ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী রেমিটেন্সে মাশুল থাকছে না

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৪ মে ২০১৭

প্রবাসী রেমিটেন্সে মাশুল থাকছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ব্যাংক থেকে কোন মাশুল নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি জানান, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুসারেই দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহ দিতে এই বিধান কার্যকর করা হবে। শনিবার অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। রেমিটেন্স বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, ‘রেমিটেন্স বাড়ানোর জন্য গতকাল প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় আমরা এটা করব। তাদের (প্রবাসীদের) আর টাকা পাঠানোর জন্য পয়সা দিতে হবে না।’ তবে এতদিন ব্যাংকগুলো রেমিটেন্সে যে মাশুল নিত, তা কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কিছু বলেননি। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের কিছুটা আয় কমবে। কারণটা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে কিছুটা মন্দাভাব চলছে। বেতনও কিছু কমানো হয়েছে। আরেকটা কারণ হচ্ছে, প্রবাসীরা আগের মতো তাদের সব টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন না। তাদের হাতে কিছু টাকা রাখছেন।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমেছে ১৬ দশমিক ০৩ শতাশ। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কমেছিল ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বিদেশে টাকা পাচার রোধে জমি কেনাবেচায় সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্যও তুলে দেয়া হতে পারে বলে জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা ল্যান্ড প্রাইস ঠিক করে দেই। কিন্তু বাস্তবে জমির দাম অনেক বেশি। তাই বেশি দামে জমি বিক্রি করে। এই টাকা কী করবেন? এটা এদেশে ব্যবহার করতে পারে না। কালো টাকা। তাই এখন আমরা কোন সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে না দেয়ার চিন্তা করছি।’ তিনি বলেন, ‘জমি কেনাবেচায় অপ্রদর্শিত অর্থই কালো টাকার অন্যতম উৎস। পরবর্তীতে এ কালো টাকা তারা বিদেশে পাচার করে। তাই পাচার বন্ধে আগামী বাজেটে জমির সর্বনিম্ন নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতি তুলে দেয়া হবে।’ বাজেটের আকার সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটের আকার ৪ লাখ টাকার বেশি হবে। বর্তমানে এটা ৪ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের এই মেয়াদে এটাই শেষ কার্যকরী বাজেট। ফলে এই বাজেটে কাউকে অখুশি রাখা যাবে না। আমি প্র্যাকটিকালি মনে করি, এটি শেষ কার্যকরী বাজেট ইন মাই লাইফ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু বিদ্যুতে সাবসিডাইজড করছি, করেও যাব। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুতায়ন হবে। এখন ৮০ ভাগ গ্রামে বিদ্যুত আছে।’ এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা খাতকে আমরা সম্প্রসারণের চেষ্টা করেছি। আমরা প্রাইমারি পর্যায়ে অনেকটা সফলও হয়েছি। সেকেন্ডারি এডুকেশনেও সেটা অনেক বেড়েছে। প্রত্যকটিতে এনরোলমেন্টটা বেড়েছে। মানটা মোটেই বাড়েনি। তাই এখন মানের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষার মানের দিকে নজরের দাবিটা এখন শিক্ষার্থী ও গার্ডিয়ানদের কাছ থেকেও আসছে। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন। পাঠ্য বই এখন আধুনিকায়নে সংস্কার হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষক তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক গড়া অতটা সহজ নয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা।’ পড়ার অভ্যাস তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও ব্যাপকভাবে লাইব্রেরি সংস্কার করা প্রয়োজন।’ গ্রামে গ্রামে লাইব্রেরি তৈরি করার জন্য সাধারণ মানুষের উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ সরকার বরাবরই কৃষির প্রতি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চাল ক্রয়ের পরিমাণ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং কৃষির সকল ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক উৎপাদন সাফল্যই প্রমাণ করে সরকার বরাবরই কৃষির প্রতি সর্বোচ্চ আন্তরিক।
×