ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বাণিজ্যিক ভবন নিয়ে অন্ধকারে রাসিক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ মে ২০১৭

তিন বাণিজ্যিক ভবন নিয়ে অন্ধকারে রাসিক

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের তিনটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণ কাজের দৃশ্যমান অবকাঠামো নির্মাণ হলেও মাঝপথে আটকে আছে সবকটির উন্নয়ন কার্যক্রম। নির্মাণাধীন ভবন তিনটি হলো সিটি সেন্টার, দারুচিনি ও স্বপ্নচূড়া প্লাজা। এ নিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মূলত অন্ধকারে রয়েছে। দফায় দফায় চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছেন নাগরিক সেবাদানকারী সংস্থা সিটি কর্পোরেশন। সোনাদীঘির মোড়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পুরোনো ভবনের জায়গায় নির্মাণাধীন সিটি সেন্টার ১৬ তলা হওয়ার কথা। আর দারুচিনি প্লাজা নির্মিত হচ্ছে নিউমার্কেটের পাশে এবং স্বপ্নচূড়া হচ্ছে নগর ভবনের পাশে। এ দুটি ভবন আটতলা করে হওয়ার কথা। তবে এগুলো মাঝপথে আটকে গেছে। বিশাল কাঠামো তৈরি হলেও কাজ শেষের কোন অগ্রগতি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ উদ্বোধন হয় ২০০৯ সালের ১০ অক্টোবর। ৩৬ মাসে এর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। তবে গত সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এই ভবনের নির্মাণ কাজের শেষ হচ্ছে না। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এনামুল হকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজ এটি নির্মাণ করছে। অপর দুটি ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামসুজ্জামান জেভি। এ দুটির কাজও প্রায় একই সময়ে শুরু হয় এবং নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২৪ মাসে। তবে কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি ৭২ মাসেও। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চুক্তি অনুযায়ী সিটি সেন্টার ভাড়া দেয়ার কথা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে। এতে শপিং মল, ব্যাংক, সিনেপ্লেক্স, রেস্তরাঁ ইত্যাদি থাকবে। চুক্তি অনুযায়ী সিটি সেন্টারের পাশে মসজিদ, হাঁটার পথ, আইটি লাইব্রেরি এবং সোনাদীঘির পারের বর্তমান দোকানগুলোর পুনর্বাসনের কাজও করার কথা এনা প্রপার্টিজের। এছাড়া ৩১ কাঠা জমির ওপর নির্মাণাধীন স্বপ্নচূড়া প্লাজা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হবে এবং ৬৭ দশমিক ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মাণাধীন দারুচিনি প্লাজায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কিছু এ্যাপার্টমেন্ট থাকবে। এসব ভবন নির্মাণকাজ যথাসময়ে শুরু হলেও সবকটি মাঝপথে আটকে আছে। এ নিয়ে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে নাগরিকদের। বিশেষ করে এসব ভবনে ব্যবসার আশায় ব্যবসায়ীরা অগ্রিম অর্থলগ্নি করে চরম বিপাকে পড়েছেন। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তারা আলোর মুখ দেখছেন না। অনেকে এসব ভবনে প্লট হিসেবে আগাম টাকা দিয়ে বুকিং দিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৬ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থলগ্নিকারীরা। এ নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচীও পালন করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে বিশাল মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এসব দাবি করেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষও অংশ নেন। ওই সমাবেশ থেকে বক্তারা এসব ভবন নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল দফতর থেকে এগুলো দেখভাল ও বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও এখন বিষয়টি রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে চলছে। ওই সমাবেশ থেকে অবিলম্বে সিটি সেন্টার ছাড়াও স্বপ্নচূড়া ও দারুচিনি প্লাজা নির্ধারিত নক্সা অনুযায়ী নির্মাণকাজ শেষ করে আগামী ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান। এছাড়া নগরীতে নির্মাণাধীন দারুচিনি প্লাজা ও স্বপ্নচূড়া ভবনও নক্সাবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে অভিযোগ করেন তারা। তারা মূল নক্সা অনুযায়ী এসব ভবন দ্রুত নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। এসব ভবন দ্রুত নির্মাণ কাজ সমাপ্তের দাবিতে শীঘ্রই নগর ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচী নেয়া হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছেন রাজশাহীর সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান। তিনি জানান, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ২০০৯ সালে এসব বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। তিন বছরের মধ্যে কাজগুলো শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ভবনগুলো এখন নির্মাণের কোন অগ্রগতি নেই। এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হককে পাওয়া যায়নি। তবে রাসিকের একটি সূত্র জানায়, নগরীর এ তিনটি ভবন নিয়ে এখন অনেকটায় বিপাকে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা চুক্তি অনুয়ায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কয়েকদফা চিঠি দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
×