ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গোপনীয় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসা চলছে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৫ মে ২০১৭

গোপনীয় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের  মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসা চলছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এক ধরনের গোপনীয় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, ক্রমেই এই হুন্ডিওয়ালাদের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের স্বার্থে যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এসব গোপন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। রবিবার মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘এজেন্ট ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে কার্যকারিতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ারম্যান প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ শিরীন বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী। বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ গ্রাহক ছোট ব্যবসায়ীরা। এর পরেই রয়েছে গৃহিণীদের অবস্থান। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ১৮ শতাংশ গ্রাহক গৃহিণী। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ১৫ শতাংশ গ্রাহক সরকারী-বেসরকারী চাকরিজীবী, ৭ শতাংশ গ্রাহক শিক্ষার্থী। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়ায় কৃষকদের মধ্যেও এজেন্ট ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে মোট গ্রাহকের ৭ শতাংশ কৃষক। এমনকি ৩ শতাংশ দিনমজুরও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকে তাদের হিসেব খুলেছে। অঞ্চল ভিক্তিক জনপ্রিয়তা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। মোট গ্রাহকের ২৪ শতাংশ এ অঞ্চলের বাসিন্দা। এর পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ১৮ শতাংশ গ্রাহক চট্টগ্রামের বাসিন্দা। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রাজশাহী। এছাড়া সবচেয়ে কম জনপ্রিয় সিলেট বিভাগ। যেখানে মোট গ্রাহকের মাত্র ৫ শতাংশ এ অঞ্চলে বসবাস করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিলেও হাতেগোনা দু-তিনটি পুরোদমে ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ৮২ শতাংশ গ্রাহক প্রত্যন্ত অঞ্চলের। যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এজেন্ট ব্যাংকিংকে আরও প্রসারিত করতে হলে ব্যয় কমাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংকে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংককেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটি করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, এক ধরনের গোপনীয় এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হয়েছে। যারা হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রমেই তাদের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের স্বার্থে যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এসব গোপন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী এখনও ব্যাংকিং সেবা পায় না। টেকসই উন্নয়নের জন্য এসব লোককে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং স্কুল ব্যাংকিং সবই মূলত ব্যাংক জাল বাড়ানোর জন্য। এ কারণে এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা জরুরী। আর্থিক শিক্ষা দিতে না পারলে এজেন্ট ব্যাংকিং টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে একই স্থানে অতিরিক্ত শাখা না খোলার আহ্বান জানান বিআইবিএমের মহাপরিচালক। বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং সত্যিকার অর্থে দুটি ব্যাংক চালিয়ে যাচ্ছে। নারী এবং অশিক্ষিত জনগণকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে না পারলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি হবে না। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ শিরীন বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব ব্যবহারের কারণে এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে না। এর মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রমও চলছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং নিরাপদ। কারণ হিসেবে তিনি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালের জুনে ব্যাংকিং খাতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়। সর্বশেষ হিসেবে ১২টি ব্যাংক আড়াই হাজার এজেন্টের মাধ্যমে এ ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
×