ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় প্রাথমিকের বৃত্তিতে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৩ মে ২০১৭

কুমিল্লায় প্রাথমিকের বৃত্তিতে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১২ মে ॥ চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা নাসরিনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যোগসাজশে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে পৌরসভার ওয়ার্ড কোটা জালিয়াতি করে প্রাথমিকের কমপক্ষে ৩০টি সাধারণ বৃত্তি অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে দেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সম্প্রতি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এর ভিত্তিতে সারা দেশে মোট ৩৩ হাজার ট্যালেন্টপুল এবং সাড়ে ৪৯ হাজার সাধারণ বৃত্তি ঘোষণা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। উপজেলার আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি নির্ধারণ করা হয়। মেধাক্রম অনুযায়ী সকল বৃত্তির ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ের হার সমান। ট্যালেন্টপুল বৃত্তি বিতরণের পর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ ছাত্র এবং ৩ ছাত্রী অর্থাৎ মোট ৬ শিক্ষার্থী সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাবে। পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ড এক-একটি ইউনিয়নের সমান অর্থাৎ পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ৬টি করে বৃত্তি পাবে। কিন্তু সরকারের পরিপত্রের এ নির্দেশনা কার্যকর হয়নি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পৌর এলাকায়। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা নাসরিনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে পৌরসভার ওয়ার্ড কোটা জালিয়াতি করে প্রাথমিকের কমপক্ষে ৩০টি সাধারণ বৃত্তি অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে নাটাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নোয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে ২টি স্কুল রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে অসাধু চক্রটি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ডিআর-এ নাটাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ওয়ার্ড কোডের জায়গায় মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ৯নং ওয়ার্ডের পরিবর্তে ১নং ওয়ার্ড লিখে দেয়। ফলে ৯নং ওয়ার্ডে বিদ্যালয় থাকে মাত্র ১টি। এ কারণে নোয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৯নং ওয়ার্ডের একমাত্র বিদ্যালয় হিসেবে ওয়ার্ড কোটার ৬টি বৃত্তিই পেয়ে যায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পরিপত্র মোতাবেক এ দুটি বিদ্যালয়ে মোট ৬টি সাধারণ বৃত্তি থাকার কথা থাকলেও বৃত্তির গেজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি দেয়া হয়েছে মোট ৪টি। অপর দুটি বৃত্তি অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে একই পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের নাটাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি এবং ৭নং ওয়ার্ডের প্রি ক্যাডেট স্কুলে ১টি। একই কায়দায় ৭নং ওয়ার্ডের প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ওয়ার্ড কোড নং-১ দেখানোর কারণে বিদ্যালয়টি তার ওয়ার্ডে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং ১নং ওয়ার্ডের একটি বৃত্তি প্রি ক্যাডেট স্কুলকে দেয়া হয়। অপরদিকে ৭নং ওয়ার্ডের জয়ন্তীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে শ্রীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে যুক্ত করায় জয়ন্তীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় অর্থাৎ ৭নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কোটার ৩টি বৃত্তি অন্যত্র চলে যায়। জালিয়াত চক্রের এ কৌশলে ৭নং ওয়ার্ডের কোমলমতি মেধাবী শিশুরা তাদের নির্ধারিত ওয়ার্ড কোটার ৩টি বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডে স্কুল রয়েছে ২টি। ওই ওয়ার্ডের শ্রীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ডিআর শীটে ওয়ার্ড নম্বর-৩ না লিখে জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ লেখায় ৩নং ওয়ার্ডে স্কুল থাকে মাত্র ১টি। এতে ৩নং ওয়ার্ড কোটার ৬টি বৃত্তিই থেকে যায় এ ওয়ার্ডের দুর্বল পারফরমেন্সের প্রতিষ্ঠান কাজী সিরাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনায় স্থানীয় মেধাবী শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অপেক্ষাকৃত ভালমানের বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা কমিটির মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য শাহজালাল মজুমদার জানান, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। বৃত্তি নিয়ে যদি এমন অনিয়ম হয়ে থাকে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কমিটির সভায় আলোচনা করা হবে। জালিয়াতি ও অসদুপায় অবলম্বনসহ উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা নাসরিন জানান, ডাটা এন্ট্রিতে ভুল হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা সংশোধনের জন্য গত বুধবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লেখা হয়েছে। যাদের নামে বৃত্তি ঘোষণা করা হয়েছে তাদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল ইসলাম জানান, আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
×