ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনে তাঁতীরা বিপাকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ মে ২০১৭

মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনে তাঁতীরা বিপাকে

শাড়ির ঘোমটায় মুখ ঢেকে বসে থাকা- গ্রামীণ মেয়েদের জবুথবু ছবি এখন আর নেই। শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনৈতিক কর্মকা-ে মেয়েদের সরব অংশগ্রহণ গ্রামীণ সমাজে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কর্মব্যস্ত গ্রামীণ মেয়েদের পরিধেয় পোশাকেও তাই এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এখন গ্রামগঞ্জে মেয়েদের খুব কমই শাড়ি পরতে দেখা। বাসা বাড়ি, মাঠঘাঠ থেকে স্কুল-কলেজ পর্যন্ত সবখানেই সালোয়ার কামিজের জয়জয়কার। ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, বিয়েসহ কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে মেয়েরা শাড়ি পরলেও অধিকাংশ সময়ই সালোয়ার কামিজ পরতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামীণ মেয়েদের পোশাকের এ বদলকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের মানিয়ে চলা বলে মনে করছে গ্রামীণ মেয়েরা। এখন অবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বয়স্করাও সালোয়ার কামিজ পরতে শুরু করেছে। সুজানগর উপজেলার বাঘুলপুর গ্রামের গৃহবধূ অঞ্জলী রানী সেন জানালেন, কর্মব্যস্ত জীবনে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেয়েকে চলতে হয়। শাড়ি পরার ঝক্কি ঝামেলায় অনেক সময় লাগে। স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করা যায় না। তাই গ্রামের মেয়েরা এখন সালোয়ার কামিজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তিনি আরও জানান, প্রথম দিকে সালোয়ার কামিজ পরলে শাশুড়ি কি বলবে ভেবে বুক কেঁপেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও মেনে নিয়েছেন। এখন সামাজিক বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া শাড়ি পরা আর হয়ে ওঠে না। সদর থানা দোগাছী ইউনিয়নের মধ্যবয়সী গৃহবধূ সালেহা খাতুন জানান, বিয়ের প্রথম দিকে সালোয়ার কামিজ পরতে সঙ্কোচ হতো। ভয়ও পেতাম। শ্বশুড় বাড়ির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সালোয়ার কামিজ পরা শুরু করলে সবকিছু একসময় গা-সওয়া হয়ে যায়। এখন শাশুড়িও সালোয়ার কামিজ পরার অভ্যাস করে ফেলেছেন। মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়া খাতুন জানালেন, তিনি বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে যেদিন সালোয়ার কামিজ পরতে শুরু করেন, তখন অনেক টিপ্পনি শুনতে হয়েছে। এখন শ্বশুরবাড়িতে সবাই সালোয়ার কামিজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মেয়েদের এ পোশাকের পরিবর্তন সব গ্রামেই লক্ষ্য করা যায়। গ্রামীণ মেয়েদের পোশাকের এ পরিবর্তনে সঙ্কটে পড়েছে তাঁত ব্যবসায়ীরা। দোগাছী তাঁতপল্লীর তাঁতী আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনে এখন শাড়ির কদর কমে গেছে। তাই সময়ের চাহিদায় অনেক তাঁতীই কাপড়ের পরিবর্তে সালোয়ার কামিজ তৈরি করছে। অপর তাঁতপল্লী কুড়িপাড়ার তাঁত ব্যবসায়ী আজম আলী বিশ্বাস একই সুরে জানালেন, শাড়ির কদর কমে যাওয়ায় তাদের ব্যবসাতেও পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। Ñকৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা থেকে
×