদক্ষেপ। যে সব প্রতিষ্ঠান পাটের ব্যাগ ব্যবহার করবে না, সেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণও পাবে না। আমদানি-রফতানি সনদ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র, ব্যবসায় পরিচালনার লাইসেন্স ইত্যাদি পেতে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করার পূর্ব শর্ত মেনে নিতে হবে। বিষয়টি পাটের চাষ বাড়ানোর জন্য প্রেরণাদায়ক। জনসচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে এবং বাজারে সাশ্রয়ী দামে ছোট ছোট ব্যাগ সুলভ হলে মানুষ নিত্য প্রয়োজনে আগের মতো পাটের ব্যাগ ব্যবহার করবে বলে আশা করা যায়।
×