ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেম্বারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

শাল্লায় ভিজিএফ কার্ড বিতরণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৩ মে ২০১৭

শাল্লায় ভিজিএফ কার্ড বিতরণে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ১২ মে ॥ আমরা গরিব মানুষ। দিনে আনি দিনে খাই। সহায়-সম্বলহীন, আমাদের কিছু নেই। কষ্ট করে হাওড়ে জমি করছিলাম, তাও পাইনে নিয়া গেছে। কৃষকদের জন্য সরকারী অনেক অনুদান আইছে, আমরা কিছুই পাই না। মেম্বারের ধারে গেলে আমরারে দেয় না। যারা জমি করছে না, তারা ভিজিএফ কার্ড পায় আর আমরা জমি করেও কোনকিছু পাই না। আমরা এখন কিভাবে বাঁচতাম, কার কাছে সাহায্য চাইতাম- এমন বিলাপ করলেন শাল্লা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিষ্ণু দাস। শুধু বিষ্ণু নয়, এ রকম রয়েছে আরও হাজার হাজার কৃষক। অকাল বন্যায় হাওড়ে জমি তলিয়ে গেলেও সরকারী কোন সহায়তা পাচ্ছে না। কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে মেম্বারদের স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারী সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জনপ্রতিনিধিরা মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করেছেন। এমনকি একই পরিবারে দুজন আবার তিনজনও ভিজিএফ কার্ড পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যাদের হাওড়ে ৩০ থেকে ৪০ কেয়ার জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, ভিজিএফ কার্ডের তালিকায় তাদের নাম দেয়া হয়নি। অথচ যাদের ভিজিএফ কার্ডের তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই সরকারী বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে থাকে। উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের কৃষক সুমন দাস বলেন, হাওড়ে আমাদের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। একমুঠো ধানও ঘরে আনতে পারিনি। এমন অবস্থায় চেয়ারম্যানের কাছে গেছিলাম একটা কার্ড করার জন্য। চেয়ারম্যান বলল এগুলোর মেম্বার সুব্রত’র কাছে যাও। মেম্বারের কাছে গেলেও আমরারে কোন সরকারী সহায়তা দেয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কৃষক জানান, মেম্বারের কাছে সরকারী সহায়তার জন্য গেলে মেম্বার বলে ভিজিএফ কার্ড এসেছে গরিবদের জন্য। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আর কিছু বলতে পারিনি। মেম্বারের স্বজনপ্রীতির কারণে আনন্দপুর গ্রামের রণজিত মাহাস্য দাস ও তার মা রঙ্গ মাহাস্য দাস একই ও প্রজেশ দাস, রাদেশ দাস, হরিদাসও একই পরিবারের হয়ে ভিজিএফ কার্ড পেয়েছে। আর আমরা মেম্বারের মনোনীত নই বলে আমাদের কোন সাহায্য দেয় না। শুধু তাই নয়, এমন অভিযোগ রয়েছে আরও অনেকের। এদিকে কাশিপুর ওয়ার্ডের মেম্বার টিপু আহমদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনিও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করেছেন। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ডে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধি হওয়ায় ওদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। যারা ওদের বিরুদ্ধে মুখ খোলে তাদের ভয়ভীতি দেখায় বলে কৃষকরা জানিয়েছে। এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাছুম বিল্লা জানান, ভিজিএফ কার্ডের তালিকা ইউনিয়ন পর্যায়ে। এটা দেখভাল করেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। অভিযোগ থাকলে ইউনিয়ন চেয়াম্যানের কাছে অভিযোগ দেয়া হোক আর যারা একাধিক কার্ড পেয়েছে আমি তাদের নাম লিখে রাখলাম। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের বলব ব্যবস্থা নিতে।
×