ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশকে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ মে ২০১৭

অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশকে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মানেই বিশ্বের সেরা দলগুলোর লড়াই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) পূর্ণ সদস্য দেশ ১০টি। এর মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দল অংশ নেয় মর্যাদার এ টুর্নামেন্টে। দু’টি আসরে ওই র‌্যাঙ্কিংয়ের মধ্যে না থাকায় খেলা হয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। এবার বিশ্বের সাত নম্বর দল হিসেবে অংশ নেবে এ আসরে। আগামী মাসের ১ তারিখে শুরু হবে এ আসরটি। ‘এ’ গ্রুপে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়া ও রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে। বর্তমানে র‌্যাঙ্কিংয়েও ভাল অবস্থানে আছে তারা। আর স্বাগতিক ইংল্যান্ড গত আসরে রানার্সআপ হয়েছে এবং র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫ নম্বরে আছে। তাই অগ্নিপরীক্ষার মধ্যেই পড়তে হবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলকে। ১৯৯৮ সালে নকআউট বিশ্বকাপ হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির। সে আসরের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ দলও খেলেছিল। এরপর টানা ২০০০, ২০০২, ২০০৪ ও ২০০৬ সালের আসরে অংশ নেয়। ওই সময় টেস্ট খেলুড়ে সবগুলো দেশই অংশ নিত। প্রথম দুই আসরের পর ২০০২ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আর ২০০৯ থেকে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। নতুন নিয়মে ৪ বছর পরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দলের অংশগ্রহণে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। আর সে কারণেই ২০০৯ ও ২০১৩ সালে হওয়া দুটি আসরে অনুপস্থিত ছিল বাংলাদেশ দল। কারণ র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ কিংবা ১০ নম্বরে অবস্থান ছিল। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাশরাফির নেতৃত্বে দুর্দান্ত খেলে প্রথমবারের মতো ওঠে কোয়ার্টার ফাইনালে। বিশ্বকাপ শেষে আবার ঘরের মাটিতে নিজেদের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিদের পরাস্ত করে দারুণ উন্নতি করে র‌্যাঙ্কিংয়ে। ৭ নম্বরে উঠে আসে বাংলাদেশ দল। নিশ্চিত করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। গত বছরও নিজেদের সাফল্য অনেকখানিই ধরে রেখে নিজেদের ক্রিকেট উন্নতির ছাপ দেখায় বাংলাদেশ দল। এবার সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির লড়াই আসন্ন। যে কোন গ্রুপে পড়লেই কঠিন পরীক্ষার মধ্যে থাকতে হত বাংলাদেশ দলকে। কারণ বিশ্বের সেরা দলগুলো এ টুর্নামেন্টে আছে। তবে সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স বিবেচনায় আটটি দলের মধ্যে সেরা তিনটিই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচের মধ্যে থাকা তিনটি দলই আছে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘এ’ গ্রুপে। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তাদের পরিবেশ ও উইকেট পরিস্থিতি প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ ইংল্যান্ডে। এ কারণে তারা নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে থাকবে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া আছে র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে। এটাই সাম্প্রতিক ফর্ম স্টিভেন স্মিথের দলটির তুঙ্গে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র একবারই হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ দল, সেটা এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই। ১২ বছর আগের ঘটনা সেটি। এখন বাংলাদেশ দল অনেক বেশি শক্তিধর হয়ে উঠেছে। সেটা সাম্প্রতিক ফর্মই বলে দিচ্ছে। তাই আরেকবার অসিদের হারানোর সক্ষমতাও আছে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কিন্তু বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরাই সর্বাধিক দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতেছে ২০০৬ ও ২০০৯ সালে। চার নম্বরে আছে নিউজিল্যান্ড। তাদের বিরুদ্ধে টানা তিন সিরিজের মধ্যে দুটিতেই জেতার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। অবশ্য সর্বশেষ গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সফর করতে গিয়ে কিউইদের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০০০ সালে তারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিরোপা জয় করে এবং ২০০৯ সালে রানার্সআপ হয়। ৫ নম্বরে থাকা ইংল্যান্ড স্বাগতিক হিসেবে এবার শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেবারিট দল। ২০০৪ সালে এবং ২০১৩ সালের সর্বশেষ আসরে রানার্সআপ হয়েছে ইংলিশরা। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জেতার রেকর্ড আছে। তবে সর্বশেষবার দু’দলের সাক্ষাত হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতেই। টানা ৬ সিরিজ জেতার পর ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছেন মাশরাফিরা। এবার ইংল্যান্ডের মাটিতে তাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে জয় তুলে নেয়া। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৮ ম্যাচ খেলে মাত্র একটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে জয়পুরে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ১১০ রানে জিতেছিল। আর এবার গ্রুপে তিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একবার করে খেলেছে বাংলাদেশ। তিন দলের কাছেই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। দুই আসর পর বদলে যাওয়া মাশরাফির দল এবার এই তিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কতটা ভাল করতে পারবে সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
×