ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চের মানুষ লায়ন ভূইয়া মুহাম্মদ রাশেদ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৩ মে ২০১৭

মঞ্চের মানুষ লায়ন ভূইয়া মুহাম্মদ রাশেদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমাদের দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মঞ্চনাটক। এই অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তি লায়ন ভূইয়া মুহাম্মদ রাশেদ। যিনি মঞ্চের জন্য আত্মত্যাগী। তার উপেক্ষিত পিলসুজের ভূমিকার প্রসঙ্গটি শতভাগ সত্য। রাশেদ ভূইয়ার মতো বর্ণময়, ব্যতিক্রমী, বিচিত্র আর পরিপূর্ণ মানুষ কমই আছে। হাসির উৎস-কৌতুকস্নিগ্ধ মানুষটিকে এক লহমায় বয়সের খোলস ভেঙ্গে সবার সঙ্গে অবলীলায় মিশে যান। প্রতিটি সহজাত রসিক মনের নেপথ্যে থাকে সমান্তরাল করুণরসের ধারা, ওপরের কৌতুকপ্রিয়তা তার দুঃখবোধের আড়ালমাত্র। রাশেদ ভূাইয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। একজন সৎ মানুষ, সৎ নাট্যকর্মী হিসেবেও তিনি অনেকটাই অব্যবহৃত, হয়ত খানিকটা অবহেলিতও। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য কিছু করার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান ভূইয়া রাশেদ। সংস্কৃতি অঙ্গনেও সরব পদচারণা রাশেদের। তিনি জানান ১৯৯১ সালে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চে যোগদানের মধ্য দিয়ে থিয়েটারের পথে যাত্রা শুরু হয় তার। তারপর দীর্ঘ সময় কাটান নাট্যদল পালাকারে। চারুনীড়ম স্কুল অব এ্যাক্টিংয়ে প্রশিক্ষণ নেন অভিনেতা-শিক্ষক গাজী রাকায়েত, আবুল হায়াৎ, গোলাম সারোয়ার, নাহিদ আহমেদ পিয়ালের কাছে। অভিনয় করেছেন অসংখ্য মঞ্চনাটকে। টেলিভিশনেও সরব দেখা যায় তাকে। অভিনয়ের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন কমেডি অনুষ্ঠানে। তিনি আরও জানান, অভিনয়ে তার হাতেখড়ি পালাকার প্রধান আমিনুর রহমান মুকুলের হাতে। দীর্ঘ দিনের সুপ্ত মঞ্চ অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ লায়ন ভূইয়া মুহাম্মদ রাশেদ ২০১৬ সালের ১ জুলাই গড়ে তোলেন একটি নাট্য সংগঠন ঢাকা প্রসেনিয়াম থিয়েটার। তার বলিষ্ঠ হাতের দক্ষতায় দলটি বর্তমানে এগিয়ে চলছে মাথা উঁচু করে। এরই মধ্যে ঢাকা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের প্রথম প্রযোজনা নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা গাজী ফারুক নির্দেশিত ‘আমি রফিক বলছি’ দেশে-দেশে প্রশংসিত হয়েছে। দলের অন্য সবার চেয়েও এতে লায়ন ভূইয়া মুহাম্মদ রাশেদের ভূমিকা অন্যতম। নাট্য প্রযোজনার ক্ষেত্রে নেপথ্যকর্মী হিসেবে এই মানুষটি তার যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন প্রতি পদক্ষেপে। কী করতে হবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে তা সামলাতে হবেÑ সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, ব্রেখট-উত্তর পোস্টমডার্ন থিয়েটারের এই বীজমন্ত্রকে মূলমন্ত্র হিসেবে নিয়ে ভূইয়া রাশেদ ঢাকা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্দিষ্ট কোন মত বা পথে নিজেকে বন্দী না করে সময়ের পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে এবং নিজের দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, নাটক শেষ অবধি লোক শিক্ষার বলিষ্ঠ একটা মাধ্যম। সিনেমাও অনেকটা তাই। কিন্তু নাটক যেভাবে সরাসরি কমিউনিকেট করে, সিনেমা তা পারে না। ফলে বিস্তৃত আজকের বিনোদন প্রতিযোগিতায় লাস্ট ল্যাপে শেষ অবধি থেকে যাবে সম্ভবত নাটকই। তিনি আরও বলেন, নাটকে নান্দনিকতার মধ্যে মিশে আছে সামাজিক দায়বোধ। এই দায়বোধ আমি এড়াতে পারি না। ঢাকা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের মাধ্যমে লায়ন ভূইয়া মুহাম্মদ রাশেদের সামাজিক দায়বোধের জয় হোক। আজীবন মঞ্চনাটকের জন্য নাটকের মানুষের জন্য কাজ করবেন লায়ন ভূইয়া মুহাম্মদ রাশেদ। তার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
×