ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা

ইয়াবা গডফাদার ॥ এবারও শীর্ষে বদি এমপি

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৪ মে ২০১৭

ইয়াবা গডফাদার ॥ এবারও শীর্ষে বদি এমপি

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ দেশে ইয়াবা গডফাদার হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তৈরি করা তালিকায় এবারও বদির নাম শীর্ষে। যুব সমাজকে ধ্বংসকারী মাদক ইয়াবা ব্যবসার কারণে স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি, গাড়ির হেলপার, দিনমজুর, পান দোকানি, রোহিঙ্গা এমনকি কিছু কিছু ছোটখাট ব্যবসায়ীও এখন কোটিপতি বনে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইয়াবা চোরাচালানিদের একাধিকবার তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতোপূর্বে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় পাঠিয়েছে। ওই তালিকায় ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ সদস্যের নামও ছিল। সূত্র জানায়, ইয়াবা গডফাদারদের নাম ঠিকানা ঠিকই আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। তারা যে ইয়াবা ব্যবসা করে তাও জানে স্থানীয় প্রশাসন। তবে ক্ষমতাধর জনপ্রতিনিধির কারণে চিহ্নিত ওই ইয়াবা কারবারিদের ধরা যাচ্ছে না। নাম থাকলেও কিন্তু ক্ষমতাধর ব্যক্তি তারা। বিভিন্ন কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। হঠাৎ ব্যবস্থা নিতে গেলে কখন আবার উল্টো হয়রানির মুখে পড়তে হয়। তাই জট-ঝামেলায় যেতে চান না কর্মকর্তা পর্যায়ের অনেকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা চোরাচালানের প্রধান রুট কক্সবাজার। এ জেলার সীমান্ত পার হয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ ইয়াবা ঢুকছে মিয়ানমার এবং ভারত থেকে। যার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং মিয়ানমারের মংডুর কিছু নাগরিক। প্রতিদিন এদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকছে লাখ লাখ পিস মরণ নেশা ইয়াবা। এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, মাদকের মূলহোতা যারা, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। তাদের বহু তথ্যপ্রমাণ পুলিশ সংগ্রহ করেছে। শীঘ্রই এ অভিযান শুরু হবে। মাদকের বিরুদ্ধে কোন আপোস নেই, সে যেই হোক, যত শক্তিশালী হোক, যে পজিশনেই থাকুক না কেন, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমাদের তালিকা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা সমন্বয় করে এটিকে আপডেট করে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছি। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ ১০ জন এবং স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৫ জন প্রতাপশালীর নামও রয়েছে ওই তালিকায়। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বিভিন্ন কারণে এত দিন কাজে আসেনি। শেষতক শনিবার কক্সবাজারে বিশাল জনসভায় খোদ প্রধানমন্ত্রী ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত যত বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হোক, তাকে গ্রেফতার করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। এরপর পুলিশের কাছে থাকা তালিকা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত তালিকা সমন্বয় ও আপডেট করে প্রশাসন অভিযানে নামছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে কিছু অসৎ পুলিশ কর্মকর্তার ইশারায় কক্সবাজার জেলার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী (গডফাদার) গা ঢাকা দেয়া শুরু করেছে। গত ৬ মে কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর ইয়াবাবিরোধী বক্তব্যের পর স্থানীয় প্রশাসন সোচ্চার হয়ে উঠছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা পুলিশের হাতে রয়েছে। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। শীঘ্রই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পাকড়াও করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ওদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ তালিকায় উখিয়া-টেকনাফের এমপি আবদুর রহমান বদি ছাড়াও তার বেয়াই আখতার কামাল, শাহেদ কামাল, মামা হায়দার আলীর নাম রয়েছে। এছাড়াও বদির সহোদর আবদুল আমিন, মৌলভি মুজিবুর রহমান (কাউন্সিলর), আবদুস শুক্কুর, মোঃ শফিক, মোঃ ফয়সাল, ফুফাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল ও ভাগিনা শাহেদুর রহমান নিপুর নামও আছে। রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ রাশেদ, টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আহমদ, উখিয়ার মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী খুরশিদা করিম, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদের নাম।
×