বাংলাদেশের নতুন শ্রমবাজার হতে পারে কাতার। আরও বেশি আশার কথা এই যে, এই শ্রমবাজার শুধু অদক্ষ শ্রমিকের জন্য নয়, বরং তা উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞসহ দক্ষ শ্রমিকের জন্য। এর বাইরেও বাংলাদেশ ও কাতারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে আরও সহযোগিতা বাড়াতে স্বাক্ষরিত হয়েছে একটি সমঝোতা স্মারক। সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাতার সফরকালে এসব অগ্রগতি সাধিত হয়। এর পাশাপাশি কাতার ইনভেস্টমেন্ট কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রধান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিস্ময় প্রকাশ করে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে এলএনজি, বিদ্যুত উৎপাদন, বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকাসহ অন্যবিধ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কাতার সরকার। তবে সব কিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকার ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞসহ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নেয়ার বিষয়টি সর্বাধিক আশাব্যঞ্জক নিঃসন্দেহে।
২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক নিতে পারে বিভিন্ন পর্যায়ে। ধনী দেশ বিধায় কাতারের শ্রমবাজার যে আকর্ষণীয়, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তদুপরি দেশটি রূপকল্প-২০৩০-এর আওতায় বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন ও অন্যত্র বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় এবং সিরিয়া-ইরাক-ইয়েমেনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ অবস্থায় আপাতত ভরসাস্থল কাতার।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মনে রাখা দরকার যে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বরং তেলের দাম বেশ নেমে যাওয়ায় অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। একবার শোনা গিয়েছিল যে, আফ্রিকার কোন কোন দেশ যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজিরিয়ায় পতিত জমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে চাষাবাদের উদ্যোগ নেয়া হবে। সম্ভবত লাভজনক বিবেচিত না হওয়ায় সে ভাবনা বেশিদূর এগোতে পারেনি। তদুপরি আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয় যে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সুদহার কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। সে অবস্থায় সরকারকে একটি নমনীয় সুদহার নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে হবে। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অতঃপর চাই অবকাঠামো উন্নয়ন। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের জন্য আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। আর কাতার যেহেতু বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, সেহেতু এই সুবর্ণ সুযোগটিও কাজে লাগানো যেতে পারে।