ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার পর লক্ষ্য করা যায় পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৩ মে ২০১৭

স্বাধীনতার পর লক্ষ্য করা যায় পরিবর্তন

এক সময় গ্রাম-বাংলার মেয়েদের পছন্দ ছিল তাঁতের কাপড়। তখন দেশী তাঁতে বোনা কাপড় ছিল গ্রামের মেয়েদের প্রধান পরিধেয় বস্ত্র। তাঁতের কাপড় ছাড়া গ্রাম্য ললনারা ছিল বেমানান। দেশে তৈরি প্রসিদ্ধ সিল্কের শাড়ি ছিল শহরের বনেদী ঘরের বৌ-ঝিদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। এসব ছিল গ্রামের মেয়েদের কল্পনার বাইরে। ইচ্ছে করলেই তারা সিল্কের শাড়ি ব্যবহার করতে পারত না। তখন তাঁতের কাপড় ছিল মেয়েদের আটপৌরে পছন্দের পোশাক। তবে ইদানীংকালে রুচির সঙ্গে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। এখন আর আটপৌরে কাপড়ের প্রাধান্য নেই। আধুনিকতার স্পর্শে বিবর্তন এসেছে পোশাকের জগতে। এখন শুধু তাঁতের আটপৌরে কাপড় নয়-তাঁতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সফট সিল্ক, পালেক্স সিল্ক, খাদি সিল্ক বা এন্ডি সুতি খদ্দর, পলিয়েস্টার, কৃত্রিম সিল্ক, নাইলন, আর্ট সিল্ক। যুগের সঙ্গে তাল মিলিযে রুচিসম্মত ডিজাইনে তৈরি হচ্ছে বর্ণিল সব সালোয়ার-কামিজ। শুধু শহরে নয়, মেয়েদের পোশাকেও পরিবর্তন এসেছে গ্রাম-বাংলায়। পঞ্চাশের দশকে এদেশে সালোয়ার কামিজের প্রচলন বর্তমানে আধুনিক সমাজের মতো এত জনপ্রিয় ছিল না। সে সময় নিজস্ব ঐতিহ্যে তাঁতে বোনা কাপড়ের সালোয়ার-কামিজের কদর ছিল। তবে গ্রাম-বাংলার মেয়েদের মধ্যে সালোয়ার-কামিজের ব্যবহার তেমন একটা ছিলো না। বর্তমানে শহরের মত এ আরামদায়ক পোষাক সালোয়ার-কামিজ গ্রামীণ মেয়েদের সকল ঋতুতে সমভাবে সঙ্গী। দিন দিন এর কদর ও প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক কথায় বলা চলে আধুনিক যুগে মেয়েদের পোশাকে বিপ্লব ঘটেছে। স্বাধীনতার পরে মেয়েদের পোশাক-আশাকে আসে বৈচিত্র্য। পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে কোন কাজ করেই শান্তি পাওয়া যায় না। তাই সালোয়ার-কামিজের ওপর গ্রামের মেয়েরা শহুরে মেয়েদের মতো এখন নির্ভরশীল। বর্তমানে ঋতুভেদে সালোয়ার-কামিজের কাপড়ে পরিবর্তন এসেছে। গরমে তাঁতের সালোয়ার-কামিজ পরে স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়। আগের দিনে গ্রামীণ জনপদে রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় খুব কম সংখ্যক মেয়ে সালোয়ার কামিজ পরার সুযোগ পেয়েছে। ছোট বেলায় মেয়েদের জন্য অভিভাবকরা বাজার থেকে গেঞ্জি, ফতুয়া, ঘাগরি কিনে দিতো। মেয়েরা একটু বড় হলে তাদের জন্য এনে দেওয়া হতো ঘটিহাতা ফ্রগ ও ঝালর জাতীয় ফ্রক। এরপরে যারা স্কুল বা মাদ্রাসায় যেত তাদের জন্য ঘটিহাতা ফ্রক ও ঝালর জাতীয় ফ্রকের সঙ্গে চাদর ছিল বাধ্যতামূলক। একটু বড় হলেই আটপৌরে কাপড় দেওয়া হতো মেয়েদের প্রধান পোশাক হিসেবে। তখন মেয়েদের নিজস্ব চাহিদার কোন মূল্য ছিল না অভিভাবকদের কাছে। অর্থাৎ সে সময় মেয়েদের স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। তবে এ অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গ্রামীণ মেয়েদের শিক্ষার অগ্রযাত্রার পাশাপাশি পোশাকের পরিবর্তন আসতে থাকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে। Ñসুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×