ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার হ্যাক

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৪ মে ২০১৭

বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার হ্যাক

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) উদ্ভাবিত ক্ষতিকর সফটওয়্যার চুরি করে শুক্রবার দেশে দেশে ভয়াবহ সাইবার হামলা চালিয়েছে অজ্ঞাত হ্যাকাররা। হাজার হাজার কম্পিউটারের তথ্যভা-ার দখলে নিয়ে ডিজিটাল অর্থ প্রেরণ সংস্থা বিটকয়েনের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করেছে তারা। কম্পিউটারে রোগীর তথ্য না আসায় ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা রোগীদের অন্য স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার ব্যবস্থা পুরোপুরি অকার্যকর করে দেয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আরও কয়েক হাজার কম্পিউটারে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে। খবর বিবিসি অনলাইন ও নিউইয়র্ক টাইমসের। গেল এপ্রিলে এনএসএর সফটওয়্যার চুরি করেছে বলে দাবি করে শ্যাডো ব্রোকারস নামে পরিচিত হ্যাকার গোষ্ঠী। মার্চে মাইক্রোসফট সাইবার নিরাপত্তার ত্রুটি বের করে তা প্রকাশ করা হয়েছিল, এর পরেও বহু কম্পিউটারে সফটওয়্যার হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে এ সাইবার হামলা করা হ্যাকারদের জন্য সহজতর হয়েছে। হামলা কতটা ব্যাপক ॥ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, স্পেন, ইতালি, ইউক্রেন ও তাইওয়ানসহ এ পর্যন্ত ৯৯টি দেশে সাইবার হামলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান এ্যাভাস্ট জানায়, তারা র‌্যানসামওয়্যার নামের ক্ষতিকর সফটওয়্যারের পঁচাত্তর হাজার হামলার ঘটনা দেখেছে। এসব ভাইরাস ওয়ানাক্রাইসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। এ্যাভাস্ট জানায়, সত্যিকারার্থে এটি ব্যাপক ও বিধ্বংসী হামলা। গবেষকরা বলেন, এ হামলার কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ছিল না। তবে ডিজিটাল ওয়ালেট বলে পরিচিত বিটিকয়েনের সঙ্গে র‌্যানসামওয়্যারের সংযোগ আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিটিকয়েনের হাতে নগদ টাকা আসতে শুরু করেছে। হামলার শিকার কারা ॥ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার (এনএইচএস) কম্পিউটার এ সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। তারা ওয়ানাক্রাই ভাইরাস হামলার স্ক্রিনশট প্রকাশ করেছে। হামলার ফলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন, রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচীও বাতিল করা হয়েছে। এতে রোগীরা সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। তবে একক রাষ্ট্র হিসেবে সবচেয়ে বড় হামলার মুখোমুখি হয়েছে রাশিয়া। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উইনডো অপারেটিং সিস্টেমে হামলার ভাইরাস তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। ভাইরাস যাতে অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। জার্মানির স্থানীয় রেলপথের টিকেট মেশিন ও ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কম্পিউটারে হামলার স্ক্রিনশট খুদে ব্লগ টুইটারে পোস্ট করছেন অনেকে। স্পেনের টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলিফোনিকা, বিদ্যুত খামার ইবেরড্রোলা ও গ্যাস ন্যাচারালসহ দেশটির ব্যাপকসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এ মহামারীর খপ্পরে পড়েছে। পর্তুগাল টেলিকম, সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ফেডএক্স, সুইডেনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, মেগাফোন, রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করে। হামলায় কারা জড়িত ॥ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাইক্রোসফট সিস্টেমের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এ হামলা চালানো হয়েছে। এনএসএ তা শনাক্ত করে নাম দিয়েছে ইটারনারব্লু। এনএসএর উদ্ভাবিত সফটওয়্যার চুরি করে হ্যাকার গোষ্ঠী শ্যাডো ব্রোকারস একটি অনলাইন নিলামের মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করেছিল। গত ৮ এপ্রিল সঙ্কেতায়িত তথ্যের জন্য তারা একটি পাসওয়ার্ডও প্রকাশ করেছিল। হ্যাকাররা জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে তারা এ পাসওয়ার্ড প্রকাশ করেছে। যদিও বিশিষজ্ঞরা বলেন, এ ম্যালওয়্যার বেশ পুরনো। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, ওয়ানাক্রাই ভাইরাস শনাক্তকরণ ও তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা তাদের সফটওয়্যারে যুক্ত করা হয়েছে। তারা গ্রাহকদের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। ভাইরাসটি কিভাবে কাজ করে ॥ ছোট একটি ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে ভাইরাস কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা এমন এক প্রোগ্রাম যেটা নিজে নিজেই কম্পিউটারে ঢুকে পড়ার ক্ষমতা রাখে। নেটওয়ার্কজুড়ে ঘুরে বেড়ায় আর অনিরাপদ ও অরক্ষিত মেশিনটি খুঁজে বের করে সেটিতে হামলা চালায়। ভাইরাসটির কাজ হলো অরক্ষিত কম্পিউটার পেলেই সেটিকে আক্রান্ত করা। এদিক থেকে এটি ঠিক অন্য ম্যালওয়্যারের মতো নয়। অন্য ম্যালওয়্যারকে নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়তে মাউসের ক্লিক প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এ ভাইরাসটি অনেকটা স্বয়ংক্রিয়। মাইক্রোসফট উইনডো অপারেটিং সিস্টেমের ত্রুটি বের করে তাতে হামলা করার পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা। ইংল্যান্ডে চিকিৎসা সেবায় বিভ্রাট ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) আইটি নেটওয়ার্কে বড় ধরনের সাইবার হামলায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। লন্ডন, ব্ল্যাকবার্ন, নটিংহ্যাম, গ্যালওয়ে ও হার্টফোর্ডশায়ারসহ বিভিন্ন এলাকায় এনএইচএসের হাসপাতাল ও ট্রাস্টগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম থমকে গেছে এই জটিলতার কারণে। এসব হাসপাতালের কর্মীরা তাদের নেটওয়ার্কে রোগীদের তথ্য দেখতে পারছেন না। রোগীদের নিয়ে আসা এ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হচ্ছে অন্য হাসপাতালে। অনেক জায়গায় জরুরী চিকিৎসা ছাড়া অন্য সব সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সাক্ষাতের সূচীও বাতিল করা হয়েছে। এনএইচএস ইংল্যান্ড জানিয়েছে, তারা এই জটিলতা সারাতে কাজ করছে এবং শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। যুক্তরাজ্যের সরকারী স্বাস্থ্য সেবা কাঠামোর চারটি ইউনিটের মধ্যে এনএইচএস ইংল্যান্ড সবচেয়ে বড় সংস্থা, যার আওতাধীন হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়।
×