ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভূমিদস্যুদের অসহনীয় অত্যাচার

স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার পরও ফের তারা ভূমিহীন

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৫ মে ২০১৭

স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার পরও ফের তারা ভূমিহীন

স্টাফ রিপের্টার, কুড়িগ্রাম ॥ সরকারের বন্দোবস্ত দেয়া ১৫৭.৩০ একর খাস জমির দখল না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে রাজারহাট উপজেলার হরিশ্বর তালুক মৌজার ১৪৯ পরিবার। স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ভুমিদস্যুরা এসব ভূমি দখলে নিতে এ পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করতে বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়াসহ আটজনকে হত্যা করেছে। এমনকি সে সময় বন্দোবস্তকৃত জমির রেকর্ডপত্র নষ্ট করার জন্য তৎকালীন পাংগা তহসিল অফিসটিও পুড়িয়ে দেয় ভূমিদস্যুরা। বন্দোবস্তকৃত ১৫৭.৩০ একর জমি থেকে বিতাড়িত এসব রিফুজি পরিবারগুলো বর্তমানে পার্শ¦বর্তী ছিনাই ইউনিয়নের মহিদেব মীরের বাড়ি এলাকায় যাযাবরের মতো জীবন-যাপন করছে। এরপর থেকে ভূমিদস্যুরা তাদের নামে বন্দোবস্ত দেয়া এসব জমি নিজেদের নামে কাগজ তৈরি ও রেকর্ড করে নিতে ভূমি অফিস, বিভিন্ন দফতরে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এদিকে এই পরিবারগুলো বন্দোবস্তকৃত জমির দখল পেতে দীর্ঘদিন ধরে ধরনা দিচ্ছেন। এতেও কোন কাজ না হওয়ায় জমির দখল ফিরিয়ে পেতে রিফুজি পরিবারগুলো মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে আবেদন করেছে। ভূমিহীন পরিবারগুলো জানায়, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর অসম থেকে আসা একশ’ ৪৯ রিফুজি পরিবারকে পুনর্বাসন করার জন্য রাজারহাট উপজেলার হরিশ্বর তালুক মৌজার সি,এস-২৫ খতিয়ানের ২০৭ একর জমি হুকুমদখল করে ত্রাণ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেয় সরকার। এরপর ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ হতে ২০৭ একরের মধ্যে ১৫৭.৩০ একর জমি ১৪৯ ভূমিহীন কৃষকের মাঝে ১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল রংপুর জেলা প্রশাসক বরাদ্দ দেয় এবং তাদের নামে এস, এ রেকর্ড হয়। এরপর তারা বরাদ্দ জমিতে বসবাসসহ চাষাবাদ শুরু করে। এ অবস্থায় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু আবুল কাশেম মোল্ল্যা, মুসা ডাকাত, আব্দুল কাদের, আব্দুল কুদ্দুস, মোহম্মদ আলী গংরা জোটবদ্ধ হয়ে তাদের নামে বন্দোবস্তকৃত জায়গায় জোরপূর্বক ঘর-বাড়ি উঠানোসহ আবাদি জমি দখল করে। এ ঘটনায় পরিবারগুলো ভূমিদস্যুদের বাধা দিলে তাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে এবং নানা রকম অত্যাচার করে পর্যায়ক্রমে বিতাড়িত। এ সময় ভূমিদস্যুরা দুই দফায় রিফুজি পরিবারের ৯ জনকে হত্যা করে। এমনকি জমির সরকারী রেকর্ডপত্র নষ্ট করতে ভূমি অফিসও পুড়িয়ে দেয়। ভূমিহীন পরিবারের হোসাইন মিয়া বলেন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার পরও ভূমিদস্যুদের প্রাণনাশের হুমকির কারণে আমরা সে জমিতে যেতে পারছি না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আমরা বরাদ্দকৃত জমি ফিরিয়ে চাই। এ ঘটনায় নিহত শহীদ উদ্দিনের স্ত্রী মালেকা বেওয়া জানান, ভূমিদস্যুরা জমি দখলে নিতে আমার স্বামীসহ ৯ জনকে হত্যা করেছে। এমনকি দুই জনের লাশ পর্যন্ত ফেরত দেয়নি। আমি আমার স্বামীর নামে বরাদ্দকৃত জমি ফেরত চাই। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভূমিহীনদের সরকারী খাস জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার পর এ জমির মালিক অন্য কেউ হতে পারবে না। কিন্তু বন্দোবস্ত দেয়া জমির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের। তবে ভূমিহীনরা যদি আদালতের শরণাপন্ন হয় সেক্ষেত্রে সরকার সহযোগী বাদী হয়ে ভূমিহীনদের সহযোগিতা করবে।
×