ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এফবিসিসিআই নির্বাচন আজ ॥ ৬০ পরিচালকের কেবল ১৮টির ভোট হবে

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৪ মে ২০১৭

এফবিসিসিআই নির্বাচন আজ ॥ ৬০ পরিচালকের কেবল ১৮টির ভোট হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আজ রবিবার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ২০১৭-১৯ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৬০ জন পরিচালক পদের মধ্যে শুধু এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১৮টি পদের জন্য ভোটগ্রহণ হবে। চেম্বার গ্রুপ থেকে ইতোমধ্যে ১৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। চেম্বার গ্রুপে নির্বাচন না হওয়া এবং অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় জৌলুস হারিয়েছে এবারের নির্বাচন। সভাপতি প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ইতোমধ্যে তিনি সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর তার নেতৃত্বে নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। এদিকে, সভাপতি প্রার্থী মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পরিষদ এবং এর বাইরে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম নামে একটি প্যানেল হয়েছে। এই দুই প্যানেলেই কিছু ভাল ও যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তাই শেষ মুহূর্তে প্যানেল ভোট নিয়ে ভোটারদের তেমন কোন আগ্রহ কাজ করছে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের একজন জিবি মেম্বার জনকণ্ঠকে বলেন, পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসেব-নিকেশ। ভোটাররা চাচ্ছেন যোগ্য প্রার্থীরাই নির্বাচিত হোক। আর সে কারণে তারা নিজেরাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নিয়েছেন তাদের যোগ্য প্রার্থীকে। হোক সে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পরিষদ কর্তৃক মনোনীত প্রার্থী কিংবা হোক ব্যবসায়ী ঐক্যফোরাম মনোনীত প্যানেলের প্রার্থী। ইতোমধ্যে জিবি মেম্বার ফোরাম নামে একটি সংগঠন ফেসবুকে যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দেয়ার ব্যাপারে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পক্ষ থেকে একটি তালিকা প্রকাশ করে ভোট চাওয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিন। জিবি ফোরাম মনে করে, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে এবং সকল ব্যবসায়ীদের কল্যাণে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা থেকেই আগামী দিনের শক্তিশালী এফবিসিসিআই গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির আগামী দিনের সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। দেশের শিল্প-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভাজন ভাল লক্ষণ নয়। তাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। সবাইকে নিয়ে মিলে মিশে কাজ করতে চাই। এদিকে, আমেজহীন এই নির্বাচন ঘিরে উপঢৌকনের ছড়াছড়ি চলেছে বেশ জোরালোভাবেই। এফবিসিসিআই নির্বাচনের বেশিরভাগ ভোটারই মনে করছেন, অন্যান্যবারের মতো এবারও সরকার সমর্থিত প্যানেলই বিজয়ী হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সাউন্ড সিস্টেম, ডিনার সেট, জায়নামাজ, তসবিহ, প্লেটসহ নানা উপঢৌকন দেয়া হয়েছে ভোটারদের। এ জন্য রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই নানা ধরনের সভা-সেমিনার আর মতবিনিময় করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্টার্চ এ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক রাকিবুল ইসলাম। এবারের নির্বাচনে নতুন ভোটার তিনি। এফবিসিসিআই নির্বাচন নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত এই তরুণ ভোটার। তিনি বলেন, এবারই প্রথম কোন নির্বাচনে আমি ভোট দেব। নির্বাচন উপলক্ষে বেশকিছু উপহার পেয়েছি। প্রার্থীদের কাছ থেকে ডিনার সেট, কয়েক প্যাকেট মিষ্টি এবং শুভেচ্ছা কার্ড পেয়েছি। বাংলাদেশ জেমস স্টোন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নেতা ওয়াদুদ খান বলেন, আগের চেয়ে এখন এফবিসিসিআই নির্বাচন অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। এখন আর সভাপতি নির্বাচন হয় না। তিনি বলেন, এখন তো নির্বাচনের আগেই ফল জানা যায়। তাই নির্বাচনে আর আমেজ থাকে না। বাংলাদেশ এ্যাগ্রিকালচার এ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আগের চেয়ে এবার নির্বাচনের আমেজ অনেক কমেছে। কেননা চেম্বার গ্রুপ থেকে ১৮ জন সিলেকশন হয়েছেন। সভাপতি পদে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। নির্বাচন হবে শুধু এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে। যেখানে আগে থেকেই বলা যায় যে, সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পরিষদ থেকেই বেশিরভাগ প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। তিনি বলেন, এবার প্রার্থীরা অনেক পুরস্কার দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে সাউন্ড সিস্টেম, ডিনার সেট, জায়নামাজ, তসবিহ, প্লেটসহ নানা রকম পুরস্কার। তবে এবারের নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি জামসেদুল হক বলেন, এবার নির্বাচন পরিচালনায় কিছু পরিবর্তন আসছে। আগের বছরগুলোতে মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে ভোট দেয়া আমাদের জন্য ঝামেলাপূর্ণ ছিল। তবে এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। যেখানে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারব। বাংলাদেশ চশমা শিল্প বণিক সমিতির সভাপতি সানাউল্লাহ খান বলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক ভাল। এছাড়া এবার বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন স্বচ্ছ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, এফবিসিসিআই হলো পণ্যভিত্তিক ৩৮০টি ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ৮১টি চেম্বারের যৌথ সংগঠন। এসব ব্যবসায়ী সংগঠনের মনোনীত সদস্যরা ভোট দিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নির্বাচন করেন। চেম্বারে ভোটার সংখ্যা ৪৫৪ এবং এ্যাসোসিয়েশনে ভোটার ১ হাজার ৮৮৭। এতে চেম্বারের ১৮টি পদে বৈধ পরিচালক প্রার্থী ছিলেন ৩৪ জন। তাদের মধ্যে ১৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। তাই চেম্বার গ্রুপে ভোট না হলেও এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১৮টি পরিচালক পদে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক পরিষদ ও ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম থেকে পরিচালক প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
×